নব্বইয়ের দশকে বলিউডের বোল্ড অভিনেত্রী হিসাবে জনপ্রিয় ছিলেন মমতা কুলকার্নি। অভিনেত্রী হিসাবে তিনি যতটা পরিচিতি লাভ করেছেন তার চেয়েও বেশি তাঁকে নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। মাদকযোগেও নাম জড়িয়েছে মমতার। সেই অভিনেত্রী শুক্রবার মহাকুম্ভে গিয়ে সন্ন্যাস নিলেন। প্রয়াগরাজের কিন্নড় আখড়ায় এখন অভিনেত্রী মহামন্ডলেশ্বর। গ্ল্যামার দুনিয়া ত্যাগ করে মমতা এখন আধ্যাত্মিকতার পথকে বেছে নিয়েছেন। আর এরপর থেকেই সলমন-শাহরুখের অভিনেত্রীকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে যে হঠাৎ করে অভিনেত্রী মহামন্ডলেশ্বর কীভাবে হলেন? কারণ এটার জন্য প্রথমে দীক্ষা নিতে হয় আর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তপস্যায় মনোযোগ দিতে হয়। সংসারের সব মায়া ছাড়তে হয়। আখড়ার নিয়ম অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি মহামন্ডলেশ্বর হলে, তাঁকে সন্ন্যাসী হতে হবে।
অনেকে এটাও বলছেন যে মহামন্ডলেশ্বর হওয়ার জন্য সংসারের সব মোহ-মায়া ত্যাগ করার ভাবনা থাকতে হবে। পরিবারের সঙ্গে সব সম্পর্ক ঘুচিয়ে ফেলতে হবে এবং বেদ-পুরাণ পড়ার অভ্যাস গড়তে হবে। কিন্তু মমতা কুলকার্নির জীবন কিছুদিন আগে পর্যন্ত বিতর্কে ভরপুর ছিল।
ইন্ডাস্ট্রির খবর ২০১৩ সালে মমতা কুলকার্নি হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে ড্রাগ মাফিয়া ভিকি গোস্বামীর সঙ্গে দুবাইতে বিয়ে করে নিয়েছিলেন। দুবাইতে মাদক পাচার করার জন্য ১২ বছরের জেল হয়েছিল ভিকির। যদিও মমতা জানিয়েছিলেন যে এই অভিযোগ একেবারেই মিথ্যে। যদিও শোনা যায় যে ২০১৬ সালে মুম্বই পুলিশ মাদক পাচার কাণ্ডে জড়িত থাকা জন্য অভিনেচ্রীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল। মুম্বই পুলিশ জানিয়েছিল যে তারা ৮০ লক্ষ টাকার মাদক উদ্ধার করেছিল, যার সঙ্গে নাম জড়ায় যে সংস্থার যার ডিরেক্টর পদে ছিলেন মমতা। অভিনেত্রী নিজে এই বিষয়ে জানিয়েছিলেন যে তিনি ড্রাগ মাফিয়া ভিকি গোস্বামীর প্রেমে পড়েন এবং সেই সময় থেকে তিনি ভিকির সঙ্গেই থাকতেন। সময়টা ছিল ২০০০ থেকে ২০২৪।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছাড়ার আগেই মমতা সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল আন্ডারওয়ার্ল্ডের। শোনা যায় যে একটা সিনেমার জন্য তিনি আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীদের দিয়ে পরিচালককে ফোন করিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ১৯৯৩ সালে একটি ম্যাগাজিনের জন্য টপলেস ফটোশ্যুট করিয়েছিলেন, যেটা নিয়ে সেই সময় দেশজুড়ে আলোড়ন পড়ে যায়। আর এইসব কারণের জন্যই মমতা কুলকার্নি মহামন্ডলেশ্বর হওয়ায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
সনাতন ধর্মের ১৩টি আখড়া থেকে কিন্নর আখড়া একেবারে আলাদা, যেখানে সন্ন্যাসী হওয়ার পরও জাগতিক জীবন যাপন করা যায়। আর এটা একেবারেই বাধ্যতামূলক নয় যে মহামন্ডলেশ্বর হওয়ার পরও জাগতিক জীবন ছাড়তে হবে এবং পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। আর এই কারণের জন্যই মমতা কুলকার্নি এই কিন্নড় আখড়কে বেছে নিয়েছেন তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য। কারণ মহামন্ডলেশ্বর হওয়ার পরও তিনি সংসার জীবনে থাকতে পারবেন। তাঁকে কোনও কিছুই ত্যাগ করতে হবে না। সন্ন্যাস নেওয়ার ফলে নিয়মানুযায়ী বদলে গেল বলিউডের একসময়কার হিট নায়িকা মমতা কুলকার্নির পরিচয়ও। তাঁর নতুন নামকরণ করা হল মমতানন্দ গিরি।
এদিন মহাকুম্ভের কিন্নর আখড়া থেকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে সলমন-শাহরুখের করণ অর্জুন অভিনেত্রীকে দেখা গেল গেরুয়া বসনে। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। কপালে গেরুয়া তিলক। গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে নিজের পিণ্ডদান করেই তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেছেন বলে জানা গিয়েছে।