বাংলা কবিতা-গান তথা সাহিত্যের আলোচনায় বারেবারেই চলে আসে যাঁদের কথা তাঁরা হলেন বঙ্গের পঞ্চকবি। সেই পঞ্চকবিরই অন্যতম রজনীকান্ত সেন (Rajanikanta Sen)। কান্তকবি নামেও তিনি সমান পরিচিত। ১৮৬৫-র ২৬ জুলাই বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জে জন্ম রজনীকান্ত সেনের। শৈশবে মায়ের কাছ থেকেই মোটামুটি সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় রজনীকান্তর। সেই আকর্ষণেই ধরেছিলেন কলম। ছোট থেকেই বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় শুরু করেন কবিতা লেখা। এরপর একসময় নিজের কবিতাগুলিকেই সুরের জালে বুনে গানের রূপ দিতে শুরু করেন রজনীকান্ত।
সময় যত এগিয়েছে ততই বেড়েছে কবিতা ও গানের সংখ্যা। এমনকী নিজে সেই সমস্ত গান পরিবেশনও করতেন। একদিকে যেমন তাঁর গানে ধরা পড়েছে মাতৃভূমির প্রতি নিবিড় ভালবাসা ও আন্তরিক দেশাত্মবোধ, অন্যদিকে তেমনই ফুটে উঠেছে সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের প্রতি আস্থা এবং শ্রদ্ধা। অর্থাৎ তাঁর সৃষ্টির একটা বড় অংশ জুড়েই ছিল দেশাত্ববোধক গান ও ভক্তিগীতি তথা প্রার্থনা সঙ্গীত।
স্বদেশী আন্দোলনে গান লিখলেন রজনীকান্ত
ব্রিটিশ আমলে স্বদেশী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বাংলা। সেই সময় বিদেশী পণ্য বর্জন করে দেশীয় পণ্য ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনের নেতারা। সেইমতো দেশের একটা অংশের মানুষ ভারতে তৈরি বস্ত্র ব্যবহার করতে শুরু করেন। কিন্তু দেশীয় বস্ত্রের গুণমান সেইসময় ততটা ভাল ছিল না, ফলে অনেকেই স্বদেশী কাপড় ব্যবহারের সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না। সেই সময় রজনীকান্তর কলমে জন্ম নিল, 'মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই, দীন দুখিনি মা যে তোদের এর বেশি আর সাধ্য নাই'। এই গানের মধ্যে দিয়ে বাংলা তথা গোটা দেশে স্বদেশী পণ্য ব্যবহারে আকর্ষণ যেন এক লহমায় বেড়ে গিয়েছিল।
রজনীকান্ত হয়ে উঠলেন কান্তকবি
গানটির জন্ম কাহিনীও বড় অদ্ভুত। শোনা যায়, গানটির লেখা ও কম্পোজ নাকি একইসঙ্গে হয়েছিল। অর্থাৎ গানের স্থায়ী ও অন্তরা লেখার পরেই শুরু হয়ে যায় কম্পোজের কাজ। একদিকে যখন কম্পোজ চলছিল, অন্যদিকে তখন লেখা হচ্ছিল গানের বাকি অংশ। এই গানের মধ্যে দিয়েই রজনীকান্ত সেন হয়ে ওঠেন কান্তকবি (Kantakabi)।
ক্যানসারে আক্রান্ত হন কবি
এহেন কবির জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে চূড়ান্ত আর্থিক সংকটে। গলায় ক্যানসার হয়েছিল। কিন্তু তার চিকিৎসা ছিল ব্যয়বহুল। ফলে একসময় চিকিৎসা চালাতে বন্ধুবান্ধব প্রিয়জনদের দানও গ্রহণ করতে হয় তাঁকে। শেষের দিকে খেতে পারতেন না। এমনকী কথাও বলতে পারতেন না। তবে তারমধ্যেও লিখে গিয়েছেন একের পর এক গান-কবিতা। কিন্তু ১৯১০ সালে ১৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ৪৫ বছর বয়সে চিরদিনের জন্য থেমে যায় কান্তকবির সৃষ্টি।
আরও পড়ুন - রাতের কলকাতায় ব্যবসায়ীকে গুলি