উচ্চতা মাত্র ৪ ফুট ১১ ইঞ্চি। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিত্বের সামনে অনেক লম্বা মানুষকেও বামন মনে হত। তিনি ছিলেন দেশের প্রথম বিশ্বশ্রী মনোহর আইচ।
১৭ মার্চ ১৯১৩ সালে অবিভক্ত বাংলার কুমিল্লাতে জন্মগ্রহণ করেন। ১২ বছর বয়সে কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর অত্যন্ত দুর্বল ও শীর্ণ হয়ে পড়েন। তখনই ঠিক করেন, শারীরিক কসরতে শরীরকে লোহার মতো শক্ত করে তুলবেন। সেই থেকে শুরু সাধনা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই সাধনা করে গিয়েছেন।
১৯৪২ সালে রয়্যাল এয়ার ফোর্সে যোগদান করেন। সে সময় একটা নিয়ম প্রচলিত ছিল এয়ারফোর্সে। রাতে অফিসাররা খাওয়ার পর যে খাবার অবশিষ্ট থাকত, তা পরদিন ভারতীয়দের খেতে দেওয়া হত। মনোহর আইচ তা খেতে অস্বীকার করেন। এতে ১৯৪৩ সালে ৭ বছরের জেলও হয় তাঁর।
তবে ৪ বছর পর দেশ স্বাধীন হওয়ায় তাঁকে সাজার পুরো সময় জেলে কাটেতে হয়নি। তবে জেলের মধ্যেও শারীরিক অনুশীলন বন্ধ করেননি মনোহর। তাঁর নিষ্ঠা দেখে জেলে তাঁর জন্য বিশেষ ডায়েটের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ।
১৯৫০ সালে মিস্টার হারকিউলিস খেতাব জেতেন তিনি। তাঁর উচ্চতা দেখে তাঁকে খেতাব দেওয়া হয় পকেট হারকাউলিস।
১৯৫১ সালে প্রথমবার বিশ্বশ্রীর মঞ্চে দ্বিতীয় স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল মনোহরকে। ঠিক পরের বছর ৩৯ বছর বয়সে স্বাধীন ভারতের প্রথম বিশ্বশ্রী খেতাব জেতেন তিনি।
১৯৫৫ ও ১৯৬০ এর মিস্টার ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অধিকার করেন।
১৯৬০ সাল থেকে তিনি বডি বিল্ডিং-এর উপর বিভিন্ন প্রদর্শনী করেন। তাঁর শেষ প্রদর্শনী ছিল ২০০৩ সালে। তখন তাঁর বয়স ৯০ বছর।
ঢাকায় থাকাকালীন ফিজিক অ্যান্ড ম্যাজিক নামে একটি প্রদর্শনীতে বিশ্বখ্যাত জাদুকর পিসি সরকারের সঙ্গে শারীরিক কৌশল প্রদর্শন করে সুখ্যাতি অর্জন করেন। দাঁত দিয়ে স্টিলের রড বাঁকানো, গলা দিয়ে বল্লমের ফলা বাঁকিয়ে দেওয়া ইত্যাদি কাণ্ড দেখে দর্শকদের মধ্যে হুলস্থুল পড়ে যায়।
২০১৬ সালের ৫ জুন ১০৪ বছর বয়সে কলকাতার বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মনোহর।