Advertisement

Rituparno Ghosh: ঋতু-বিয়োগের ক্ষত কোনও দিন ভরাট হওয়ার নয়

তিনি সব সময় স্বতন্ত্র। স্বতন্ত্র তাঁর পরিচালনা, স্বতন্ত্র তাঁর অভিনয়। একই ভাবে সমান স্বতন্ত্র ছিল তাঁর কলমও। ২০১৩-য় আজকের দিনে আমরা তাঁকে হারিয়েছিলাম। সত্যিই হারিয়েছিলাম কি? তিনি কি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকবেন না? তিনি কি আজীবন সিনেমার সঙ্গে একাত্ম হয়ে থআকবেন না? এই প্রশ্নগুলির উত্তর একটাই। তিনি জড়িয়ে রয়েছেন। তিনি বেঁচে রয়েছেন। আর চিরকাল থাকবেনও।

দ্য লাস্ট লিয়ার ছবিতে অমিতাভ বচ্চনকে দৃশ্য বোঝাচ্ছেন ঋতুপর্ণ
রজত কর্মকার
  • কলকাতা,
  • 30 May 2021,
  • अपडेटेड 11:56 AM IST
  • তাঁর চলে যাওয়ায় বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমা বেশ কিছু অনন্য সৃষ্টি থেকে বঞ্চিত থেকে গেল।
  • এ ক্ষত কোনও দিন ভরাট হওয়ার নয়।
  • চিন্তা-ভাবনা-অ্যাপিয়ারেন্স এবং চিত্রনির্মাণ, কোনও দিক থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষকে (Rituparno Ghosh) বাঁধা গতে ফেলা যাবে না।

চিন্তা-ভাবনা-অ্যাপিয়ারেন্স এবং চিত্রনির্মাণ, কোনও দিক থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষকে (Rituparno Ghosh) বাঁধা গতে ফেলা যাবে না। তিনি সব সময় স্বতন্ত্র। স্বতন্ত্র তাঁর পরিচালনা, স্বতন্ত্র তাঁর অভিনয়। একই ভাবে সমান স্বতন্ত্র ছিল তাঁর কলমও। ২০১৩-য় আজকের দিনে আমরা তাঁকে হারিয়েছিলাম। সত্যিই হারিয়েছিলাম কি? তিনি কি তাঁর সৃষ্টির মধ্যে চিরকাল বেঁচে থাকবেন না? তিনি কি আজীবন সিনেমার সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকবেন না? এই প্রশ্নগুলির উত্তর একটাই। তিনি জড়িয়ে রয়েছেন। তিনি বেঁচে রয়েছেন। আর চিরকাল থাকবেনও।

তবে তাঁর চলে যাওয়ায় বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমা বেশ কিছু অনন্য সৃষ্টি থেকে বঞ্চিত থেকে গেল। এ ক্ষত কোনও দিন ভরাট হওয়ার নয়। তাঁর স্মৃতিচারণে সিনেমার বহু বড় নাম, শর্মিলা ঠাকুর, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, কঙ্কনা সেন শর্মা, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, সুদীপ্তা চক্রবর্তী স্মৃতি মেদুর হয়ে ওঠেন। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এর আগেও বহুবার বহু জায়গায় বলেছেন, 'আমার মধ্যে একটা ঋতু বেঁচে আছে।'

ঋতুপর্ণ ঘোষের উপর সঙ্গীতা দত্ত-র তৈরি ডকুমেন্টারি ‘বার্ড অব ডাস্ক’-এ ঋতুপর্ণ ঘোষকে নিয়ে বহু মানুষ স্মৃতিচারণা করেছেন। এই ডকুমেন্টারির কথক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং মীর। ঋতুপর্ণর লেখা ‘ফার্স্ট পার্সন’-এর অংশ পড়েছেন তাঁরা। সেই কথনের আধারে কখনও ইন্দ্রাণী পার্কের বাড়ি ‘তাসের ঘর’। কখনও প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের টিপু সুলতান মসজিদ। কখনও বা সাউথ পয়েন্ট। ঋতুকে ছুঁয়ে থাকা ঘর, ডায়েরি, সিনেমার ফ্রেম মনকেমনের গন্ধ ছড়ায়। ঋতুকে চিনতেন, তাঁকে কাজের সূত্রে বা কাছ থেকে জানতেন এমন বহু মানুষের সাক্ষাৎকারের টুকরো কোলাজে ভরে আছে এই তথ্যচিত্র।

