বলিউড মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চনকে (Amitabh Bachchan) এমনি এমনিই শাহেনশাহ বলা হয় না। সিনেমার জগতের বেতাজ বাদশা অমিতাভের খ্যাতি ছিল বিশ্বব্যাপী ছিল এবং আজও অব্যাহত রয়েছে। আফগানিস্তানেও (Afghanistan) বিগ বি-র ভক্তদের অভাব ছিল না। সাধারণ মানুষ থেকে আফগানিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মহম্মদ নাজিববুল্লাহ (Mohammad Nazibullah) পর্যন্ত অমিতাভের ফ্যান ছিলেন। এই কারণে আফগানিস্তানে যুদ্ধের পরিবেশেও অমিতাভ বচ্চন এবং শ্রীদেবী খুদা গওয়াহ-র (Khuda Gawah) শুটিং শেষে নিরাপদে ফিরে এসেছিলেন।
খুদা গওয়াহ ছবির শুটিংয়ের জন্য আফগানিস্তানকে বেছে নেওয়া পরিচালক মুকুল এস আনন্দের একটি বড় সিদ্ধান্ত ছিল। ছবির কিছু দৃশ্য কাবুল ও মাজার-ই-শরিফে শুট করা হয়েছিল। তখন আফগানিস্তানে মুজাহিদিনদের যুদ্ধ চলছিল। এমন পরিস্থিতিতে ছবির শুটিং করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
আশ্চর্যের বিষয় ছিল তৎকালীন আফগান রাষ্ট্রপতি মহম্মদ নাজিববুল্লাহ নিজেই আফগানিস্তানে ছবির শুটিংয়ের সমস্ত ব্যবস্থা করেছিলেন। আসলে, নাজিবুল্লাহ ছিলেন অমিতাভের বড় ভক্ত। তাঁর প্রিয় তারকাকে দেশের মাটিতে স্বাগত জানানো তার জন্য অনেক বড় ব্যাপার ছিল। নাজিববুল্লাহর মেয়েও অমিতাভের বড় ভক্ত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি মহম্মদ নাজিববুল্লাহ খুদা গওয়াহ-র শুটিংয়ের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছিলেন। অমিতাভ বচ্চন-শ্রীদেবী বা ছবির কোনও সদস্যের যাতে কোনও ক্ষতি না হয় সে বিষয় তিনি নিশ্চিত করেন।
এ ছাড়াও আর একটি খুব আকর্ষণীয় এবং বড় ঘটনা ঘটেছিল খুদা গওয়াহ-র শুটিংয়ে। আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত শায়দা মোহাম্মদ আবদালি এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছিলেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির কন্যা যখন জানতে পারেন যে অমিতাভ বচ্চন আফগানিস্তানে এসেছেন, তখন তিনি তাঁর বাবাকে অনুরোধ করেছিলেন মুজাহিদিনদের যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য।
রাষ্ট্রপতি মেয়ের নাম নিয়ে মুজাহিদিনদের অনুরোধ করেন, যেন তারা একদিনের জন্য তাদের লড়াই বন্ধ করে দেন, যাতে আফগানিস্তানে শুটিংয়ে আসা অমিতাভ বচ্চন শহরে ঘোরাফেরা করতে পারেন। মুজাহিদীনরাও অমিতাভের ভক্ত ছিলেন এবং তারা বিগ বি -র জন্য একদিনের লড়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে ছবির শুটিংয়ের ১৮তম দিনে আফগান বিমান বাহিনী কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।
আফগানিস্তানে খুদা গওয়াহ-র শুটিং নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছিল এবং বিগ বিও শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করেছিলেন। অমিতাভ তাঁর আফগানিস্তান সফরের দিনগুলোর স্মৃতি ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতি নাজিববুল্লাহ হিন্দি ছবির অনুরাগী। এমনকী তিনি অমিতাভকে রাজকীয় সম্মান 'অর্ডার অফ আফগানিস্তান' দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন।
আফগানিস্তানে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে অমিতাভ বলেছিলেন যে তিনি বিমানে এবং রক্ষীদের উপস্থিতিতে সেখানে ঘোরাঘুরির সুযোগ পেয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি অমিতাভের আতিথেয়তায় কোনও কসুর করেননি। তিনি হোটেলের বদলে অমিতাভকে তাঁর বাড়িতেই রেখেছিলেন।
আফগানিস্তানের সৌন্দর্য ছাড়াও তিনি সেখানে যুদ্ধের পরিবেশের কথাও উল্লেখ করেছিলেন অমিতাভ। তিনি জানিয়েছিলেন, সেখানকার রাস্তায় ট্যাঙ্ক এবং সৈন্যদের টহলদারি ছিল। সেখানকার এক উপজাতির নেতা অমিতাভকে খাবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমন্ত্রণ রক্ষার জন্য অমিতাভ ড্যানি ডেনজংপা-র সঙ্গে একটি হেলিকপ্টারে সেখানে যান। তাঁদের সঙ্গে আরও পাঁচটি হেলিকপ্টার ছিল। সেখানে পৌঁছানোর পর সেই নেতা অমিতাভকে কোলে তুলে ভেতরে নিয়ে যান। আফগান ট্র্যাডিশন অনুযায়ী, সেখানে অতিথির পা মাটিতে পড়া উচিত নয়।
আফগানিস্তানে অমিতাভের এই আতিথিয়তা অন্য কোনও চলচ্চিত্র তারকার ক্ষেত্রে খুব কমই দেখা গেছে। অমিতাভের ছবি খুদা গওয়াহ আফগানিস্তানে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি দেখা হিন্দি ছবি। এটি আজও সেখানে খুব জনপ্রিয়। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তান দখল করার পর তালিবানরা রাষ্ট্রপতি মহম্মদ নাজিববুল্লাহকে নির্মমভাবে পিটিয়ে কাবুলের আরিয়ানা চকে একটি স্তম্ভ থেকে ঝুলিয়ে দেয়।