
গত বছর অগাস্ট মাসে আরজি কর কাণ্ড নিয়ে সরব হয়েছিল গোটা রাজ্য। সরকারি হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। চিকিৎসকের বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন টলিপাড়ার তারকারা। যাঁদের মধ্যে অন্যতম সোহিনী সরকার। আর সেই সময়ই সোহিনী মন্তব্য করেছিলেন বাংলায় তাঁর সন্তানের জন্ম নিয়ে। অভিনেত্রীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কুণাল ঘোষ জবাব দিয়েছিলেন সপাটে। সেই সময় সোহিনী কোনও জবাব না দিলেও, এক বছর পর এই নিয়ে মুখ খুললেন নায়িকা।
গত বছর জুলাইতে গায়ক শোভন গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিয়ে করেন সোহিনী। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সদ্য বিবাহিত সোহিনী বলেছিলেন, বাংলায় সন্তানের মা হতে তাঁর ভয় লাগে। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি তাঁকে ভাবায়, আদৌ ভবিষ্যতে তিনি মা হবেন কিনা, সেটাও ভেবে দেখবেন তিনি। গত বছর সোহিনীর এই বক্তৃতায় কিছু মানুষ যেমন অভিনেত্রীর সাহসিকতার প্রশংসা জানিয়েছিলেন তেমন কিছু মানুষ আবার সমালোচনাও করেছিলেন অভিনেত্রীর। কুণাল ঘোষের কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছিল সোহিনীকে। এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে সোহিনী তৃণমূলের মুখপাত্রকে দিলেন জবাব।
সোহিনী বলেন, 'আমার কথাটাকে একটু অন্যরকমভাবে...আসলে কী হয়েছিল, আমি একটা কথা বললাম, সেই কথাটার আগের লাইনটা বাদ দিয়ে দেওয়া হল আর পরের লাইনটা বাদ দিয়ে দেওয়া হল। মাঝখানের একটা অংশ আমি মা হতে পারব না এ রাজ্যে ছড়িয়ে গেল। এটাই হয়েছে সব জায়গায়। কোথাও গিয়ে যে আলাদা করে ব্যাখা দিয়েছি এমনটা নয়।' অভিনেত্রী বলেন, 'আমার বক্তব্যটা ছিল শুধু রাজ্য বলে নয়, আমাদের ভারতবর্ষের যা অবস্থা, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার যা অবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যা অবস্থা, তাতে আমার সত্যি জানতে ইচ্ছে করে, আমাদের মাতৃত্ববোধ, আমি কতটা বায়োলজ্যিকালি মা হতে পারলাম কি পারলাম না সেটা অনেক পরের প্রশ্ন, কিন্তু মাতৃত্ববোধটা আমাদের মহিলাদের ৩০-এর পর থেকেই তৈরি হয়, সেটা পুরুষদের মধ্যেও তৈরি হয়। যদিও মাতৃত্ববোধ নিয়ে আমারা মহিলাদের নিয়ে বেশি কথা বলি, পুরুষদের তুলনায়। পিতৃত্ববোধ নিয়ে কথা বলি না। কিন্তু যাঁরা সত্যি একজন সন্তান দত্তক নেওয়ার কথা ভাবেন, সন্তান ধারণের কথা ভাবেন, তাঁদের সত্যি চিন্তা হয় না, যে আমি এই টাকায় কীভাবে একটা সন্তানকে পড়াব, সরকারি সব স্কুল তো প্রায় বন্ধ, বেসরকারি স্কুলে বিরাট টাকার ডোনেশন। এরপর সে যদি কৃতী হয় তাহলে অন্য অসুবিধা আবার কৃতী না হলে অন্য। এখন তো মনে হয় কৃতী না হলেই বেশি সুবিধা, অন্য কোনও ক্ষেত্রে চলে যাওযা যায়। আর কৃতী হওয়ার পরও কোথায় যাব, যে প্রতিষ্ঠানে যাব সেখানে সারাক্ষণ ব়্যাগিং হচ্ছে, কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে নিশানা করে বলছি না, সেখানে সেই দলের ছেলেরা কাজ করছে, তাঁরা প্রশ্নপত্র আগে পেয়ে যাচ্ছে, ডাক্তার হয়ে যাচ্ছে। এইসব দেখে মনে হচ্ছে পরবর্তীকালে কেমন চিকিৎসক পেতে চলেছি আমরা। তাই চারপাশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর বিচার করে আমায় ভাবতে বাধ্য করছে যে আমি আমার পরবর্তী প্রজন্মকে কী দিচ্ছি।'
প্রসঙ্গত রঘু ডাকাত ছবির প্রচারের সময়ও কুণাল ঘোষ তোপ দেগেছিলেন সোহিনীকে। কুণাল ঘোষ লেখেন, 'বাংলায় সন্তানের জন্ম দেওয়ার কথা ভাবা যায় না! কিন্তু নতুন সিনেমার জন্ম দেওয়া যায়। আর তৃণমূল কংগ্রেসের যুবনেতার আয়োজনে তার প্রমোশনে গিয়ে লম্ফঝম্ফও করা যায়। সিনেমা যখন জন্ম নিল, তখন বাকিটাতে নিশ্চয়ই আর সমস্যা থাকবে না। শুভেচ্ছা রঘু ডাকাত।' ‘রঘু ডাকাত’ ছবির অন্যতম কান্ডারী দেব কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের একজন অন্যতম সদস্য। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই সব ঘিরেই তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। যদিও তখন সোহিনী কোনও মন্তব্যই করেননি।