সেটাই বড় পর্দায় প্রথম আপনার (Sujoy Ghosh) ছবি দেখতে যাওয়া। প্রথম উইকএন্ডে গিয়েছিলাম। আগাম বুকিংয়ে তখন এতটা অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। বিদ্যা-কে (Vidya Balan) প্রথম থেকেই ভালো লাগত। ওঁর মতো বলিষ্ঠ অভিনেত্রী বলিউডে কম। সংবাদ মাধ্যমে চাকরি করার সুবাদে ফিল্ম রিভিউ পড়ার বদ অভ্যাস ছিল। কাহানি (Kahaani) মুক্তি পাওযার পরেও যথারীতি পড়েছিলাম। এক সিনিয়র সহকর্মী লিখেছিলেন সেটি। রেটিং দেখে খানিকটা আশ্চর্য হয়েছিলাম। দশে আট পেয়েছিল কাহানি। এত হাত খুলে নম্বর দেওয়ার লোক ছিলেন না লেখিকা। দেখা হওয়ায় কারণ জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেছিলেন, 'তুই কি সিনেমাটা দেখবি? যদি দেখিস তা হলে বলব না, যদি না দেখিস তবে সব বলে দিচ্ছি।' না, সিনেমার গল্প শুনিনি তাঁর কাছে। তাঁর ওই ডায়ালগই আমায় একপ্রকার ঠেলে পাঠিয়েছিল সিনেমা হলে।
উষা উত্থুপের সুরেই বলছি 'আমি সত্যি বলছি', কাহানি আমাদের দেখা সবচেয়ে ভালো সিনেমাগুলোর তালিকায় থাকবে। অনেকগুলি কারণ রয়েছে এর পিছনে। প্রথমটা অবশ্যই বিদ্যা বালন। দ্বিতীয় কারণ, প্রতিটা চরিত্র বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য বাঙালি অভিনেতাদের কাস্ট করেছেন। কারণ গোটা ঘটনা ছিল কলকাতাকে কেন্দ্র করে। তৃতীয় কারণ নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি। চতুর্থ কারণ বব বিশ্বাস। আরও একটা মোক্ষম সফ্ট পয়েন্টে আঘাত করেছিলেন। শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় প্রিয় অভিনেতা তো বটেই, অত অল্প সময় স্ক্রিনে থেকে একজন ভিলেনকে এ ভাবে জনপ্রিয় করে দেওযা যায় তা ওঁর কাছে শেখা যেতে পারে। সর্বশেষ কারণ শহর কলকাতা। যে শহরে ছোট থেকে বড় হয়েছি, তার বুকে বিভিন্ন চেনা জায়গায় একের পর রুদ্ধশ্বাস ঘটনা ঘটতে দেখছি। সিটে বসেই নিঃশব্দে লাফিয়েছিলাম। পুনশ্চ, এটা না লিখলেই নয়, টাইটেল কার্ড দেখানোর আগে অমিতাভ বচ্চনের কণ্ঠে শোনা শেষ লাইনগুলো আর রবীন্দ্র সঙ্গীত বিশেষ মাত্রা দিয়েছিল। তার পর যে কতবার কাহানি দেখেছি তা গুণে বলতে পারব না। বলতে পারেন আমি কাহানি-প্রেমিক। এখনও মাঝেমধ্যে দেখি।
আমার সৌভাগ্য বলতে পারেন, কাহানি ২ প্রোমোট করতে আপনি বিদ্যার সঙ্গে আমাদের অফিসে এসেছিলেন। ঘটনাচক্রে সে দিন সেই ইভেন্ট ফেসবুক লাইভ করেছিলাম অফিস থেকে। প্রথম ভাগের মতো প্রবল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সত্যি বলতে সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। আপনি নিজের জন্য যে বেঞ্চমার্ক তৈরি করেছেন, সেটা আপনাকেই দেখতে হবে তো। আমরা তো দর্শক। সমালোচকের তকমা যদি বাদও দিই, তা হলে সাধারণ দর্শক হিসাবে সিনেমা হলে গিয়ে একটা জিনিসই চাইব, ভালো একটা সিনেমা। যেটা দেখার পর মনে বলবে, সময়টা নষ্ট হল না। বরং একটা সুখ স্মৃতি তৈরি হল।
বদলা দেখে খানিকটা হলেও সেই আক্ষেপ মিটেছিল। স্প্যানিশ সিনেমা দ্য ইনভিজিবল গেস্ট-এর অনুকরণে তৈরি হলেও ভালো লেগেছিল। ভালো লেগেছিল সত্যজিতের ছোট গল্পের ছায়ায় তৈরি অনুকুল এবং অহল্যা। থ্রিলার আপনার ট্রেডমার্ক। কোনও বড় ধরনের গোলাগুলি না চালিয়ে সুক্ষ্ম ভাবে তৈরি করা জাল যখন গুটিয়ে আনেন, সেই জালে আটকা পড়ে যায় দর্শক-মন। আপনি এর আগেও করেছেন। আজ আপনার জন্মদিন, একজন সিনেমার ভক্ত এবং সর্বোপরি আপনার কাজের গুণমুগ্ধ হিসাবে অনুরোধ, আবার বড় পর্দায় আপনার ট্রেডমার্ক কাহানি ফিরিয়ে আনুন। জন্মদিনে না হয় একটা রিটার্ন গিফ্টের আশা করলাম। আশা করি রাখবেন।