শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে নক্ষত্রপতন। প্রয়াত ওস্তাদ রশিদ খান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর। একমাসের বেশি সময় ধরেই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রশিদ খান। মঙ্গলবার সঙ্গীতশিল্পীর অবস্থার অনতি হওয়ার কারণে তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। বিগত কয়েকমাস ধরেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী রশিদ খান। জানা গিয়েছিল, অতীতে তাঁর প্রস্টেটে ক্যানসার হয়েছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। তার মধ্যেই তাঁর মস্তিষ্কে একাধিক বার স্ট্রোক হয়। এর পরই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। চিরতরে হারিয়ে গেলেন দরাজ কন্ঠের শিল্পী রশিদ খান।
হিন্দুস্তানী সঙ্গীত ঘরানার এক অন্যতম শিল্পী ছিলেন রশিদ খান। তাঁর কন্ঠে ক্ল্যাসিকাল গান এক অন্য মাত্রা পেত। আন্তর্জাতিক স্তরেও রশিদ খান তাঁর ছাপ ফেলেছেন। উত্তরপ্রদেশের বাদায়ুনে জন্মগ্রহণ করেন রশিদ খান। তিনি তাঁর মামা ওস্তাদ নিসার হোসেন খানের কাছ থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ওস্তাদ গোলাম মুস্তফা খানের ভাগ্নে। ছোটবেলা থেকেই তাঁর গানের প্রতি টান ছিল। তাঁর মামাই এই প্রতিভা রশিদের মধ্যে প্রথম লক্ষ্য করেন এবং মুম্বইতে প্রশিক্ষণের জন্য নিয়ে যান। রশিদ খানকে খুবই কঠোর গানের প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল।
রশিদ খান মাত্র ১১ বছর বয়সে মঞ্চে প্রথম পারফর্ম করেছিলেন। এরপর ১৯৭৮ সালে তিনি দিল্লিতে একটি আইটিসি কনসার্টে পারফর্ম করেন। এরপর ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে, যখন নিসার হুসেন খান আইটিসি সঙ্গীত গবেষণা একাডেমি (এসআরএ), কলকাতায় চলে যান , রশিদ খানও ১৪ বছর বয়সে একাডেমিতে যোগ দেন। ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিব প্রতিষ্ঠিত রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী রশিদ খান। মূলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিল্পী রশিদ খান। তবে বলিউড, টলিউডেও প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন এই শিল্পী। ‘যব উই মেট’, ‘কিসনা’, ‘হাম দিল দে চুকে সনম’, ‘মাই নেম ইজ খান’, ‘রাজ ৩’-র মতো বলিউড ছবিতে যেমন তাঁর গান রয়েছে, তেমনই ‘মিতিন মাসি’, ‘বাপি বাড়ি যা’, ‘কাদম্বরী’-র মতো বাংলা ছবিতেও রয়েছে রশিদের প্রতিভার সাক্ষর।
২০২২ সালে রশিদ খান পদ্মভূষণ ও ২০০৬ সালে শিল্পী পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন। এছাড়াও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেই শিল্পীকে সঙ্গীত মহাসম্মান ও বঙ্গবিভূষণ সম্মান দেওয়া হয়। রশিদ খান তাঁর খাঁটি হিন্দুস্তানী ঘরানার সঙ্গীতের সঙ্গে নানান ধরনের সঙ্গীতের মেলবন্ধন ঘটিয়ে গান গেয়েছেন। বলিউড-টলিউডের পাশাপাশি রশিদ খানের ধ্রুপদ সঙ্গীত, রাগ সঙ্গীতও দারুণভাবে জনপ্রিয় শ্রোতাদের কাছে। রশিদ খানের গাওয়া ছায়ানট রাগের ‘ঝনক ঝনক ঝন নন নন নন বাজে বিছুয়া’ বন্দিশটি আজও সকলের কাছে চিরস্মরণীয়।