তিনি নিজের শর্তে নিজের মতো করে জীবন কাটিয়েছেন। সিঙ্গল মাদার হিসাবে, বলিষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে, এক ছক ভাঙা নারী হিসাবে নীনা গুপ্তা (Neena Gupta) একেবারে স্বতন্ত্র। নিজের আত্মজীবনীতে (Sach Kahun Toh) তিনি এমন এমন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, যা সচরাচর কেউ করতে চান না। বিশেষত তিনি যদি নারী হন, তা হলে ভারতীয় উপমহাদেশে তাঁরা এ বিষয়ে মুখ খোলার সাহস পান না কেউ। নীনা গুপ্তা অবশ্য অন্য ধাতুতে গড়া। ছোটবেলার যৌন হেনস্থার জ্বলন্ত অধ্যায় সকলের সামনে তুলে ধরেছেন নিজের বইয়ে। নির্যাতনের কথা নিজের মা-কেও মুখ ফুটে বলতে পারেননি নীনা।
চিকিৎসক থেকে দর্জি, নীনার শৈশব কলুষিত হয়েছে সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষের লোলুপ দৃষ্টিতে। নীনার লেখা থেকে জানা যাচ্ছে চোখের ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন দাদার সঙ্গে। দাদাকে বাইরে বসতে বলে সেই চিকিৎসক নীনাকে ভেতরে ডেকে নিয়ে যান। তাঁর লেখায়, “চোখ পরীক্ষা করতে শুরু করে সে প্রথমে। এরপর এমন সব জায়গায় পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতে থাকে যার সঙ্গে চোখের কোনও সম্পর্ক নেই। আমি জড় পদার্থের মতো বসে ছিলাম। বাড়ি ফিরে এক কোনায় বসে কেঁদেছিলাম।” মা’কে বলতে না পারার কারণ হিসেবে নীনা বলেন, “মনে হয়েছিল মা বলবে দোষ আমার। আমি হয়তো এমন কিছু করেছি যে কারণে সেই ব্যক্তি এমন কাজ করার সাহস পেয়েছে। একবার নয়, বহুবার বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাকে।”
নীনা জানাচ্ছেন, শুধু চিকিৎসকই নন, দর্জিও তাঁর জামার মাপ নিতে গিয়ে অভব্যতা করেছিলেন তাঁর সঙ্গে। একি ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ১৬ বছর বয়সে। তবে এবার দর্জি নয়, তাঁর নিজের দাদার বন্ধু, যার সদ্য বিয়ে হয়েছিল। নীনা লিখছেন, কলেজে ওঠার পর তিনি বুঝতে পারেন, তিনি একা নন, সমবয়সী অনেক বন্ধুই ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন নানা ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু বাবা-মা’কে মুখ ফুটে বলার সাহস পাননি কেউই।
বর্তমানে ছোট ছোট বাচ্চাদের যে ভাবে ‘গুড টাচ’ ও ‘ব্যাড টাচ’-এর সংজ্ঞা সেখান বাবা-মা তাঁদের সময়ে এমনটা ছিল না বলেই এমন সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে মনে করেন নীনা গুপ্তা। ঠোঁটকাটা। বলিউড ইন্ডাস্ট্রি এ ভাবেই চেনে নীনা গুপ্তাকে। নিজের শর্তে জীবন বেঁচেছেন। কেরিয়ারের স্ট্রাগল, একা মায়ের লড়াই- কাউকে পাশে পাননি। ফলে মুখের উপর কথা বলতে তাঁর বাধে না। ক্রিকেটার ভিভিয়ান রিচার্ডসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। তাঁরা বিয়ে করেননি। সিঙ্গল মাদার হিসাবেই বড় করেছেন সন্তান মাসাবাকে।