কয়েকদিন আগেই কুন্তল ঘোষের সঙ্গে যোগ থাকায় ইডির দফতরে ডাক পড়ে টলিপাড়ার অভিনেতা বনি সেনগুপ্তের। কুন্তল ঘোষের টাকায় গাড়ি কেনায় কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি তাঁকে। ইডির কাছে সমস্ত টাকা ফেরৎ দিয়েই আপাতত রেহাই পেয়েছেন বনি। তবে সেখানেও শান্তি নেই। বনি সহ দেব-সায়নী ঘোষকে নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন একসময়কার টলিউড অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়। ইন্ডাস্ট্রির মানুষই কাদা ছেটাচ্ছে ইন্ডাস্টির লোকের দিকে, এই নিয়েই মুখ খুললেন বনি সেনগুপ্ত। সঙ্গে জানালেন ইডির কাছে মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতাও।
হিরণ বলেছেন আপনিও দুর্নীতিগ্রস্ত। কেন এমন বললেন হিরণ? কোনও ব্যক্তিগত শত্রুতা আছে ?
বনি: আমি হিরণ দা বলেই ডাকি। কাজও করেছি একসঙ্গে। চেনাশোনাও অনেক। ওহ নিজেও একসময় তৃণমূলে ছিল সেই সময় আমরা একসঙ্গে প্রচার করেছি। আমার মনে হয় ওহ নিজের ওপর নিজেই আঙুল তুলছে। বেকার দলকে জড়িয়ে বা পলিটিক্সকে জড়িয়ে এসব করার কোনও মানে হয় না, এটা জাস্ট একটা আলাদা বিষয় যে আমার শুধু নামটা জুড়ে গেছিল আর সেখান থেকে বেরোনোর জন্য যা যা করণীয় সেটা আমি করেছি আর এখন তো আর সেটার সঙ্গে যুক্ত নই কোনওভাবে। আমার যা করার সেটা আমি করে দিয়েছি, তাই এখন আর সেটা নিয়ে কথা বলে লাভ নেই। আসলে হিরণ দা এগুলো বলে ফুটেজ পাচ্ছে। তাই আমাদের নাম নিয়ে যদি ক্যামেরা সামনে আসতে পারে তাহলে খুব ভালো কথা। অসুবিধে নেই।
আরও পড়ুন: Bonney Sengupta: প্রিমিয়ারের দিন ED-র তলব, বক্সঅফিসে ডাহা ফেল বনির 'আর্চির গ্যালারি'
হিরণের এই মন্তব্য কতটা প্রাসঙ্গিক ? টলিউডে দুর্নীতি আছে বলে বিশ্বাস করেন ?
বনি: না না এটা গোলাচ্ছে, যেটা বারবারই বললাম। ওহ নিজেও গ্ল্যামার ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত ছিল তাই নিজের দিকেও প্রশ্ন তুলছে। আর এটা তো হতে পারে না যে সে এখন টলিউডে নেই মানে সেও ক্লিন, তাই নিজের দিকেই কাদাটা ছুঁড়ছে। কিছু মানুষ উত্তেজনায় কিছু কথা বলে ফেলে হিরণ দাও ক্যামেরার সামনে উত্তেজিত হয়ে কিছু বলে ফেলেছে, আমার মনে হয় না সেটা কারোর জীবনে কোনও প্রভাব ফেলেছে।
এত অল্প বয়সে ইডির মুখোমুখি হত হল। আপশোষ হয় এটা নিয়ে?
বনি: ইডি মানেই যে কেউ দোষী-ভুল তা নয়, সেটা যতক্ষণ না প্রমাণিত হচ্ছে, আমাকে কেউ ডাকতে পারে, জিজ্ঞাসা করতেই পারে কীভাবে কী যুক্ত ছিল, তো সেই চ্যাপ্টারটা আমি ক্লোজ করে দিয়েছি, আমাকে জাস্ট ডাকা হয়েছিল সহযোগিতা করতে বলা হয়েছিল সেটা করেছি। আমি যখন জানতে পেরেছি যে সেই টাকাটা কীসের সঙ্গে যুক্ত ছিল সেটা আমি ফেরৎ দিয়ে দিয়েছি, তো আমার সেখান থেকে মনে হয়নি যে আমাকে কেউ ওটা থেকে গিল্টি ফিল করাতে পারবে।
আরও পড়ুন: Bonney Sengupta: ED অফিসে বনি, অভিনেতাকে ব্যান করল একটি OTT প্ল্যাটফর্ম
মনে হয় যে কুন্তলের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেই ভালো হত ?
