শিরোনামে 'সাইয়ারা'। মোহিত সুরি পরিচালিত এই ছবি বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে। প্রথম চার দিনেই ১০০ কোটি টাকারও বেশি আয় করেছে। আহান পান্ডে ও অনীত পাড্ডা অভিনীত মিউজিক্যাল রোম্যান্টিক ছবি 'সাইয়ারা'-র প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলে। এর উন্মাদনা সারা ভারত জুড়ে ছড়িয়েছে। এই ছবি শুধু এবছরের নয়, গত কয়েক বছরের মধ্যে বলিউডের সবচেয়ে বড় ব্লকবাস্টারে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার থেকে ছবির তৃতীয় সপ্তাহ শুরু হয়েছে। এতদিন পরেও, প্রেমের এই ছবিটি এমন ব্যবসা করেছে, যা অনেক নতুন ছবি প্রথম সপ্তাহান্তেও করতে পারেনি।
তৃতীয় সপ্তাহের পর বেশিরভাগ ছবি বক্স অফিসে কম লক্ষ্মীলাভ করতে শুরু করে। তবে ব্যতিক্রম 'সাইয়ারা'। এই ছবি তৃতীয় সপ্তাহেও ছক্কা হাঁকাচ্ছে। বলা যায়, অনেক রেকর্ড ভেঙেছে। আহান ও অনীত, দু'জনেই 'সাইয়ারা'-র মাধ্যমে বড় পর্দায় পা রেখেছেন। আর প্রথম ছবিতেই বাজিমাত।
'সাইয়ারা'-র তৃতীয় সপ্তাহের আয়
গত সোমবার-মঙ্গলবার, 'সাইয়ারা' প্রায় ১০ কোটি টাকা আয় করেছে। বুধবার-বৃহস্পতিবার পর্যন্ত, এই ছবির আয়ের প্রথম বড় পতন ঘটে এবং আয় ৮ কোটি থেকে ৬ কোটিতে নামে। শুক্রবার ৫ কোটি টাকা আয় করে 'সাইয়ারা'। ১৫ দিনে ২৯০ কোটি টাকা আয় করেছে ছবিটি। এদিকে নতুন সপ্তাহান্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে, 'সাইয়ারা' র আয়ের গ্রাফ আবারও লাফিয়ে উঠেছে। শনিবার ছবির আয় ৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
ট্রেড রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে, রবিবার বক্স অফিসে এই ছবিটি ৮ কোটি টাকারও বেশি আয় করেছে। শনিবারের পর, 'সাইয়ারা'-র নেট সংগ্রহ ছিল ২৯৭ টাকারও বেশি। রবিবারের পরে ছবির মোট আয় ৩০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এখন এই ছবির মোট আয় প্রায় ৩০৫ কোটি টাকা।
'সাইয়ারা' নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে
২০২৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ভিকি কৌশল অভিনীত ছবি 'ছাভা'-র পর, ৩০০ কোটি টাকারও বেশি আয় করেছে, এরকম দ্বিতীয় ছবি 'সাইয়ারা'। সবচেয়ে বিশেষ তথ্য হল, 'সাইয়ারা' হল প্রথম বলিউড ছবি যেটিতে নায়ক- নায়িকা দু'জনেই ডেবিউ করেও ৩০০ কোটি টাকা আয় করেছে।
