অর্ধ শতাব্দীর রেকর্ড ভেঙে তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা-সহ অন্তত ৮ জেলা। মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে দেশের অন্যান্য জেলাগুলিতে। এই তাপপ্রবাহ আরও দু'দিন অব্যাহত থাকবে বলে পূর্ভাবাস। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, পাবনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলায় চলছে তীব্র তাপ প্রবাহ। দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশে তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থাও জারি হতে পারে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ৫৮ বছরের মধ্যে শনিবার সবচেয়ে উত্তপ্ত দিন ছিল ঢাকায়। এ দিন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ দিন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমের তীব্রতা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো অনুভূত হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্দ্রতার পরিমাণও ছিল কম। মাত্র ১৮ শতাংশ।
১৯৬৫ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে, টানা ১৪ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়। এর আগে ২০১৪ সালে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৯ বছরের মধ্যে শীর্ষে ছিল।
দেশের অন্যান্য এলাকাতেও গরম কমার কোনও লক্ষণ নেই। বরং বেশির ভাগ এলাকায় তাপমাত্রা বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ-সহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলির বেশিরভাগ এলাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছে। বইছিল লু-ও।
তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা ঢাকাবাসীর। গত শুক্রবার দুপুর নাগাদ তাপমাত্রা রেকর্ড ছুঁয়েছিল। আগামী দুই দিন সারা দেশে গরম কমার সম্ভাবনা নেই। রবিবার রাজধানী ঢাকায় রাতের তাপমাত্রা বাড়বে। দুই দিন পরে সিলেট অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে যে বাতাস প্রবেশ করছে, তাতে কিছুটা জলীয়বাষ্প রয়েছে। এতে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঘামও হবে।
আরও পড়ুন- বাড়ির সদস্যকে অন্যের হাতে দিলেন চঞ্চল, চৌধুরী পরিবারের চোখে জল
দু'দিনের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালি, ফেনি, মাদারিপুরের তাপমাত্রা ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে বলে পূর্বাভাস। অন্যদিকে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, মাগুরা, যশোরে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠার প্রবল আশঙ্কা। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অন্য জেলাগুলির তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকতে পারে। রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলিতে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম থাকার পূর্বাভাস। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অবশিষ্ট জেলাগুলোতে ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকার সম্ভাবনা।
‘তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা’ জারির পরিস্থিতি
সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহ। এই পরিস্থিতিতে দেশে ‘তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা’ জারি করা হতে পারে বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের এক কর্তা। তিনি জানান, আবহাওয়া যদি আরও কিছুদিন এমন থাকে, তখন ‘তাপমাত্রাজনিত জরুরি অবস্থা’ জারি করা হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে এমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মহম্মদ শাহাবউদ্দিন জানিয়েছেন,'আবহাওয়াজনিত জরুরি অবস্থা জারি করার মতো কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। বৃষ্টি হলেই দহন কমে যাবে। তাই আরও কয়েকদিন পরিস্থিতি দেখতে চাই, তার পর এ নিয়ে ভাবা যেতে পারে।'