প্রথম খবরটা দেন সহ অভিনেত্রী তথা ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিকের কথা মন্তব্যের জেরে ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের পুরস্কার ফেরাতে চাইছেন দুই নাট্যব্যক্তিত্ব। এবার সেই তালিকায় যোগ হল অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তীর নাম। স্বস্তিকা তাঁর ফেসবুক পোস্টেই প্রথম জানান যে সুদীপ্তা চক্রবর্তীও সরকারের থেকে পাওয়া পুরস্কার ফেরত দিচ্ছেন। এরপরই bangla.aajtak.in-এর পক্ষ থেকে খবরটা নিশ্চিত করার জন্য যোগাযোগ করা হয় সুদীপ্তা চক্রবর্তীর সঙ্গে।
সুদীপ্তা বলেন, 'হ্যাঁ ফিরিয়ে দিচ্ছি। অনেকদিন অভিনয় করছি, অনেক বছর ধরে। কোনওদিন কাউকে তেল মেরে, তাবেদারি করে, খুশি করে পুরস্কার পাওয়ার চেষ্টাও করিনি, পাইওনি। সেরকম কোনও অনুষ্ঠান দেখলে সেই অনুষ্ঠানগুলোতেই যাইনি। আজ পর্যন্ত যে কটা পুরস্কার পেয়েছি মনে হয়েছিল নিজের যোগ্যতাতেই পেয়েছি। সেরকমই এক পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গ সরকার দিয়েছিলেন আমাকে ২০১৩ সালের ৪ জুলাই, চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকেই আমি পুরস্কার নিয়েছিলাম নজরুল মঞ্চে সম্ভবত। আর সেটা এতদিন আমার দেওয়ালেই টাঙানো ছিল আর যেটা দেখলে আমি খুব গর্ব অনুভব করতাম।' এরপরই পুরস্কার ফেরানোর কারণ হিসাবে অভিনেত্রী বলেন, 'কিন্তু পরশু রাতে যখন দেখলাম সরকারের এক বিধায়ক (কাঞ্চন মল্লিক), যারা রাস্তায় আছি তাঁরা পুরস্কার ফেরত দেব কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, খুব অপমানে লেগেছে ভাই। রাস্তায় তো থাকবই, এত অন্যায় তো মুখ বুজে, মানে মেনেই নিয়েছি আমরা, তাই আজ এই পরিস্থিতি। আর তো মেনে নেব না এবং আমরা আইনত ও সামাজিক দুইভাবেই বিচার চাইছি। আর তার জন্য যদি পুরস্কার ফেরত দিতে হয় নিয়ে নিন, আমার দর্শকেরা কাজ পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য কাজ করব। পরিচালক-প্রযোজকেরা আমায় যোগ্য মনে করলে ডাকবেন, যদি কাজ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পরের প্রজন্মকে কাজ শেখাচ্ছি এইসব কিছু না কিছু করে ঠিক চালিয়ে নেব।'
কাঞ্চন মল্লিক আর সুদীপ্তা বহুদিনের বন্ধু। তাই অভিনেতা কাঞ্চনের থেকে কেউই এই মন্তব্য আশা করেননি বলে জানান সুদীপ্তা। তিনি বলেন, 'অভিনেতা কাঞ্চনকে চিনতাম, বন্ধু কাঞ্চনকে চিনতাম, কিন্তু এই রাজনীতিবিদ কাঞ্চনকে খুব একটা চিনি না, আমার দেখা হয়নি। বিধায়ক হওয়ার পর তো মনে হয় এক-দুবারই দেখা হয়েছে। এই কাঞ্চনকে আমি ঠিক চিনি না।' কাঞ্চন মল্লিককে কোনও পরামর্শ? অভিনেত্রীর কথায়, 'না, না আমি কোনও পরামর্শ দেব না, পাগল নাকি। আমি অনেক ছোটখাটো মানুষ, উনি অনেক বড়, বিশাল ব্যাপার।' এরপরই সুদীপ্তা তাঁর ফেসবুক পেজেও শেয়ার করে পুরস্কার ফেরত দেওয়ার পোস্ট। যেখানে তিনি লেখেন, 'আপোস করিনি। আপোস করব না। ভেবেছিলাম সরকারি পুরস্কার আমার যোগ্যতার জন্য দেওয়া হয়েছিল। পরশু রাতে মাননীয় বিধায়ক যখন দাবি জানালেন রাস্তায় নামলে পুরস্কার ফেরত দেওয়ার, সিদ্ধান্ত তখনই নিয়ে নিয়েছিলাম। ইমেল ঠিকানা পেয়ে চিঠিটা পাঠাতে একটু দেরি হলো। সুদীপ্তা আরও বলেন, আমি রাস্তায় প্রতিবাদ করতে নামব, বিচারের দাবি চাইব, আইনত ও সামাজিকভাবে। নিজে থেকে জানাতে চাইনি কাউকে। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় সাহস দিলো।'
এই পোস্টের সঙ্গে সুদীপ্তা রাজ্য সরকারের তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগে পাঠানো চিঠির স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। প্রসঙ্গত, এর আগেও কাঞ্চনের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সুদীপ্তা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে ত্যাগ করার কথাও জানিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, প্রতিবাদীদের খোঁচা দিয়ে পুরস্কার ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কাঞ্চন মল্লিক। তৃণমূলের বিধায়ক হলেও কাঞ্চন একজন অভিনেতাও। রবিবার বিতর্কিত মন্তব্য করার পর সোমবার তিনি ক্ষমা চেয়েছেন বটে, তবে তাতে অপমানিত বোধ করছেন সুদীপ্তা সহ আরও অনেকে। আর যে কারণে এই পুরস্কার ফেরত দিতে চাইছেন সকলে।