জামাইষষ্ঠী বলে কথা। ভোর থেকেই বাজারে-দোকানে জামাই আদরের শেষ মুহূর্তের তোড়জোড় করছেন শ্বশুরমশাই। আর বাড়িতে রান্নাঘরে সাতপদ রাঁধতে ব্যস্ত শাশুড়ি। মেয়ের কল্যাণ ও সুখের সংসারের জন্য সারাদিন শাশুড়ি মা উপোস করে জামাইয়ে খাওয়ানোর রীতি বহু বছর আগে থেকেই প্রচলিত। যদিও এখন বাড়িতে এই সব না করে রেস্তোরাঁ বা ফুড অ্যাপে খাবার আনিয়ে নেন। আবার কিছু কিছু বাড়িতে জামাইদের নিজের হাতে রান্না করে না খাওয়ালে ঠিক মন ভরে না। সেরকমই এক পরিবার হল দেবাশিষ কুমারের। মেয়ে দেবলীনার বিয়ে হয়েছে উত্তম কুমারের পরিবারে। জামাই গৌরবকে তাই প্রত্যেক বছরই আদর-যত্ন করে খাওয়ানো হয়। ব্যতিক্রম নয় এই বছরও। আর জামাই গৌরবের আয়োজনে কী কী থাকছে তা bangla.aajtak.in-কে জানালেন দেবলীনা।
কত নম্বর জামাইষষ্ঠী? দেবলীনা বলেন, 'এটা ৪ বছরের জামাইষষ্ঠী।' জানালেন তাঁর মা-বাবার বাড়িতে কেমন করে এইদিনটা পালন হয়। দেবলীনা বলেন, সকালেই আমি ও গৌরব মায়ের বাড়িতে চলে যাই। এরপর ধান-দুর্বা এইসব দিয়ে আশীর্বাদ করা হয় গৌরবকে। পাঁচ-সাত রকমের ফল ও মিষ্টি খেতে দেওয়া হয় ওকে। মা-বাবা মিলে হাতপাখা দিয়ে হাওয়া করে, যেটাতে গৌরব প্রতিবছরই লজ্জা পায়। বিশাল আকারের সেই পাখা এ বছরও কেনা হয়েছে। এই পাখা করাটা মা করতে খুব ভালোবাসে আর যতবারই গৌরব বলে করো না করো না, ততবারই মা করে, এটা নিয়ে একটা খুনসুটি হয়। এরপর আমরা একটু বিশ্রাম নিই, ছবি তুলি এই আর কী। তারপর লাঞ্চ হয়, তারপর দুপুরবেলা আমরা বিশাল ঘুমিয়ে বিকেলে দিদার বাড়িতে যাই বাবার জামাইষষ্ঠীতে। আর গৌরবও যেহেতু নাত জামাই, তাই আমরা সকলে দিদার বাড়িতে যাই। এই দিনটা আসলে পরিবারের সঙ্গে কাটানো।'
গৌরবের পাতে এই বছর কী কী থাকছে? দেবলীনা বলেন, 'কী কী মাছ আনা হচ্ছে আমি ঠিক জানি না, তবে শুনেছি যা ৭ থেকে ৮ রকমের মাছ আছে। যার মধ্যে পোনা আছে, ভেটকি আছে, পাবদা ও চিংড়ি আছে, এই মাছগুলো সবই গৌরবের প্রিয় তাই এগুলো আছে। ইলিশ থাকবে কিনা জানি না, তবে কই মাছ থাকলেও থাকতে পারে, কারণ গতবারও মা কই করেছিল গৌরবের খুব ভাল লেগেছিল। মোটামুটি ৭ থেকে ৮ রকমের মাছ গৌরবের পাতে থাকছে। এছাড়াও ৭ থেকে ৯ রকমের ভাজা, আর মাংসটা সকালে মা করে না কারণ সেটা রাতে দিদার বাড়িতে গিয়ে খাওয়া হয়। দুপুরের খাওয়া-দাওয়াটা পুরোটাই মাছের ওপর থাকে। মিষ্টির মধ্যে থাকছে দই ও রসের কোনও মিষ্টি।'
দেবলীনা ও গৌরব দুজনেই ভীষণভাবে ফিটনেস ফ্রিক। যা তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারলেই দেখা যাবে। জামাইষষ্ঠীর এই আদর কীভাবে সামলায় গৌরব? বিধায়ক-কন্যা এ বিষয়ে বলেন, 'আমরা দুজনেই খেতে খুব ভালোবাসি। আমি তো রোজই খাই, পরিমাণে কম খেলেও বাইরের খাবার রোজই মোটামুটি খাওয়া হয়। আর গৌরব এমনি সময়ে ভীষণ ব্যালান্স, কিন্তু যখন অনুষ্ঠান হয়, তখন গৌরব চুটিয়ে খায় আর ওকে খাইয়ে খুব মজা। গৌরব সব খায়, আমার মাকে কখনও অভিযোগ করার সুযোগ দেয় না। একটা দিন জানে যে বেশি খাওয়া-দাওয়া হবে, যদিও প্রথম বছর এত খাবার দেখে একটু সমস্যা হয়েছিল। এখন বুঝে গেছে ব্যপারটা, তাই সকাল থেকে কিছু খায় না।'
আর রাতের আয়োজনে কী কী থাকছে? দেবলীনা বলেন, 'দিদার বাড়িতে রাতের খাবারে থাকছে লুচি-মাংস। গৌরব ও বাবা (দেবাশিষ কুমার) দুজনেই লুচি-মাংস খেতে খুব পছন্দ করে। তাই রাতে দিদার বাড়ির মেনু লুচি-মাংস, ফিসফ্রাই ও রাবড়ি। দুই জামাইয়ের রাবড়িটাও খুব প্রিয়। রাতের খাবারটা খুব ঝাড়াঝাপ্টা কিন্তু জম্পেশ।' শাড়ি পরতে ভালোবাসেন দেবলীনা তাই এদিনও অবশ্যই শাড়ি পরবেন আর গৌরবের জামাইষষ্ঠী স্পেশাল ধুতি-পাঞ্জাবী, যেটা মা পাঠিয়েছে তাঁর জন্য ওটা পরেই যাবেন অভিনেতা। শাশুড়িকে কী দিচ্ছে জামাই গৌরব? দেবলীনা বলেন, 'গৌরব মা, দিদার জন্য শাড়ি কিনেছে। আর বাবার জন্য রঙিন শার্ট, যেটা একমাত্র গৌরবই দিতে পারে।' তবে শুধু একা গৌরব নন, দেবলীনাও প্রত্যেকটি খাবার চুটিয়ে খান। আর চেষ্টা করেন জামাইষষ্ঠীর দিনটা কোনও কাজ না রাখতে, এটা একেবারেই পরিবারের জন্য তোলা থাকে।