
জুবিন গর্গ। শুধু সুগায়ক নন, ভাল মানুষ হিসাবেও পরিচিতদের কাছে ছিলেন অনন্য। ৫২ বছরের গায়কের অকালমত্যুর অভিঘাত শুধু অসমকেই নয়, নাড়িয়ে দিয়েছে মুম্বই ও টালিগঞ্জকে। প্রিয় ‘জুবিনদা’র মৃত্যুতে শোকস্তদ্ধ সেরাজ্যের বাঙালি সঙ্গীতশিল্পীরাও। অনেকেই সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলছেন। এসবের মধ্যে সঙ্গীতশিল্পী জয় চক্রবর্তী একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'দেবের কথা বলব না। তবে জিৎ গাঙ্গুলি ও নচিদার (নচিকেতা চক্রবর্তী) অবশ্যই আসা উচিত ছিল। বাঙালি হিসেবে আমাদের লজ্জা লাগছে।'
বিষয়টিতে bangla.aajtak.in-এর তরফে নচিকেতা চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্মৃতির ঝাঁপি খোলেন। তাঁর কথায়, 'জুবিন খুবই গুণী একজন শিল্পী। একটু ছেলেমানুষ ছিল। সেকারণে সবাই ওকে বুঝত না। গায়ক তো বটেই, ভালো মিউজিশিয়ানও ছিল। সবথেকে বড় কথা, খুবই ভালো মানুষ ছিল। আমি ওঁর সঙ্গে সময় কাটিয়েছি গুয়াহাটিতে। একবার রাত ১২টার সময় আমাকে নিয়ে একটা হাসপাতালে গিয়েছিল। সেখানে একটা শিশু ভর্তি ছিল। বাচ্চাটা নাকি জুবিনকে দেখতে চেয়েছিল। প্রচুর ব্যস্ততা সত্ত্বেও আমাকে নিয়ে গেল। খুবই মানবিক ছিল। পুরো পাগল, ক্ষ্যাপা মানুষ। তবে ভেতরটা খুব পরিস্কার। ও আমার গানের লেখা বা কথা নিয়ে খুবই আগ্রহী ছিল।'
নচিকেতা আরও বলতে থাকেন, 'ওর গাড়িতে কোনও নম্বর থাকত না। নম্বর প্লেটে শুধু জুবিন লেখা থাকত। তাতেই ও গোটা অসম ঘুরত। ও সেখানকার বিরাট স্টার, আইকন। ওকে ওই সম্মানটা সরকার দিত। ওর মৃত্যুর খবর শুনে আমি গরিমা বা ওর পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমার কাছে নম্বর নেই। তবে সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছি।'
টলিউড থেকে দেব বা সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গাঙ্গুলি অসমে যাননি বা জুবিনের মৃত্যুতে তেমনভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলী দেননি, এই অভিযোগ তুলছেন, বাংলা ও অসমের সঙ্গীতপ্রেমীদের একাংশ। বিষয়টিতে নচিকেতা বললেন, 'সবাই নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। জুবিনও তো নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। ভালোবাসাটা অন্ধত্বের পর্যায়ে চলে গেলে মুশকিল। মৃত্যুকে ইভেন্টে পরিণত করা বা টিআরপি বাড়ানোর কৌশল হিসেবে নেওয়া উচিত নয়।'
মেঘালয়ের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জুবিনের জন্ম। সঙ্গীতের আশপাশেই বড় হয়ে ওঠা। বাবা মোহিনীমোহন বরঠাকুর পেশায় ম্যাজিস্টেট হলেও গান লিখতেন। অহমিয়া কবি ছিলেন। কপিল ঠাকুর ছদ্মনামে লেখালেখি করতেন। জুবিনের মা ইলি বরঠাকুর ছিলেন গায়িকা। বোন জংকী বরঠাকুর ছিলেন অভিনেত্রী-গায়িকা। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি জায়গায় অনুষ্ঠান করতে যাওয়ায় পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। ২২ বছর পরে জুবিনও চলে গেলেন অনুষ্ঠান করতে গিয়েই!