এক বছর আগের রবিবার পাল্টে গিয়েছে সোমবারে। কিন্তু একটা সত্যি পাল্টায়নি। সুশান্ত সিং রাজপুত চিরকালের মতো সকলেক ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তাঁর মৃত্যু যতটা নিঃশব্দে এসেছিল, তাঁর মৃত্যু পরবর্তী অধ্যায়গুলি ততটাই বেশি জায়গা করে নিয়েছিল খবরের কাগজের শিরোনামে। মাদক, টাকা, স্বজনপোষণ, রাজনীতি সব কিছু মিলমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। আজ এক বছর বাদে একবার ফিরে দেখা পর পর ঘটনাপঞ্জী।
১৪ জুন ২০২০- বান্দ্রার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ। মুম্বই পুলিশ তদন্ত শুরু করে তত্ত্বাবধানে শুরু হয় তদন্ত। ঘটনা শোকস্তব্ধ হয়ে যায় গোটা বলিউড এবং সুশান্তের অনুরাগীরা।
১৫ জুন ২০২০- শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় মুম্বইতে। এ দিন থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। প্রথম বোমা ফাটান অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত। সোশালে বিতর্কিত ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। সুশান্তের পরিবারের তরফ থেকে অস্বাভাবিক মৃত্যু দাবি জানানো হয়।
১৬ জুন ২০২০- বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে দাবি করেন সুশান্তের মৃত্যু আদপে আত্মহত্যা নয়। মৃত্যুর পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে।
১৮ জুন ২০২০- সুশান্তের তৎকালীন প্রেমিকা অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী বয়ান রেকর্ড করে বান্দ্রা পুলিশ। তদন্তের জন্য ডাক পড়ে একের পর এক বলিউড সেলেবদের।
২৪ জুন ২০২০- সুশান্তের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে। রিপোর্টে আত্মহত্যায় সিলমোহর লাগানো হয়। জানানো হয়, কোনও আঘাত বা ফাউল প্লে-র চিহ্ন মেলেনি।
জুন ২৫, ২০২০- বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করেন।
৪ জুলাই ২০২০- সুশান্তের বাবা সিবিআই তদন্তের দাবি জানান।
৬ জুলাই ২০২০- পরিচালক সঞ্জয় লীলা বনশালী-র বয়ান রেকর্ড করে মুম্বই পুলিশ।
১৬ জুলাই ২০২০- রিয়াকে কার্যত কাঠগড়ায় দাঁড় করায় দেশের সংবাদমাধ্যম এবং সোশাল মিডিয়ায় একাংশ। মহেশ ভাটের সঙ্গে রিয়ার ছবি ভাইরাল হয়। রিয়া নিজে সিবিাই তদন্তের দাবি জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
১৮ জুলাই ২০২০- তদন্তের জন্য আদিত্য চোপড়াকে ডেকে বয়ান রেকর্ড করে পুলিশ।
২৪ জুলাই ২০২০- ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পায় সুশান্তের শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’। সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বার দেখা ছবি হিসেবে নতুন নজির তৈরি করে ছবিটি।
২৯ জুলাই ২০২০- রিয়া চক্রবর্তী-সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে পটনার রাজীব নগর থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে এফ আই আর দায়ের করেন সুশান্তের বাবা।
২৯ জুলাই ২০২০- পুলিশ অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন রিয়া।
৩১ জুলাই ২০২০- সুশান্তকাণ্ডে আর্থিক তছরূপের দিকটি খতিয়ে দেখতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তদন্ত শুরু করে।
৪ অগাস্ট ২০২০- বিহার পুলিশ ঘটনার তদন্তে সিবিআই হস্তক্ষেপের সুপারিশ করে।
৫ অগাস্ট ২০২০- সুশান্তের মৃত্য তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
৬ অগাস্ট ২০২০- রিয়া চক্রবর্তী, তাঁর বাবা ইন্দ্রজিৎ চক্রবর্তী, ভাই শৌভিক চক্রবর্তী, মা সন্ধ্যা চক্রবর্তী, সুশান্তের হাউজ ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডা, শ্রুতি মোদীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে সিবিআই। আত্মহত্যার প্ররোচনা, বিশ্বাসভঙ্গ, আর্থিক তছরুপ প্রভৃতি ধারায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়।
