
বৃহস্পতিবার রাতে ওসমান হাদির মৃত্যু সংবাদ বাংলাদেশে ওসে পৌঁছানোর পরেই কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়েছে বাংলাদেশ। হাদির হত্যাকারীকে পাকড়াও করতে ইউনূস সরকারের প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করছেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা। বাংলাদেশের এই নেতার মৃত্যুর পরেই একটি প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠতে শুরু করেছে, হাদির মৃত্যুতে সবচেয়ে লাভবান হলেন কে বা কারা? আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ বিষয়ে BNP বা ব্যান হওয়া আওয়ামী লিগ খুব বেশি কোনও লাভ পাচ্ছে না। বরং তাঁরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন, এমন কোনও শক্তির দিকে যারা সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক ভোট প্রক্রিয়া ব্যাহত করে সাম্প্রদায়িক ভীতি ও অশান্তি তৈরি করতে চাইছে।
যদিও বিএনপি নেতা ও প্রাক্তন এমপি নিলোফার চৌধুরী মনি অভিযোগ করেছেন, জামাত-ই-ইসলামির নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী মহম্মদ শিশির মনির এর আগে গত ২ বছরের মধ্যে হাদির মৃত্যুতে সন্দেভাজন অভিযুক্তকে কমপক্ষে ২ বার জামিন দিয়েছে।
হাদির মৃত্য়ুর পর ভারত বিরোধী-হাসিনা বিরোধী প্রচার করা হচ্ছে
গত ১২ ডিসেম্বর হাসিনা বিরোধী স্বরের অন্যতম পরিচিত মুখ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। বেশ কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই একাধিক উগ্রপন্থী গোষ্ঠী, কট্টর ইসলামপন্থী নেতা ও কট্টর ভারত বিরোধীরা সুর চড়াতে শুরু করে। তাদের তরফে দাবি করা হয় হাদির হত্যাকারী সন্দেহভাজন শ্যুটার ফয়জল করিম বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে এসেছে। যদিও ঢাকা পুলিশ অন্তত দু'বার জানিয়েছে, সেই সন্দেহভাজন ব্যক্তি যে ভারতেই এসেছে, এমন কোনও তথ্য তাঁদের হাতে নেই।
এমনকি এই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শেখ হাসিনার আওয়ামী লিগের সঙ্গে জড়িয়ে ভারতকেও দুর্নাম করার চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ পুলিশ যখন একদিকে বলছে, সন্দেহভাজন শ্যুটারের ভারতে আসার প্রমাণ নেই, তারপরও ইউনূস প্রশাসন ভারতের কাছেই সেই শ্যুটারকে ফেরত পাওয়ার দরবার করেছে। যদিও এই গোটা বিষয়টিকে লোক দেখানো বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
কারণ হাদির মৃত্যুর পর থেকেই বাংলাদেশের এক অংশের মানুষের মধ্যে তীব্র ভারত বিরোধ দেখা গিয়েছে। উগ্রপন্থী গোষ্ঠীরা ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের সামনেও অশান্তি-বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। আসলে হাদির মৃত্যুতে তলে তলে থাকা ভারত বিদ্বেষীরাই যেন দলে দলে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়।
হাদিকে মারল কারা? সন্দেহের তীর জামাতের ছাত্র শিবিরের দিকে
ইনকিলাম মঞ্চের সদস্যরা ইউনূস প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়ে রেখেছে। যদিও পুলিশ এখনও খুব বেশি অগ্রগতি করতে পারেনি। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, BNP বা ব্যান হওয়া আওয়ামী লিগ এই খুন থেকে কিছু পাবে না।
বাংলাদেশি ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ নাহিদ হেলাল দাবি করেছেন, "এই খুনে আসল লাভবান হচ্ছে জামাত ও তার সহযোগী গোষ্ঠীগুলি। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আসলে ওরা যা দাবি চাইছিল তাই পেয়ে গেল। সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ করার অজুহাত, মিডিয়া আউটলেট ভাঙচুর করা, আওয়ামী লিগ সমর্থকদের ধরে ধরে খুন করা ও সর্বোপরি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া।" নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এই দাবি করেছেন প্যারিসে বসবাসকারী নাহিদ।
নিজের ইউটিউব চ্যানেলে হেলাল দাবি করেছেন, "BNP-র প্রবীণ নেতা মির্জা আব্বাস ঢাকা-৮ সিটে প্রার্থী হয়েছেন। এই সিটে হাদি ছিলেন একজন নির্দল প্রার্থী। রাজনৈতিক ভাবে দেখতে গেলে কোনও সন্দেহ নেই যে, হাদির থেকে মির্জা অনেক যোজন এগিয়ে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কোনও তুলনাই ছিল না। অন্যদিকে, ইসলামি ছাত্র শিবিরেরও নজর ছিল এই ঢাকা-৮ সিটের দিকে। ফলে হাদিকে সরানো গেলে আসলে জামাতই এখানে শক্তিশালী হবে।"
তিনি বলেন, "অত্যন্ত গভীর ভাবে বুঝুন, এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে NCP ও জামাত শিবির। এরা আসলে কারা? ইউনূসের সঙ্গী। তাহলে ভালো করে বুঝুন, এই ঝামেলা, রক্তক্ষয় ও অশান্তি থেকে আসল লাভ কাদের হচ্ছে?"
শুধুমাত্র নাহিদ হেলাল নয়। রাজা মুনিব নামে এক জিও-পলিটিক্যাল বিশেষজ্ঞও বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডে BNP বা আওয়ামী লিগের মতো দলগুলি লাভবান হওয়ার মধ্যে নেই। বরং NCP-জামাতরা সেই তালিকায় রয়েছে। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, "এই দ্বিতীয় সারির নেতাদের কে বা কারা খুন করছে তা সহজেই বোঝা যাচ্ছে।"
BNP নেতাও জামাতকেই দুষছেন
বিএনপি নেতা ও প্রাক্তন এমপি নিলোফার চৌধুরী মনি অভিযোগ করেছেন, জামাত-ই-ইসলামির নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী মহম্মদ শিশির মনির এর আগে গত ২ বছরের মধ্যে হাদির মৃত্যুতে সন্দেভাজন অভিযুক্তকে কমপক্ষে ২ বার জামিন দিয়েছে। তিনি বলেন, "হাদিকে যে গুলি করল, তাঁর ব্যাকগ্রাউন্ড দেখুন। কে তাঁকে বেল করিয়ে দিয়েছিল? আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি শিশির মনির তাকে অন্তত ২ বার বেল করিয়ে দিয়েছিল। আমরা এর জন্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করিনি।" তাঁর কথাতেই স্পষ্ট জামাতের আইনি সহযোগিতা হয়তো পরোক্ষ ভাবে হাদির মৃত্যুতে সহায়ক হয়েছে।