পান্নালাল ভট্টাচার্য শ্যামা সঙ্গীতের জগতে একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় গায়ক। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যও। কিন্ত কটাক্ষ শুরু হয়েছে অন্য এক ভট্টাচার্যকে নিয়ে। তাঁর আসল নাম কেদারনাথ ভট্টচার্য। 'বলিউডি' নাম কুমার শানু।
কিছুবছর ধরে অধিকাংশ মণ্ডপে বাজানো হচ্ছে কুমার শানুর গান। বহু মানুষ বিস্মিত। বাঙালির কালীপুজো মানে রক্তজবা আর পান্নালাল ভট্টাচার্যের গান। কয়েক যুগ ধরে এই ধারা চলে এসেছে। হঠাৎ সেই ধারার পরিবর্তন ঘটার কারণ নিয়ে কটাক্ষ করছেন অনেকেই। অনেকেই জানাচ্ছেন এই প্রজন্মের জন্য পান্নালাল ভট্টাচার্যের গানের থেকেও কুমার শানুর গান বেশি উপযুক্ত। বিষয়টিতে মতামত দিলেন বাংলার কিছু গুণী মানুষ।
গায়ক, গীতিকার, অভিনেতা শিলাজিৎ মজুমদার বললেন, 'সমস্যাটা কোথায়, কুমার শানুর গান লোকে যদি গ্রহণ করে আপত্তি করার তো কোনও কারণ দেখি না। উনি তো নামী গায়ক। আমার তো কোনও সমস্যা হচ্ছে না। মান্না দে-ও তো বলিউডের গায়ক ছিলেন। অগুন্তি হিন্দি সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন। বহু হিরোর ভয়েস ছিলেন। ওঁর শ্যামাসঙ্গীত তো মানুষ গ্রহণ করেছেন সাদরে। তাহলে শানুর বেলায় সমস্যা কেন। নতুকে কিছুকে সহজে নিতে বাঙালির একটু সমস্যা হয়। কিন্তু পাবলিক যেটা শুনতে পছন্দ করবে, তাতে কারও কিছু করার নেই। তবে কারও কারও খারাপ লাগতেই পারে। তবে আমার তো বেশ লাগছে। মন্দ কী।'
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বললেন, 'অনেকের হয়ত অভ্যেস হয়ে গেছে পান্নালাল, ধনঞ্জয়দের গলায় শুনে। অরিজিন্যাল শুনতে চায় মানুষ। এরা মহান মানুষ। এগুলোই বাঙালির ভালো লাগে। কুমার শানু গেয়েছেন, এতে দোষের কিছু নেই। কুমার শানুর গলাটা তো খুবই ভালো। আমার কোনও অসুবিধে নেই। যাদের ভালো লাগবে না, না শুনলেই তো পারেন। তবে কারও ভালো লাগছে না, জোর করে কেউ যদি শোনায় সেটা ভালো না। আমাদের আসলে একটা অভ্যেস হয়ে যায়। আমরা তুলনা করতে ভালোবাসি। এটা মানুষের মধ্যে থাকবেই।'
আজ, সোমবার কুমার শানুর জন্মদিন। তাঁর সঙ্গে bangla.aajtak.in-এর তরফে যোগযোগ করা হলে তাঁর ম্যানেজার দিলীপবাবু বললেন, 'দাদা আমেরেরিকার বাড়িতে যাচ্ছেন। প্লেনে আছেন। দাদার জনপ্রিয়তা আছে বলেই বহু মানুষ বহু কথা বলছেন। এরকম আগেও শানুদাকে নিয়ে হয়েছে। নতুন কিছু নয়। শানুদার জনপ্রিয়তা ছিল, আছে থাকবে।'
তবে একদম ভিন্ন মত পদ্মশ্রী প্রাপক শিক্ষক কাজী মাসুম আখতারের। তিনি বললেন, 'বাঙালির চেতনা একটু আলাদা। আমাদের রুচিবোধে এই গান নজরুল ইসলাম লিখেছেন। বাঙালির একটা মাইন্ডসেট রয়েছে। কাদের জন্য কোন গান, এটার একটা ভাগ রয়েছে। বাঙালির চেতনার বিবর্তন ঘটেছে। আমি মনে করি আমরা যখন শ্যামাসঙ্গীত শুনব, আমরা দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী গানই শুনব। শ্যামাসঙ্গীতের গায়কের গলায় যেন চটুলতা না থাকে। শ্যামাসঙ্গীত ফুর্তি করার জিনিস নয়। যেকারণেই কুমার শানুকে খুঁজে পাচ্ছে কিছু মানুষ।'