১০ অগাস্ট ২০২০- ‘মিডিয়া ট্রায়াল’নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেন রিয়া। বিচারের আগেই তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করায় মিডিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন রিয়া।
২০ অগাস্ট ২০২০- সিবিআই তদন্তকারী দল মুম্বই পৌঁছায়। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন তাঁরা। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়।
২২ অগাস্ট ২০২০- এইমসের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। সুশান্তের মৃত্যু কী ভাবে হয়েছিল তা খতিয়ে দেখার জন্য চিকিৎসক সুধীর গুপ্তের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন। ফ্ল্যাট থেকে স্যাম্পেল সংগ্রহ করেন। প্রয়াত অভিনেতার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট আবারও খতিয়ে দেখা হয়।
২৫ অগাস্ট ২০২০- সুশান্তের মৃত্যুতে মাদক যোগের ইঙ্গিত পায় ইডি। রিয়া চক্রবর্তী এবং ট্যালেন্ট ম্যানেজার জয়া সাহার এক হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট হাতে আসে ইডির। সেই চ্যাটে ‘হার্ড ড্রাগ’-এর ব্যাপারে আলোচনা চলছিল। ইডি অনুরোধ করে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো ওরফে এনসিবিকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য।
২৬ অগাস্ট ২০২০- সুশান্ত কাণ্ডে মাদক যোগ খতিয়ে দেখতে প্রবেশ হয় এনসিবি-র। রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
২৭ অগাস্ট ২০২০- এতদিন পর্যন্ত ছেলের মৃত্যুতে প্ররোচনা দেওয়া অভিযোগ তুললেও আচমকাই রিয়াকে ছেলের খুনির তকমা দেন কেকেসিং।
২৮ অগাস্ট ২০২০- রিয়াকে ডেকে পাঠায় সিবিআই। সাত ঘণ্টা ধরে জেরা করা হয় তাঁকে।
৪ সেপ্টেম্বর ২০২০- মাদক মামলায় রিয়ার ভাই শৌভিক এবং সুশান্তের হাউজ ম্যানেজার স্যামুয়েল মিরান্ডাকে গ্রেফতার করে এনসিবি। তাঁদের জেল হেফাজতে রাখা হয়।
৭ সেপ্টেম্বর ২০২০- সুশান্তের দুই দিদি প্রিয়াঙ্কা এবং মিতুর বিরুদ্ধে মুম্বই পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করেন রিয়া। তাঁর অভিযোগ ছিল ভুয়ো প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে সুশান্তের দুই দিদি তাঁর ভাইকে নিষিদ্ধ ওষুধ খাইয়েছেন।
৮ সেপ্টেম্বর ২০২০- মাদক মামলায় গ্রেফতার হন রিয়া। পর পর তিন দিন এনসিবি রিয়াকে জেরার পর অবশেষে গ্রেফতার করে তাঁকে। তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখা হয়।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০- মাদক মামলায় এনসিবির দফতরে ডাক পড়ে দীপিকা পাড়ুকোন, সারা আলি খান, রাকুল প্রীত, শ্রদ্ধা কাপুর-সহ বলিউডের প্রথম সারির নায়িকাদের।
৫ অক্টোবর ২০২০- এইমসের মেডিকেল বোর্ডের তরফে সুশান্তের পরিবারের আনা শ্বাসরোধ অথবা বিষক্রিয়া করে খুনের তত্ত্বকে খারিজ করে দেওয়া হয়। হত্যার অভিযোগকেও প্রকারান্তরে খারিজ করে দেওয়া এইমসের তরফে। সিলমোহর পড়ে আত্মহত্যাতেই।
৮ অক্টোবর ২০২০- এক মাস কারাবাসের পর অবশেষে জামিনে মুক্তি পান রিয়া।
৯ নভেম্বর ২০২০- অর্জুন রামপালের বাড়িতেও হানা দেয় এনসিবি। রামপালের বান্ধবী এবং লিভ ইন পার্টনার গ্যাব্রিয়েলা ভাই অ্যাজিসিলাওস ডিমেট্রিয়াডেসের বাড়িতে অনুসন্ধান চালিয়ে হাশিশ এবং নিষিদ্ধ ট্যাবলেট পায় নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো।
২ ফেব্রুয়ারি ২০২১- এনসিবি তরফে জানান হয় সুশান্ত কাণ্ডে মাদক মামলায় এখনও পর্যন্ত চার্জশিট গঠন করেনি তারা।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১- সুপ্রিম কোর্ট মিতু সিংয়ের বিরুদ্ধে আনা রিয়ার অভিযোগ খারিজ করে।
৫ মার্চ ২০২১- মুম্বইয়ের বিশেষ আদালতে ১২ হাজার পাতার চার্জশিট জমা দেয় নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো
২৮ মে ২০২১- মাদক মামলায় নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর হাতে গ্রেফতার হন সুশান্ত সিং রাজপুতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিদ্ধার্থ পিঠানি।