রবিবার সকালে ঠাকুরপুকুর এলাকার ব্যস্ত বাজারে মত্ত পরিচালকের গাড়ির ধাক্কায় জখম হন ৬ জন। পরে হাসপাতালে মৃত্যুও হয় একজনের। গ্রেফতার হন ছোটপর্দার পরিচালক সিদ্ধান্ত দাস ওরফে ভিক্টো। সোমবার আদালতে ভিক্টোকে তোলা হলে আদালত তাকে ৩ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। পরিচালকের সঙ্গে থাকা বেসরকারি চ্যানেলের সহযোগী প্রযোজক শ্রিয়া বসুও ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। এই ঘটনায় টলিপাড়া উত্তপ্ত। মদ খেয়ে গাড়ি চালানো দায়িত্বজ্ঞানহীন নাগরিকের কাজ, প্রশ্ন তুলছেন সবাই। এরই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, শনিবার রাতে পরিচালকের সঙ্গে পার্টি করেছেন তিন জন অভিনেতা। তাঁরা সকলেই নিজের মতো করে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন কী করে। ঠাকুরপুকুরের ঘটনা নিয়ে তীব্র নিন্দায় সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন অনেক তারকাই।
স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়
ঠাকুরপুকুর দুর্ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন স্বস্তিকা। এমনিই নৈরাজ্য। তার মধ্যে মদ খেয়ে এই ভাবে এলোপাথাড়ি গাড়ি চালিয়ে লোককে মেরে ফেললেও যদি কোনও শাস্তি না হয় এবং রাতারাতি বেল পেয়ে তারা যে যার বাড়ি চলে গিয়ে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে তা হলে আর আইন বা ট্র্যাফিক আইনের কোনও দরকার নেই। যে যা ইচ্ছে তাই করবে, গাড়ি চাপা দেবে, খুন করবে, রেপ করবে, তার পর কিছুই হবে না!স্বস্তিকা জানতে চেয়েছেন, তা হলে এত মারাত্মক একটা ঘটনা ঘটার পরে সকলে কী করে জামিন পেয়ে গেলেন? যে অভিনেত্রী বাজার থেকে পালালেন তাঁকে নাকি ধরাই হয়নি! তিনি কে? তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হল কেন? বেসামাল অবস্থায় ‘নো এন্ট্রি’ রাস্তায় ঢুকে পড়ে ছয় জনকে জখম করলেন কেউ। তাঁদের এক জন মৃত। এই একজনের মৃত্যুটা কি ইয়ার্কি?
রাহুল মুখোপাধ্যায়
অভিনেতা রাহুল মুখোপাধ্যায় তাঁর পোস্টে অভিনেত্রী ঋ সহ অন্য অভিনেতাদের কটাক্ষ করেছেন। অভিনেতা তাঁর পোস্টে লিখেছেন, বাহ্ কি সুন্দর না?মানসিক ট্রমা?আরে তোরা এতো বড় বড় কথা বলিস সামান্য নাগরিক ধারণা নেই একজন মাতালের স্টিয়ারিং এ বসবো না?যার বাড়িতে শেষে মিটিং করে মদ খাওয়া হয় তার দায় নেই এই মাতালদের বাইরে ছাড়ার? গাড়ি রাখতে পারো আর পার্টির দিন ড্রাইভার রাখতে পারো না?এদের সবরকম কার্ড কাজের অধিকার নিয়ে নেওয়া হোক...আর আইনের সব রাস্তা যেন খোলা থাকে শাস্তি দেওয়ার।
ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়
বড় এবং ছোট দুই পর্দাতেই সমানভাবে অভিনয় করেন ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। তিনিও ঠাকুরপুকুরের ঘটনায় রীতিমতো বিরক্ত। ভাস্বর লেখেন, কি বলব জানি না, তবে এটুকু বলতে পারি, ইন্ডাস্ট্রিকে তো রোজ খুব কাছ থেকে দেখছি, নেশার কবলে চলে যাচ্ছে।
রূপাঞ্জনা মিত্র
বরাবরই সত্যি কথা বলতে ভালোবাসেন রূপাঞ্জনা মিত্র। টিভি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বহু বছর ধরেই যুক্ত তিনি। ঠাকুরপুকুর কাণ্ড নিয়ে নিজের ক্ষোভ উগরে দিলেন রূপাঞ্জনা। তাঁর কটাক্ষ ঋ সেনকে নিয়ে। কারণ পরিচালক ভিক্টোর গাড়িতে ওইদিন ঋ-ও ছিলেন। রূপাঞ্জনা লেখেন, গাড়িতে আরও দুজন ছিল, একজন ক্যামেরা ম্যান আর একজন অভিনেত্রী। তারা কি ভিক্টোর রাশ ড্রাইভিং দেখে গাড়ি থেকে ঝাঁপিয়েছিল? যারা পালাতে পারল তারা গণপিটুনির হাত থেকে বেঁচে গেল।
ঋদ্ধি সেন
রাজ্যে হওয়া যে কোনও ঘটনা নিয়ে সব সময়ই সরব হয়ে থাকেন অভিনেতা ঋদ্ধি সেন। ঠাকুরপুকুরের ঘটনা নিয়ে অন্য তারকাদের মতো ঋদ্ধিও খুব বিরক্ত। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে গাজায় হওয়া হত্যালীলাকে মিশিয়ে একাকার করেছেন। ঋদ্ধি লেখেন, স্রেফ একটা সিরিয়ালের TRP বাড়ার জন্য কয়েকজন মানুষের ফুর্তির পরিণতি ? একজন মানুষ সকালবেলা সংসারের জন্য বাজার করতে গিয়ে প্রাণ হারালেন। বোমা,গুলি,রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সংঘর্ষ, অতিমারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা হার্ট অ্যাটাক নয়,এক দল মানুষের উল্লাসের জন্য। আকণ্ঠ মদ্যপান করে একজন একজন গাড়ির স্টিয়ারিং ধরলেন,আর কিছু লোক সেটা জেনেও গাড়িতে উঠতে রাজি হলেন l তার পর একজন ধরা পড়লো,বাকিরা বেল পেয়ে গেলো।
সুদীপ্তা চক্রবর্তী
ঠাকুরপুকুরের ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হয়েছেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তিনি তাঁর পোস্টে জানিয়ে দেন যে এই ভিক্টো নামের পরিচালককে তিনি চেনেন না। সুদীপ্তা চক্রবর্তী লেখেন, খুনের দায়ে অভিযুক্ত এই মদ্যপ গাড়াচালক পরিচালককে আমি চিনি না। আজকের আগে কোনদিন নামও শুনিনি। কিন্তু ঘটনাটা সম্পর্কে জানার পর থেকে গা রি রি করছে। লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে ভেবে যে ইনি আমারই কর্মক্ষেত্রের আরেক কর্মী। নেশায় প্রায় অবচেতন যে মেয়েটি ওই গাড়িতেই ছিলেন, তার মুখ চিনি। লজ্জা করলো দেখে। খুব লজ্জা করলো। অসহায় লাগছে। সমস্ত অন্যায়কারী ও তার সহযোগীরা চরম শাস্তি পাক। যার গেলো, যারা গেলো, তারা সঠিক বিচার পাক।