গত শতকের ৯০-এর দশকে সাদামাটা অথচ অন্তর্নিহিত গূঢ় অর্থের গানের কথায় বাঙালিকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছিলেন এক যুবক। তাঁর গানের সুরে-কথায় ভর করেই ভেঙে গিয়েছিল বাংলাগানের চেনা ছক। আর সেই ছক ভাঙার অভ্যাস বা সমাজের যে কোনও বিষয়কে ভিন্নভাবে দেখার নেশা তাঁর মধ্যে আজও একইরকম। এর মাঝে সংখ্যার বিচারে হয়তো বয়সটা কিছুটা বেড়েছে, তবে বাড়েনি তাঁর মনের বয়স-বুড়িয়ে যায়নি তাঁর চিন্তন। আর সেই জন্যই তিনি নবীনের প্রবীণের সকলের চিরদিনের নচিকেতা চক্রবর্তী (Nachiketa Chakraborty)। আজ তাঁর জন্মদিন
প্রচলিত ধ্যানধারনার বাইরে হাঁটাটা যেন নচিকেতার স্বভাবগত বৈশিষ্ঠ। সমাজের যেখানেই এসেছে জড়তা, ধরেছে পচন সেখানেই নিজের শিল্পের মাধ্যমে খোঁচা দিয়েছেন তিনি। রোগীর পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে লুটেপুটে নেওয়ার জন্য এক শ্রেণির চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যেমন তিনি গান বেঁধেছেন, তেমনই রেয়াত করেননি কাজে ফাঁকি দেওয়া সরকারি কর্মচারীদেরও। আবার বৃদ্ধ বয়সে পরিবারকে ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মানুষগুলোর মনের কথাও উঠে এসেছে তাঁরই কণ্ঠে।
জীবনমুখী গানের জনক হলেও, সঙ্গীত নিয়ে এক্সপেরিমেন্টও কম করেননি নচিকেতা চক্রবর্তী। পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন রবীন্দ্রনাথের গান ও গানের কথা নিয়ে। তার জন্য সমালোচিতও হয়েছেন কোনও কোনও মহলে। যদিও সেসবকে 'ডোন্ট কেয়ার'ই করেছেন নচিকেতা। কারণ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে রবীন্দ্রনাথের গানের প্রতি তাঁর ভাললাগা-ভালবাসার কথাও সরাসরি জানিয়েছেন শিল্পী। এমনকী ডুয়েট রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ডও করেছেন তিনি।
শুধু কি তাই, গত একবছরে আরও বিভিন্নভাবে নিজের ভক্তদের কাছে ধরা দিয়েছেন নচিকেতা। প্রথমবারের জন্য গেয়েছেন শ্যামসঙ্গীত (Toke Shyama By Nachiketa Chakraborty), যা শ্রোতামহলে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল। গেয়েছেন বাংলা গজল। আবার সামনেই মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর লোকগান। এবার তাঁর গলায় শোনা যাবে লালনগীতি। এছাড়া নচিকেতার আগুনপাখির গল্প এবার আসতে চলেছে বড়পর্দাতেও। ছবির পরিচালনা করছেন সুবীর মণ্ডল। সেই নিয়ে ভীষণ উচ্ছ্বসিতও তাঁর ভক্তরা। আসলে এক্ষেত্রে নচিকেতার কথা ধরেই বলতে হয়, বাংলা সঙ্গীত জগতে তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব, যাঁকে ভালবাসা যায়, অপছন্দও করা যায়, কিন্তু উপেক্ষা করা যায় না।
আরও পড়ুন - নদীর জল শুকিয়ে যেতেই আস্ত গ্রাম, অবাক বিশ্ব