বাংলাদেশে হিংসা থামছে না। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগের নেতাদের বাড়িতে হামলা ও আগুন লাগানো হচ্ছে দেশজুড়ে। অন্তত ২৪টি জেলায় শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে বা বিকৃত করা হয়েছে। বুধবার রাতে হাসিনার একটি লাইভ অনলাইন ভাষণকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে নতুন করে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা ধানমান্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তারপর বুলডোজার এনে ভেঙে ফেলা হয়। বাড়ি থেকে প্রায় সব জিনিসই লুট হয়ে গিয়েছে। জানালা, দরজা, লোহার গ্রিলও খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে ঢাকার বনানীতে আওয়ামি লিগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিমের বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। দমকল আসলে তাদের আগুন নেভাতে বাধা দেওয়া হয়। এছাড়াও, বিক্ষোভকারীরা নোয়াখালির কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাঙচুর চালানো হয়েছে কাদেরের ছোট ভাই কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামি লিগের সভাপতি ওবায়দুল কাদের মির্জা ও বসুরহাট পৌরসভার প্রাক্তন মেয়র শাহাদাত মির্জার বাড়িতেও। বাড়ির সামনে রাখা একটি গাড়িতেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তখন বাড়িতে কেউ ছিলেন না।
রাজশাহীতে, একদল বিক্ষোভকারী চকসিঙ্গা মহল্লায় প্রাক্তন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের তিনতলা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে বাঘা ও চারঘাট উপজেলার শতাধিক লোক মোটরসাইকেলে করে সেখানে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। গতকালও পাবনার শালগাড়িয়া গ্রামে আওয়ামি লিগ নেতা আবু সাইদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা গেট ভেঙে ঢুকে বাড়ি ভাংচুর করে এবং তারপর আগুন ধরিয়ে দেয়। পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামি লিগের সহ-সভাপতি এবং ভারারা ইউনিয়ন পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান আবু সাইদ জুলাই বিদ্রোহের সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় অভিযুক্ত। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় শেখ মুজিবের দুটি মূর্তি ভেঙে ফেলে বিক্ষোভকারীরা। বিকেল ৪টার দিকে তারা একটি বুলডোজার নিয়ে কুমিল্লা জজকোর্ট প্রাঙ্গণে গিয়ে কোর্টের সামনে একটি মূর্তি ভেঙে ফেলে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা সিটি ইউনিটের সেক্রেটারি রাশেদুল হক বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদের সব নিদর্শন গুঁড়িয়ে দেব। পরে কুমিল্লা সিটি পার্কে শেখ মুজিবের আরেকটি মূর্তিও ভাঙটুর করা হয়।
নারায়ণগঞ্জে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শেখ মুজিবের আবক্ষ মূর্তি ভেঙে ফেলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শ্রমিকদের ডেকে হাতুড়ি ও শাবদল মূর্তি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। নরসিংদীতে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবের আরেকটি মূর্তিতে ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। আওয়ামি লিগ পন্থী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রায় ১০ কর্মীর ওপরেও হামলা হয়েছে। পুলিশ তখন তাঁদের আদালতে নিয়ে যাচ্ছিল। সারা দেশের বহু জায়গাতেই আওয়ামি লিগের নেতা কর্মীদের ওপরে হামলা চলছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, সারাদেশে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেছে যে কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছে। সরকার দৃঢ়ভাবে এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করবে। সরকার আরও বলেছে যে তারা নাগরিকদের এবং তাদের সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত। বিবৃতিতে বলা হয়, উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার কোনও চেষ্টা করা হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দায়ী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনবে।