
একদিকে জানাজায় ইউনূসের কণ্ঠে হাদির প্রশস্তি। অন্যদিকে তাঁর সরকারকে আল্টিমেটাম হাদি অনুগামীদের। শনিবার ঢাকা ইউনিভার্সিটি চত্বরে ছাত্রনেতা শরিফ উসমান হাদির 'সুপর্দ-ই-খাক' হয়। জনাজায় উপচে পড়ে মানুষের ঢল। ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসও।
শেষ বিদায়ের মুহূর্তে ইউনূস বলেন, আজ এখানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন। শুধু এই প্রাঙ্গণেই নয়, গোটা দেশ জুড়ে, এমনকি বিদেশে থাকা প্রবাসী বাঙালিরাও দেখছেন। প্রিয় উসমান হাদি, আমরা আজ আপনাকে বিদায় জানাতে আসিনি। আপনি আমাদের হৃদয়ে রয়েছেন। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, তত দিন এই জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে আপনার নাম জড়িয়ে থাকবে।
ইউনূস আরও বলেন, আপনি আমাদের শিখিয়েছেন কী ভাবে বিনম্রভাবে মানুষের কাছে পৌঁছতে হয়, কী ভাবে কাউকে আঘাত না করে নিজের মত প্রকাশ করতে হয়, আর কীভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাতে হয়। আমরা সেই শিক্ষাকে গ্রহণ করছি এবং বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিচ্ছি। আমরা এমন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়তে চাই, যেখানে হাদির আদর্শ চিরজীবন্ত হয়ে থাকবে। আমরা কারও সামনে মাথা নত করব না। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু রেখেই দাঁড়াব। এটাই ছিল জনগণের কাছে আপনার প্রতিশ্রুতি, আর সেই প্রতিশ্রুতি আমরা যে কোনও মূল্যে পূরণ করব।
এ দিকে ইনকিলাব মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হাদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবদুল্ল আল জাবের ইউনূস সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তাঁর দাবি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে সব জানাতে হবে। হাদি হত্যার জন্য কারা দায়ী এবং তাদের গ্রেপ্তারে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে তা বলতে হবে।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন উসমান হাদি। মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি হয়ে উঠেছিলেন শেখ হাসিনা বিরোধী ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র। আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনে ঢাকার একটি কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রচারও শুরু করেছিলেন। গত বছর বাংলাদেশের ‘জুলাই বিদ্রোহে’র সময় ইনকিলাব মঞ্চ আলোচনায় আসে, যে আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দেশত্যাগ করতে হয়।
সবচেয়ে বড় কথা, ইনকিলাব মঞ্চকে বাংলাদেশে একটি কট্টরপন্থী সংগঠন হিসেবেই দেখা হয়। সংগঠনের লক্ষ্য; বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগকে নিশ্চিহ্ন করা এবং একটি কট্টরপন্থী সরকার গঠন। হাদি নিজেও বাংলাদেশে পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন কট্টর ভারত-বিরোধী নেতা হিসেবে। তাঁর ভারত-বিরোধী ও বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে বহুবার ঝড় উঠেছে। কয়েক দিন আগেই তিনি ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’-এর একটি মানচিত্র প্রকাশ করেন, যেখানে ভারতের কিছু অংশকে বাংলাদেশের বলে দাবি করা হয়েছিল।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই শেখ হাসিনার দল কার্যত রাজনীতির ময়দান থেকে ছিটকে গিয়েছে। অন্য দিকে, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভেন্টিলেশনে। এমন পরিস্থিতিতে ইউনূসের হাতও যে অনেকটাই বাঁধা; তা স্পষ্ট। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, হাদির মৃত্যুর পর রাস্তায় নামতে পারে উগ্র শক্তি, আর সেই অস্থিরতার সুযোগ নিয়েই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিতে পারে উপদ্রবী গোষ্ঠী।