বনি: যেটা হয়ে গিয়েছে সেটা হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয়, চেনা শোনা হলেও যেটা আমার ভুল হয়েছিল যে একটি এগ্রিমেন্টে সই করা উচিত ছিল, একটা প্রমাণ রাখা উচিত ছিল যে আমি তাঁর হয়ে কাজ করেছি, তো সেটা আমার ভুল। আর বাকি চেনা শোনা তো থাকতেই পারে, টলিউডে কাজ করতে গেলে তো অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয় কিন্তু ভুল আমারই যে আমার পেপারে সই করানোটা হয়নি।
এই দুর্নীতিতে নাম জড়ানো, ইডির তলব ইত্যাদির পর কি এবার থেকে সমঝে চলবেন ?
বনি: এটা থেকে তো শিক্ষা নিলাম, এবার থেকে সতর্ক থাকব। আমার মনে হয় আমি প্লাস বাকি সকলেরই সতর্ক থাকা দরকার। এটা একটা লার্নিং লেসন টাইপের। তাই এবার থেকে এগ্রিমেন্ট করে পেপার পত্র পড়ে কাজ করা উচিত।
আরও পড়ুন: Ankita Chakraborty-Bonny Sengupta: 'অন্যের থেকে গাড়ি-ফ্ল্যাট গিফট নিই না,' বনিকে টার্গেট অঙ্কিতার?
আপনার সিনেমা নাকি বক্স অফিস হিট হয় না, তারপরও এত বিলাসবহুল জীবন যাপন কর- এই অভিযোগ কি সত্যি ?
বনি: যাঁরা বলছে বেসিকলি কথাগুলো, তাঁরা তো সেই সাফল্যটা পায়নি তাই তাঁরা বলছে। এগুলো ভুল কথা কারণ প্রযোজকরা এতটাও বোকা নন যে যার ওপর ইনভেস্ট করছে সে যদি রিটার্ন না দেয় তাহলে কেন বার বার ইনভেস্ট করবে। রুদ্রনীল দা যে বলেছে ৪০ লাখ টাকায় বাংলা সিনেমা হয়ে যেতে পারে, খুব ভালো কথা উনি বানিয়ে দেখাক, তাঁর যে সিনেমাগুলি আছে বা যেগুলি বানিয়েছে, ইম্পায় যেগুলির ক্লিয়ারেন্সের জন্য আবেদন করেছে, সেগুলি কি ওই টাকায় বানিয়েছে নাতো, তাহলে ওহ যখন জানে তখন কেন বাংলা ইন্ডাস্ট্রিকে এভাবে ছোট করে কে জানে। আর একটা জিনিস আছে যে মানুষের মাথায় এটা আছে যে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি খুব ছোট ইন্ডাস্ট্রি, যতদিন না এই মানসিকতা বদলাবে ততদিন বাংলা ইন্ডাস্ট্রি বড় হবে না। আর এটা বলাটা খুবই ভুল কথা যে পারিশ্রমিক কী বা সে সফল কিনা কারণ এটা কারোর ডিসাইড করার নয়। এটা ডিসাইড করবে যাঁরা প্রযোজক বা যাঁরা পরিচালক যাঁরা আমাদের কাস্ট করছেন তাঁরাই এটা করলে ভালো।
নেটিজেনরাও কটু মন্তব্য করছেন আপনাকে, তাদের উদ্দেশে কী বলবেন?
বনি: মানুষ যদি বুদ্ধিমান হত তবে তাঁরা বুঝত। যাঁরা ইংরাজিটা বোঝে, আমি বলেছিলাম ওয়ান অফ দ্য মোস্ট, এটাকে না ধরে শুধুই লিডিং হিরোটাকে ধরেছে। ওয়ান অফ দ্য মোস্ট মানে হল অনেকের মধ্যে একজন, তো সেটা নিন্দুকরা বোঝেনি। তো ঠিক আছে, সেটা না বুঝলে আমার কিছু করার নেই। ২০১৪ সাল থেকেই ট্রোল হচ্ছি, তাই এা নতুন কিছু নয় আমার কাছে। তো আমি এগুলো এড়িয়ে যাই। নিজেদের ইন্ডাস্ট্রিকেই যদি সাপোর্ট না করে তাহলে ইন্ডাস্ট্রি কোথায় যাবে। নিজেদের ইন্ডাস্ট্রির লোকেরাই ইন্ডাস্ট্রির লোকদের নিয়ে কথা বলছে, শুধু খবরে থাকার জন্য। এটা মনে হয় খুবই ভুল জিনিস, একতা নেই ইন্ডাস্ট্রির ভেতর। সেটারই অভাব রয়েছে, আমার মনে হয় সেই একতা থাকা উচিত।