ইনস্টাগ্রাম বা অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে নিখুঁত পোস্ট, ট্রেন্ডিং রিলস, দুর্দান্ত ফ্যাশন, সব মিলিয়ে রাতারাতি না হলেও- কিছুটা পরিশ্রম করেই আজকের যুগে যে কোনও কেউ তারকা হয়ে উঠতে পারে। কাটাতে পারেন স্বপ্নের জীবন। ফলে এই ডিজিটাল যুগে, অনেকেই হতে চাইছেন ইনফ্লুয়েন্সার (Social Media Influencers)। চলছে লাইক- ভিউয়ের লড়াই। কোভিডের সময় থেকে ক্রমেই বাড়ছে এই ইনফ্লুয়েন্সারদের সংখ্যা। ফলে বাজার এখন আগের থেকে অনেক বেশি প্রতিযোগিতামূলক।
বর্তমানের সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার নামটি ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়। বহু মানুষ তাদের অনুসরণ করেন। শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও বর্তমান সময়ে, ইউটিউবার বা ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সারদের খুঁজে পাওয়া যায়। এই সকল ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের পেজ বা চ্যানেল মনিটাইজ করে বিপুল অর্থ উপার্জন করছেন।
আগে মূলত ইউটিউবাররা জনপ্রিয় হলেও, যত দিন যাচ্ছে বাড়ছে ইনস্টা ইনফ্লুয়েন্সারদের সংখ্যা। ২০২৩ শেষ হয়ে ২০২৪-এর কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। এক নজরে দেখা যাক, ২০২৩-এর কোন ইনফ্লুয়েন্সাররা বেশি লাইমলাইটে এসেছেন এবং তাঁদের ফলোয়ার্স সংখ্যা কত।
আরজে প্রিয়াঙ্কা ( প্রিয়াঙ্কা সরকার)
পেশায় রেডিও জকি। শিলিগুড়ির বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা সরকার ২০২৩-এ সোশ্যাল মিডিয়ায় সকলের প্রিয় হয়ে উঠেছেন। পূর্ববঙ্গীয় ভাষায় মজার মজার এবং প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কনটেন্ট বানিয়ে মুহূর্তে ভাইরাল হয় সে।
ইনস্টাগ্রাম: ৭ লক্ষ ৭২ হাজার
ফেসবুক: ২.৪ মিলিয়ন (অফিসিয়াল পেজে), ২ হাজার ১জন (অন্য আরেকটি পেজে)
ইউটিউব: ৭১২
নিরঞ্জন মন্ডল/ লাফ্টার সেন (Niranjan Mondal/ Laughter Sane)
'বাবেশ' কিংবা 'মিষ্টি বাপি'-র ব্যাপারে জানেন না, এই মুহূর্তে এরকম বাঙালি নেটিজেন খুব কমই আছে। ২০২৩-এ হঠাৎই কনটেন্ট ক্রিয়েটার নিরঞ্জন মন্ডলের জনপ্রিয়তা বিপুল পরিমাণে বেড়ে যায়। নেটিজেনরা দারুণ উপভোগ করেন তাঁর কনটেন্ট। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ঘুরে বেড়ায় তাঁর নানা ভিডিও। নিজে মজার কনটেন্ট বানালেও, নিরঞ্জনের জীবনের লড়াইটা বেশ কঠিন। সমকামি হওয়ায়, অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে।
ইনস্টাগ্রাম: ৭ লক্ষ ৪০ হাজার প্রায়
ফেসবুক: ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার প্রায়
ইউটিউব: ৪ লক্ষ ৭৩ হাজার প্রায়
প্রীতি সরকার/ প্রীতি সি ইজ (Preeti Sarkar/ Pretty She Is)
ইনস্টাগ্রাম কিংবা ফেসবুকে 'পাপা কি পরী'-র ভিডিও দেখেননি এমন কম নেটিজেন আছেন। ২০২৩ সালে জনপ্রিয়তার শিখরে ওঠেন তিনি কনটেন্ট ক্রিয়েটর প্রীতি। একাধিক কনটেন্ট-এ মিলিয়ন-এর ওপর ভিউস। বর্তমানে কলকাতায় থাকলেও তিনি বড় হয়েছেন বহরমপুরে। ক্ল্যাসিকাল ডান্সেও বেশ পারদর্শী হয়েও ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা করেন। একটি জামাকাপড়ের ব্র্যান্ডের মালিক তিনি। জীবনের নানা খারাপ সময় ভুলে ডিজিটাল কনটেন্ট বানাতে শুরু করেন। তাঁর মেকআপ, ফ্যাশন ও মজার নানা কনটেন্ট দারুণ পছন্দ করে নেটিজেনরা।
ইনস্টাগ্রাম: ৩ লক্ষ ৪১ হাজার প্রায়
ফেসবুক: ১ লক্ষ ১৭ হাজার প্রায়
ইউটিউব: ২৩ হাজার ২০০ প্রায়
কিরণ মজুমদার (Kiran Mazumder)
এক বাঙালি বউ শ্রেয়া এবং তার অবাঙালি স্বামীর মিষ্টি মিষ্টি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয়। ভিডিওগুলি তৈরি হয় জনপ্রিয় প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারে। পর্দার শ্রেয়া অর্থাৎ কিরণ মজুমদার, সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্তমানে দারুণ জনপ্রিয়। যদিও শুধু নেটমাধ্যমে তাঁর জনপ্রিয়তা আটকে নেই। তিনি একাধারে মডেল, অভিনেত্রী এবং নামী গয়নার বিজ্ঞাপনের মুখ। কলকাতার রাস্তার ধারে বড় বড় হোর্ডিংয়ে দেখা যায় তাঁর মুখ। ২০২৩ সালে যে ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটররা দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে, তাঁদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার- কিরণ অন্যতম। রিলস, রোজকার জীবন ছাড়াও তিনি সামাজিক বা অনুপ্রেরণামূলক মেসেজও শেয়ার করেন সকলের জন্য।
ইনস্টাগ্ৰাম: ৩ লক্ষ ২৬ হাজার প্রায়
ফেসবুক: ৩৯ হাজার প্রায়
ইউটিউব: ১ হাজার ৭ প্রায়
প্রেরণা দাস (Prerana Das)
ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক-এ কনটেন্ট ক্রিয়েটর প্রেরণা দাসের মেকআপ ভিডিও মুহূর্তে ভাইরাল হয়। এছাড়াও নানা ট্রেন্ডিং বিষয়ের ওপরে তিনি মজার অভিনয় ভিডিও ও রিল তৈরি করেন। স্ক্রিপ্ট লেখা, রেকর্ড থেকে এডিট, জনপ্রিয় ডিজিটাল ক্রিয়েটার- প্রেরণা, সবই করেন নিজের হাতে। তাঁর বিউটি ভ্লগ ও রিলস দারুণ জনপ্রিয়।
ইনস্টাগ্রাম: ২ লক্ষ ৫ হাজার প্রায়
ফেসবুক: ২৪ হাজার প্রায়
ইউটিউব: ৫২ হাজার ৭ জন প্রায়
নন্দিনী গঙ্গোপাধ্যায়/ স্মার্ট দিদি (Nandini Ganguly/ Smart Didi)
২০২৩-এ জীবনটা হঠাৎ অনেকটাই পাল্টে যায় নন্দিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের। কারও কাছে তিনি পরিচিত স্মার্ট দিদি নামে। আবার কেউ তাঁকে ডাকেন নন্দিনীদি নামে। কলকাতার অফিস পাড়ায় রাস্তার ধারে ভাতের হোটেল চালান। ফুটপাতে ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট একটি জায়গায় তাঁর হোটেল। ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা করে, বেঙ্গালুরুতে কিছুদিন চাকরি করেন নন্দিনী। তবে করোনাকালে পরিবারের অবস্থা এতটাই খারাপ পর্যায়ে চলে যায় যে, বাড়ি ফিরে বাবার পাইস হোটেলের হাল ধরতে হয় তাঁকে। রান্না, খাবার পরিবেশন, টাকা- পয়সার হিসেব রাখা সবটাই নিজের হাতে করেন তিনি। তাঁর স্টাইল স্টেটমেন্ট অন্যান্য পাইস হোটেলের কাজ করা মহিলাদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। হঠাৎই সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হোন তিনি। বর্তমানে তাঁর দোকানের বাইরে ভিড় জমান ফুড ব্লগাররা। নন্দিনীর জনপ্রিয়তা এতটাই বাড়ে যে, বড় পর্দাতেও ডেবিউ করেন তিনি। এখন ইনস্টাগ্রামে নন্দিনীর অনুগামীদের সংখ্যা বিপুল। নিয়মিত রিলস থেকে শুরু করে জীবনের নানা মুহূর্ত শেয়ার করেন তিনি সকলের সঙ্গে।
ইনস্টাগ্রাম: ১ লক্ষ ৭১ হাজার প্রায়
ফেসবুক: ১৩ হাজার প্রায়
ইউটিউব: ৩৯ হাজার প্রায়
লেটস বি কনফিউজড/ সুকান্ত কুণ্ডু (Let's Be Confused/ Sukanda Kundoo)
পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সুকান্ত কুণ্ডু হলেও, তিনি একজন জনপ্রিয় ব্লগার। 'লেটস বি কনফিউজ' নামে তাঁকে অনেকেই চেনেন। ডেইলি লাইফ নিয়েই নিয়মিত ভ্লগ বানান তিনি। মালদার ছেলে সুকান্ত, বর্তমানে কর্মসূত্রে বর্তমানে কলকাতাতেই থাকেন। তিনি এই মুহূর্তে প্রেম করছেন অভিনেত্রী অনন্যা গুহর সঙ্গে।
ইনস্টাগ্রাম: ১ লক্ষ ৯ হাজার প্রায়
ফেসবুক: ৫৮ হাজার প্রায়
ইউটিউব: ২ লক্ষ ৪ হাজার প্রায়