বক্স অফিসে ৩০০ কোটি টাকা আয় করতে এই ছবিটির ১৭ দিন সময় লেগেছে, আমির খানের 'পিকে' এই মাইলফলক স্পর্শ করতে ঠিক একই সময় লেগেছে। হৃত্বিক রোশনের 'ওয়ার'-র ১৯ দিন, সলমন খানের 'বজরঙ্গি ভাইজান'-র ২০ দিন এবং 'সুলতান'-র ৩৫ দিন সময় লেগেছে। তবে এখন শুধু ৩০০ কোটি টাকার বক্স অফিস কালেকশন নয়। 'সাইয়ারা' এমন একটি ব্লকবাস্টার হয়ে উঠেছে, যেখানে 'কেয়ামত সে কেয়ামত তক', 'ফুল অউর কাঁটে' এবং 'কাহো না পেয়ার হ্যায়'-র মতো ছবিগুলিকে সত্যিকারের ব্লকবাস্টার বলা হয়।
ব্লকবাস্টার বলার মাপকাঠি
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ছবির টিকিটের দাম বাড়তে থাকে এবং গত ৩০ বছরের তুলনায় আজ ছবির হিসাব অনেক বদলে গেছে। বক্স অফিসে বড় অঙ্কের কালেকশন সংগ্রহ করা এখনও সহজ, কিন্তু আসল পরীক্ষা হল দর্শক সংখ্যা অর্থাৎ বিক্রি হওয়া টিকিটের সংখ্যা।
নবাগত অভিনেতাদের ছবি নিয়ে কথা বললে, ঋষি কাপুর এবং ডিম্পল কাপাডিয়া অভিনীত 'ববি' (১৯৭৩) সবচেয়ে বড় ব্লকবাস্টার বলা যেতে পারে। কারণ এর দর্শক সংখ্যা ছিল ৫ কোটিরও বেশি। সলমন খান এবং ভাগ্যশ্রী অভিনীত 'ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া' (১৯৮৯), সানি দেওল-অমৃতা সিং অভিনীত 'বেতাব' (১৯৮৩) এবং কুমার গৌরব-বিজেতা পণ্ডিতের 'লাভ স্টোরি' (১৯৮১) হল মনে রাখার মতো হিট ছবি, যাদের দর্শক সংখ্যা ছিল ৪ কোটিরও বেশি।
এদিকে নবাগত তারকাদের ছবির কমল হাসান-রতি অগ্নিহোত্রীর 'এক দুজে কে লিয়ে' (১৯৮১) এবং জ্যাকি শ্রফ-মীনাক্ষী শেষাদ্রির 'হিরো' (১৯৮৩)-তে প্রেক্ষাগৃহে ৩ কোটিরও বেশি দর্শক হয়েছিল। আমির খান-জুহি চাওলার 'কেয়ামত সে কেয়ামত তক' (১৯৮৮) এবং অজয় দেবগন-মধুর 'ফুল অউর কাঁটে' (১৯৯১) ছবি দেখতে ২ কোটিরও বেশি দর্শক হয়েছিল। হৃত্বিক রোশন এবং আমিশা প্যাটেলের 'কহো না পেয়ার হ্যায়' (২০০০) ছিল দীর্ঘ সময়ের পরে নতুন মুখ নিয়ে প্রথম প্রেমের গল্প যার দর্শক সংখ্যা, ২ কোটি ছাড়িয়েছিল। এই ছবির শেষ দর্শক পাওয়া গেছে ৩ কোটিরও বেশি।
ট্রেড রিপোর্ট অনুসারে, 'সাইয়ারা' ছবির দর্শক দেখা হয়েছিল প্রায় ১০ দিন আগে ১.১৫ কোটি। অনুমান করা হচ্ছে, 'সাইয়ারা' ছবিটি সম্পূর্ণ মুক্তির পর ২ কোটির কিছু বেশি ব্যবসা করবে। গত ২৫ বছরে, 'কহো না পেয়ার হ্যায়' ছবির পর 'সাইয়ারা' একমাত্র প্রেমের গল্প যেখানে দুই ডেবিউ অভিনেতার আয় ২ কোটিরও বেশি।
'সাইয়ারা'র শুধু বক্স অফিস কালেকশনের দিক থেকে নয়, দর্শকের সংখ্যার দিক থেকেও ব্লকবাস্টার হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয় হল, এই ছবি আরও কত বড় রেকর্ড ভাঙতে পারে।