পদত্যাগের নয়া নাটক চলছে বাংলাদেশে। সত্যিই কি পদ ছেড়ে দেবেন মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের সেনা অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা প্রধানের পদ ছাড়ার এই গুঞ্জনে বিন্দুমাত্রও বিচলিত নয়। বরং সেনা আক্রমণ শানিয়েছে 'ব্লাডি করিডর' নিয়ে। কী এই করিডর? কেন এর সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক?
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান মুহাম্মদ ইউনূসকে এমন কিছু বার্তা দিয়েছেন, যা হুঁশিয়ারির থেকে কম কিছু নয়। ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে ভোট করানোর হুঁশিয়ারির পাশাপাশিই সেনাপ্রধানের মুখে শোনা গিয়েছে, 'ব্লাডি করিডর' শব্দবন্ধটি। দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা প্রধানের কাছে 'ব্লাডি করিডর' শব্দের প্রয়োগ ইউনূসের দুর্বলতাকে সকলের সামনে স্পষ্ট করে দিয়েছে। নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত ইউনূস বাংলাদেশের উপদেষ্টা প্রধানের পদে বসার পর থেকে গত ৯ মাসে খুব একটা শান্তি পাননি, তেমনটাই অনুমান করা যাচ্ছে। এবার তাঁর গলার কাঁটা 'ব্লাডি করিডর'।
কী এই 'ব্লাডি করিডর'?
আদতে এই করিডর বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে সংযুক্ত করার উদ্দেশ্যে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই করিডরের আসল নাম, 'চটগাঁও রাখাইন করিডর'। বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর স্বার্থে এই করিডর নির্মাণ করা হচ্ছিল।
রক্ত নয় বরং মানবিকতার নজির হিসেবে এই করিডর তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে একটাই 'ভুল' করে বসেন ইউনূস। মুহাম্মদ ইউনূসের বিদেশ বিষয়ক পরামর্শদাতা তৌহিদ হুসেন সেনার সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একতরফা ঘোষণা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আমেরিকার প্রস্তাবিত রাখাইন করিডর নির্মাণে সম্মত। তৌহিদের এই বক্তব্য বাংলাদেশ সেনাকে অগ্রাহ্য করার সমান ছিল।
কেন 'ব্লাডি করিডর' নামকরণ?
এই করিডর নির্মাণকে রেড লাইন ক্রস করার সমান ধরেছে বাংলাদেশ সেনা। প্রকাশ্যে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে তারা। ইউনূসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, 'বাংলাদেশের সেনা এই ব্লাডি করিডর নির্মাণে অংশ নেবে না যা দেশের জন্য ক্ষতিকারক। কাউতে এমনটা করার অনুমতিও দেওয়া হবে না।'এই করিডর তৈরির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ক্রমশই মায়ানমারের গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে, যা হতে দিতে চান না সেনাপ্রধান।
করিডর নির্মাণের উদ্দেশ্য?
গৃহযুদ্ধ এবং ভূমিকম্পের কারণে জর্জরিত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের সাহায্য পৌঁছে দেওয়াই এই করিডর নির্মাণের উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। তবে সেনাপ্রধান তা মানতে নারাজ।
করিডর নিয়ে কী আশঙ্কা?
এমন থিওরিও বাংলাদেশের অন্দরে আলোচিত হচ্ছে, আমেরিকা নিজের সামরিক এবং ভূ-রণনীতিক ফায়দার জন্যই এই প্রজেক্ট তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। সেক্ষেত্রে পাপেট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ইউনূসকে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাও এই রাখাইন করিডর নির্মাণ নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছিলেন। তাঁর বলেছিলেন, রাখাইন অঞ্চলে আরাকান সেনার মতো বিদ্রোহীদের গতিবিধি এবং মায়ানমারে তাদের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করতকে পারে। উদাহরণ স্বরূপ সম্প্রতি বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে আরাকান সেনার একাধিক ঘাঁটিতে কব্জা করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সীমান্ত পারে হাতিয়ার পাচার, সন্ত্রাসবাদী গতিবিধি এবং অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। দ্বিতীয় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা রাখাইন করিডর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিতে পারে। বাংলাদেশে আগে থেকেই ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। করিডর খুলে গেলে মায়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ শরণার্থী বাংলাদেশে এসে হাজির হবে।