একরাশ অভাব-অভিযেগ নিয়ে আচমকাই সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন যাদবপুরের সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিমি চক্রবর্তীর ইস্তফা গ্রহণ করেননি। মিমির তরফ থেকে অভিযোগ উঠেছিল যে সাংসদ হিসাবে কাজ করার সময় তাঁকে বহু বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। আর এরই মাঝে অভিনেত্রীর সমাজসেবার বেশ কিছু তথ্য সামনে এল।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের যক্ষ্মা মুক্তি কর্মসূচিতে তিনটে পুরস্কার পেয়েছে বাংলা। জেলাস্তরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সবচেয়ে বেশি যক্ষ্মা রোগীর নাম নথিভুক্তকরণে দেশে দ্বিতীয়, সামগ্রিকভাবে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে যক্ষ্মা নথিভুক্তকরণে দেশে তৃতীয় এবং বেসরকারি যক্ষ্মা রোগীদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সুনির্দিষ্ট ওষুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে দেশে সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা। আর এখানেই জড়িয়ে গিয়েছে মিমি চক্রবর্তীর নাম।
আসলে নিক্ষয় মিত্র নামে একটি কর্মসূচি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রাজ্যে, যেখানে কোনও সাধারণ মানুষ বা সংস্থা ৬ মাস থেকে ৩ বছর সময় পর্যন্ত যক্ষ্মা রোগীদের ওষুধ চলাকালীন পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। আর স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, এই কর্মসূচিতে রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যক্ষ্মা রোগীকে দত্তক নিয়েছেন সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। দক্ষিণ ২৪ পরগণার ২৫জন টিবি রোগীর ওষুধ চলাকালীন ৬-৭ মাসের যাবতীয় খাওয়াদাওয়ার খরচ বহন করছেন তিনি। ২০২২ সাল থেকে এই কাজে যুক্ত হন সাংসদ-অভিনেত্রী। সেই বছর মিমি ৫ জন যক্ষ্মা রোগীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর সেটা বাড়তে বাড়তে ২৫-এ গিয়ে দাঁড়ায়।
মিমি নিজেও এই সম্মানে বেশ গর্বিত। মিমি এই খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'আমি এটা ঘোষণা করতে পারি খুবই খুশি যে জাতীয় যক্ষ্মা নিরাময় অনুষ্ঠানে আমার রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ তিনটে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। রাজ্যের দুটি হেলথ সেন্টার, যার সঙ্গে আমি যুক্ত, সেখান থেকে কিছু রোগীকে দত্তক নিতে পেরে আমি খুবই গর্বিত। আমি সবাইকে অনুরোধ করতে চাইছি যে যাঁদের পক্ষে সম্ভব তাঁরা এগিয়ে আসুন আর এই উদ্যোগে সামিল হয়ে ভারতকে যক্ষ্মামুক্ত করুন। আপনাদের সকলের দয়ায় এবং আশীর্বাদে, আমি এই কাজটি করতে সক্ষম হয়েছি। আজ আমার সকল দত্তক রোগীরা সুস্থ আছে। আমি আগামীদিনেও এই প্রকল্প চালিয়ে যাব, আমার অনুরোধ আপনারাও সকলে এগিয়ে আসুন এই কাজে যোগ দিন, আমরা সকলে মিলে দেশটাকে "যক্ষ্মা মুক্ত" দেশ গড়ে তুলি'।
জানা গিয়েছে, মিমির এক ঘনিষ্ঠ কেউ এই যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পরই গোটা বিষয়টি অভিনেত্রীর মনে দাগ কেটে যায়। এরপরই তিনি এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের আগে মিমির সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়। যদিও যাদবপুর কেন্দ্রের মানুষদের অভিযোগ ছিল যে সাংসদ হিসাবে মিমি নাকি কোনও কাজই করেননি। দীর্ঘদিন ধরেই এই অভিযোগ শোনা যেত তাঁর বিরুদ্ধে। সেটারই পাল্টা অভিযোগ পেশ করেন মিমি।