
আগামী ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশে ফিরছেন বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছেলের এই প্রত্যাবর্তন রাজনৈতিকভাবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৮ বছর বিদেশে ছিলেন তারেক। অন্য দিকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি খালেদা জিয়া। ফলে এই ঘরওয়াপাসি শুধু রাজনৈতিক নয়, আবেগের দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। সেই আবেগে ভর করেই কি আসন্ন নির্বাচনে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা হতে পারে? তুঙ্গে জল্পনা।
দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে বিদেশে থাকলেও, বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে সেভাবে সরে যাননি তারেক রহমান। আওয়ামী লিগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর, ইউনূস সরকারের আমলে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্ব কার্যত তাঁরই হাতে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। তার ঠিক আগেই তারেকের দেশে ফেরা বিএনপিকে নতুন করে চাঙ্গা করবে বলেই মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিএনপি সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাসনে থেকেও গত কয়েক বছর ধরে দলের সাংগঠনিক দিক, আন্দোলনের কৌশল এবং রাজনৈতিক বার্তা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন তারেক রহমান। বিশেষ করে গত বছর ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময়ে তাঁর ভূমিকার কথা বারবার তুলে ধরছেন বিএনপি নেতারা। তাঁদের দাবি, মাঠে না থেকেও আন্দোলনের রাশ কার্যত তাঁর হাতেই ছিল।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনকে তাঁরা ‘গণতন্ত্রের পথে বড় স্বস্তি’ হিসেবেই দেখছেন। তাঁর কথায়, 'আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আমাদের প্রিয় নেতা, যিনি দীর্ঘ ১৮ বছর নির্বাসনে ছিলেন, তিনি ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন। তিনি ছাত্র আন্দোলন-সহ গত এক বছর ধরে গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিরাট স্বস্তির।'
রাজনৈতিকভাবে এই প্রত্যাবর্তনের আর একটি দিক বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। লন্ডনে তারেক রহমান ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের মধ্যে হওয়া বৈঠক নিয়েও নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই বৈঠকেই নাকি নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত হয়েছিল বলে দাবি বিএনপির। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার পর তারেকের দেশে ফেরা সেই রাজনৈতিক সমঝোতারই বাস্তব রূপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আওয়ামী লিগ নিষিদ্ধ থাকার ফলে এবারের নির্বাচন কার্যত বিএনপির সামনে বড় সুযোগ। তবে একই সঙ্গে দায়িত্বও। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে দলের মুখ হিসেবে তারেক রহমানের সরাসরি উপস্থিতি বিএনপিকে সাংগঠনিক ও কৌশলগত ভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী করবে বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের। বিশেষ করে গ্রাসরুট স্তরে কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হবে বলে আশা।
অন্য দিকে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাও এই প্রত্যাবর্তনের আবেগঘন প্রেক্ষাপট তৈরি করছে। অসুস্থ মায়ের দেশে থাকা অবস্থায় পুত্রের ফেরাকে অনেকেই ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক দুই স্তরেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে দেখছেন।
সব মিলিয়ে ২৫ ডিসেম্বর শুধু একজন নেতার দেশে ফেরা নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেই দিন নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের। নির্বাচনের আগে তারেক রহমানের এই প্রত্যাবর্তন আগামী দিনে বাংলাদেশের ক্ষমতার সমীকরণ কোন দিকে যাবে, তার ইঙ্গিতও দিয়ে রাখছে।