দুজনেই সঙ্গীত জগতের লোক। একজন উঠতি গায়িকা আর অন্যজনের জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী। রিয়্যালিটি শো থেকে উঠে আসা পৌষালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হল। গত চারবছর ধরে তিনি চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন অরিজিৎ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করার। অবশেষে সেই সময়টি এল। খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও অরিজিৎ-এর সঙ্গে তাঁর জিয়াগঞ্জের বাড়িতে দেখা করতে যান পৌষালী। সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়েই গায়িকা জানিয়েছেন যে অরিজিৎ সিং নাকি একটা বিষয়ে তাঁর কাছে সাহায্যও চেয়েছেন।
bangla.aajtak.in-এর সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় পৌষালী জানান যে বহরমপুরে তাঁর শো রয়েছে জানতে পেরেই গত একমাস ধরে তিনি অরিজিৎ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করবেন বলে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ তিনি জানতেন যে বহরমপুর থেকে জিয়াগঞ্জের দুরত্ব খুব বেশি নয়। অবশেষে সুযোগ পেলেন তিনি। পৌষালী ও তাঁর টিমকে পাঁচ মিনিটের জন্য সময় দেওয়া হয়েছিল। পৌষালী বলেন, 'অরিজিৎ সিংয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতা অসম্ভব ভাল। প্রথম প্রথম ভাবতাম একটা মানুষকে নিয়ে এত উচ্ছাস-উত্তেজনা কেন? কাছে গিয়ে বুঝতে পারলাম, তাঁকে নিয়ে এত আদিখ্যেতা সেটা করা স্বাভাবিক। একেবারে মাটির মানুষ অরিজিৎ সিং। এত আস্তে আস্তে কথা বলে, ধীরস্থির, জেনে গান করেন, আর একটা জিনিস খুব ভাল লাগল যে তাঁর রিসার্চ ওয়ার্ক। আমাদের বলা হয়েছিল আমাদের টিমকে উনি পাঁচ মিনিট সময় দেবে, এরপর ওঁনার একটা রেকর্ডিংও ছিল। আমরা গিয়ে দশ মিনিট বসেও ছিলাম। ওই দশ মিনিটের মধ্যে গরম রসগোল্লাও খেয়ে ফেলেছি। আমি ভয়ে খেতে পারি নি, যদি রসগোল্লার রস আটকে যায় গলায়, কথা বলতে না পারি। একটা ছোট রুমে বসেছিলাম, ঘরটায় কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছিল, অরিজিং সিংয়ের স্ত্রী কোয়েল দি হাত ধরে ঘরে ঢুকিয়েছে। আমরা সবাই অবাক।'
অরিজিৎ সিংয়ের জন্য দশ মিনিট অপেক্ষা করেন পৌষালী। ঘরে ঢুকেই গায়ক পৌষালীকে সরি বলেন তাঁকে দশ মিনিট বসিয়ে রাখার জন্য। সেখান থেকেই কথাবার্তা শুরু হয় পৌষালী ও অরিজিৎ-এর। পৌষালীকে অরিজিৎ জিজ্ঞাসা করেন যে তিনি কী ধরনের গান করছেন, কেমন কাজ করছেন। তাঁকে সুপরামর্শ দেন অরিজিৎ। অরিজিৎ সিং নাকি তাঁর দুই ছেলেকে শান্তিনিকেতনে ভর্তি করার জন্য পৌষালীর সাহায্য চেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পৌষালী বলেন, 'অরিজিৎ সিং কথায় কথায় বলেন যে ছেলেদেরকে ইচ্ছা ভাল জায়গায় পড়ানোর। আমায় এরপর জিজ্ঞাসা করেন যে আমি কথায় পড়াশোনা করেছি। তো আমি বলি শান্তিনিকেতন থেকে। এটা শুনে উনি খুব খুশি হন, বলেন শান্তিনিকেতন, এটা শোনার পরই সুন্দর হাসি ফুটে উঠে মুখে। উনি বলেন রবীন্দ্রনাথের জায়গা, এরপর জিজ্ঞাসা করেন যে ওখানে আমার বাড়ি কিনা। তখন আমি বলি যে আমি ওখানে আশ্রমে থেকে পড়াশোনা করেছি। এরপর অরিজিৎ সিং আমাকে বলেন যে যদি কখনও তাঁর দুই ছেলেকে শান্তিনিকেতনে পড়ানোর কথা ভাবেন তাহলে আমি কী সাহায্য করব। আমি বলি একশোবার করব।'
পৌষালীর কথায়, অরিজিৎ-এর পা সত্যিই মাটিতে আসে। পরিবারের জন্য জিয়াগঞ্জ ছেড়ে যাবেন না অরিজিৎ, তাও জানান পৌষালীকে। গায়িকা যেহেতু বাংলার মাটির কাজ নিয়ে কাজ করেন, তাই অরিজিৎ সিং কৌতুহলবশত তাঁর কাছ থেকে তাঁর সব কাজের পিডিএফও চেয়েছেন। পৌষালী নিয়ম করে তা পাঠাচ্ছেনও। অরিজিৎ সিং-র সঙ্গে সাক্ষাৎ করার স্বপ্ন পূরণ হতে যে বেশ আনন্দিন পৌষালী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলার সেরা গায়িকার তালিকায় স্থান পেয়েছে পৌষালী। রিয়েলিটি শো-র মঞ্চ থেকে সে খ্যাতি পায়।
কিছুদিনের মধ্যে পৌষালীর রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম মুক্তি পাবে। হারানো মাটির টান নামে একটা কাজ করছেন তিনি। যেখানে উঠে আসবে মনসা মঙ্গল, ঘেটু গানের মতো মাটির গানগুলি। আর একটা সুন্দর কাজ করার চেষ্টা করছেন তা হল সাংবাদিকদের সফর নিয়ে তাঁর পরবর্তী ইউটিউব সফর। যা খুব শীঘ্রই পৌষালীর ইউটিউবে দেখা যাবে। সব মিলিয়ে বর্তমানে জমিয়ে কাজ করে চলেছেন গায়িকা।