‘আরেকটি প্রেমের গল্প’-এ একটি দৃশ্যে মেয়ের মেকআপ করতে হয়েছিল ঋতুপর্ণকে। 'চার ঘণ্টা লেগেছিল ঋতুদার ওই মেকআপ নিতে। তার পর যখন ফ্লোরে এলেন আমরা চিনতে পারছিলাম না। গায়ে হাত দিয়ে কথা বলতে পারছিলাম না কেউ। কারণ ওই মহিলাকে আমরা চিনি না। শুট শেষ। মেকআপ তুলছে। মাস্কারা মাখামাখি হয়ে আছে মুখে। আমাকে বলল, মেকআপ রুমের দরজাটা বন্ধ করে দে। তখনই বুঝেছি কোনও গণ্ডগোল। দরজা বন্ধ করতেই হাউহাউ করে কান্না। কী কথা হয়েছিল, সেটা ব্যক্তিগতই থাক। কিন্তু ঋতুদা বলেছিল, মেয়েটা আমাকে ছেড়ে চলে গেল।' স্মৃতির পাতায় হাত বোলালেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

‘চোখের বালি’র বিনোদিনী তিনিই করছেন। এমনটাই জানতেন নন্দিতা দাশ। কস্টিউম তৈরি। শুটিং শুরু হবে। হঠাত্ জানতে পারেন, তিনি নন। সে চরিত্রে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনকে কাস্ট করেছেন ঋতুপর্ণ। ঐশ্বর্যাকে কাস্ট করলে তাঁর ছবি জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছবে তা ঋতুপর্ণ জানতেন। তাই হয়তো সেই সিদ্ধান্ত। স্পষ্ট জানালেন নন্দিতা। কঙ্কনা সেনশর্মা ছুঁয়ে গেলেন আড্ডার স্মৃতি। ঋতুদা কোথাও ঢুকলেই সব ক্যামেরার ফোকাসে থাকতেন তিনিই, মনে করিয়ে দিলেন মীর।

নিজের সেক্সুয়াল প্রেফারেন্স নিয়ে অত্যন্ত স্পষ্টবাদী ছিলেন ঋতুপর্ণ। ঋতুপর্ণ-র খুব কাছের বন্ধু এবং ভ্রাতৃবধূ দীপান্বিতা ঘোষ মুখোপাধ্যায় তাঁর স্মৃতিচারণে লিখেছেন, 'ঝলমলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা প্রান্তর। আমাদের মনও তাই। বিপ্লব, বিশ্ব, তত্ত্ব— এ সব নিয়েই তখন স্বপ্ন দেখতে চায়। কিন্তু ঋতু? ‘তিতলি’ গল্পটা লিখে শুনিয়েছিল আমাকে। তখন খুব বন্ধু আমরা। আজ আর বলতে দ্বিধা নেই, আলাপের বেশ কিছু দিন পরে ঋতু এসে বলেছিল আমাকে, “আমার এক পুরুষ প্রেমিক আছে। তার সঙ্গে আমার শরীরের সম্পর্ক। এটা জানার পর কি আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবি?” আশির দশকের মাঝ সময়ে এই কথাটা বলা এবং শোনাটা সহজ ছিল না একেবারেই।'

দীপান্বিতা-র আক্ষেপ 'কলকাতা ওকে তো নিতে পারল না! খুব জেদ ছিল ওর। মনে ঠাঁই দিয়েছিল— যাই হোক না কেন পৃথিবীকে আমি দেখিয়ে দেব, এই ভাবনাকে। কেউ আমার চেহারা, কথা, পোশাক নিয়ে হাসবে না, বরং নতজানু হবে! এ যেন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা। এই জেদের দাম ঋতুকে দিতে হয়েছিল। ভালবাসা খুঁজতে খুঁজতে একের পর এক মানুষ ওকে আরও একা করে দিয়ে চলে যেত! ঋতু মানেই একা এক সত্তা! ওর আলোয় যখন ক্ষমতার বৃত্ত তৈরি হল, তখন ওকে ব্যবহার করার জন্য মানুষ ভালবাসার ভান করত। ওর দুর্বলতা নিয়ে খেলত। ওর অপারেশনের কথা যখন বলেছিল, আমি না করিনি। শুধু বলেছিলাম, বিদেশ বা নিদেনপক্ষে মুম্বই গিয়ে করাতে। কারণ কলকাতার ডাক্তাররা তো ওকে পেশেন্ট নয় সেলিব্রিটি, ঋতুপর্ণ হিসেবে দেখবে! এই তর্কে ও যেতে চায়নি। তাই আমায় না জানিয়ে অপারেশন করে ফেলল!'

এমনই ছিলেন ঋতুপর্ণ। একেবারে স্বতন্ত্র। বাংলা সিনেমায় প্রকৃত অর্থেই ১৯৯০-এর দশকে 'ফার্স্ট পার্সন' হয়ে উঠেছিলেন।

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement