চালু হয়ে গিয়েছে বহু আকাঙ্খিত পদ্মা নদীর উপর পদ্মা সেতু। খুশি বাংলাদেশ। খুশি বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াতকারী প্রতিবেশী দেশগুলিও। কারণ সবারই সময় যেমন বাঁচবে তেমনই ঝড়-জলে পদ্মার ফেরিতে ওঠার ঝুঁকি কমবে। যেখানে প্রতি বছর পদ্মার ফেরি উল্টে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ফলে ফিল গুড আবহাওয়া সর্বত্র। কিন্তু পদ্মার ওই সেতুতে উঠতে হলে আগের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হবে। যা এখন মাথাব্যথা সকলের।
বাস বা পাবলিক ট্রান্সপোর্টে অনেক যাত্রী থাকায় কিংবা বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে আমদানি খরচের মধ্যে ভাড়া ঢুকে পড়বে। ফলে তাদের তেমন গায়ে লাগবে না। তেমন সমস্যা হবে বা বাইক আরোহীদেরও। কিন্তু ছোট গাড়ি বা বড় প্রাইভেট গাড়ির ক্ষেত্রে মোটা টাকা টোল দিয়ে পারাপার করতে হবে। কাউকে যদি একদিনে দুবার আসা এবং যাওয়া করতে হয় গাড়িতে, তাহলে অনেকের ঘাম ছুটবে।
বর্তমানে পদ্মা নদী পার হতে বিভিন্ন যানবাহনকে প্রায় দিতে হয় ৭০ টাকা থেকে ৩৯০০ টাকা পর্যন্ত। পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হলে প্রত্যেকটি যানবাহনকে ১০০ থেকে ৬ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। পদ্মা সেতুর টোল ভাড়া অনুযায়ী বড় বাসের ক্ষেত্রে ২৪০০ টাকা এবং মাঝারি ট্রাক ২,৮০০ টাকা পর্যন্ত টোল ভাড়া দিতে হবে। ফলে সহজ হবে না সবার ক্ষেত্রে। সাধারণ মধ্যবিত্তের পক্ষে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ছাড়া পারাপারের চড়া মাশুল দিতে হবে। যদিও সেতু দিয়ে যাতায়াতে তাতে সময় সাশ্রয় হবে। ফলে অর্থনীতিতে গতি আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয় মহল। তবে পরিবহণের জ্বালানির খরচ কমবে বলে একে ঘুরিয়ে লাভ বলে মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুনঃ Padma Bridge Inaugaration: পদ্মা সেতু চালু হতেই কলকাতা-ঢাকা দূরত্ব কমে হলো অর্ধেক
খরচ কমলেও বাড়বে বাসের ভাড়া
যাত্রী ও পণ্যবাহী যানের জ্বালানির খরচ কমলেও ভাড়া বৃদ্ধির আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। তাঁদের আকাঙ্ক্ষার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষও। বর্তমানে ঢাকা-খুলনা পথে যেসব নন-এসি বাস ফেরি হয়ে চলাচল করে, সেগুলোর ভাড়া ৭০০ টাকা। আর যেসব বাস যাত্রীদের লঞ্চে পারাপার করে থাকে সেসব বাসের ভাড়া ৬০০ টাকা। বিআরটিএ দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার এক টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করেছে। সেই হিসাবে এই পথের ভাড়া হওয়ার কথা ৪৫৯ টাকা।
পদ্মা সেতুতে টোলের হার ২০২২
মোটর সাইকেলের জন্য টোল দিতে হবে ১০০ টাকা;
ছোট ট্রাকের জন্য (৫ টন পর্যন্ত) ১,৬০০ টাকা;
মাঝারি ট্রাক (৫ থেকে ৮ টন) ২,১০০ টাকা;
মাঝারি ট্রাক (৮ থেকে ১১ টন) ২,৮০০ টাকা;
বড় ট্রাক (তিন এক্সেল পর্যন্ত) ৫,৫০০ টাকা;
টেইলারের জন্য ৬,০০০ টাকা;
কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা;
মাঝারি বাসের টোল দু’হাজার টাকা;
বড় বাসের জন্য ২,৪০০ টাকা;
মাইক্রোবাস ১,৩০০ টাকা;
নিবাসের জন্য ১,৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।
শনিবার ২৫ জুন সেতুটি উদ্বোধন করেন
শনিবার ২৫ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুটি উদ্বোধন করেন। দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।সবশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর পুরো টাকাই সরকারি অর্থায়ন। এতে করে ব্যয়ের সাথে আয়ের সামঞ্জস্যতার কারণেই টোল হার ফেরি থেকে একটু বেশি করা হয়েছে।