
‘সেক্যুলার গান’ বলতে ঠিক কী বোঝায়, লগ্নজিতা চক্রবর্তীর গান ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কের আবহে এই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দিলেন বর্ষীয়ান শিল্পী কবীর সুমন। তাঁর কথায়, সেক্যুলার মানেই ধর্মনিরপেক্ষতা, আর সেক্যুলার গান বলতে সেই গানকেই বোঝায়, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনা প্রকাশ পায়।
কবীর সুমন বলেন, 'সেক্যুলার মানে ধর্মনিরপেক্ষ। সেক্যুলার গান মানে এমন গান, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকবে। কিন্তু আমিও তো কালীকে নিয়ে গান গাই, খোদাকে নিয়েও গান গাই, আগমনী গানও গাই। সেগুলো কি ধর্মনিরপেক্ষ নয়?' তাঁর মতে, কোনও গানে দেবদেবীর উল্লেখ থাকলেই তা অসাম্প্রদায়িক বা অসেক্যুলার হয়ে যায় না।
তিনি আরও উদাহরণ টেনে বলেন, 'কাজী নজরুল ইসলাম কালী নিয়ে গান লিখেছেন, রামকে নিয়েও গান লিখেছেন। সেগুলো কি সেক্যুলার নয়? কোনও অনুষ্ঠানে কেউ দুর্গাকে নিয়ে গান গাইতে পারেন, আবার খোদাকে নিয়েও গান গাইতে পারেন, তাতেই তো ধর্মনিরপেক্ষতার সৌন্দর্য।'
উল্লেখ্য, শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর সাউথ পয়েন্ট পাবলিক স্কুলে লগ্নজিতা চক্রবর্তীর একটি গানের অনুষ্ঠান চলাকালীন বিতর্কের সূত্রপাত। অভিযোগ, কয়েকটি গান গাওয়ার পর তিনি যখন ‘দেবী চৌধুরানী’ ছবির জনপ্রিয় গান ‘জাগো মা’ গাইতে শুরু করেন, তখন স্কুলের অন্যতম মালিক মেহবুব মালিক আপত্তি জানান। তাঁর দাবি ছিল, অনুষ্ঠানে কেবল ‘সেক্যুলার গান’ গাওয়া হবে।
অভিযোগ অনুযায়ী, সেই সময় মেহবুব মালিক মঞ্চে উঠে শিল্পীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেন। ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। পরে লগ্নাজিতার পক্ষ থেকে ভগবানপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
অনুষ্ঠানের আয়োজক স্বার্থক ভট্টাচার্য অভিযোগ জানান, লগ্নজিতা চক্রবর্তী ৬-৭টি গান গাওয়ার পর ‘জাগো মা’ গানটি শুরু করেছিলেন। ঠিক সেই সময় স্কুলের মালিক মেহবুব মালিক মঞ্চে উঠে এসে বলেন, এসব গান চলবে না, সেক্যুলার গান চাই। ভরা মঞ্চে শিল্পীকে হেনস্তা করা হয়।
এই ঘটনার পরই ‘সেক্যুলার গান’ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কবীর সুমনের বক্তব্যে স্পষ্ট, ধর্মীয় ভাবনা থাকা মানেই কোনও গান অ-সেক্যুলার নয়, বরং সহাবস্থান আর বহুত্বের মধ্যেই ধর্মনিরপেক্ষতার আসল অর্থ লুকিয়ে আছে।