Advertisement

Toolsidas Junior: স্পোর্টস ড্রামা তুলসীদাস জুনিয়রের হাত ধরে ফিরে দেখা ’৯৬-এর কলকাতা

এই ছবিটির চিত্রনাট্য ২৬ বছর আগের কলকাতার একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লেখা হয়েছে। স্নুকার খেলার প্রতি অনুরাগ এবং তার বাবার সঙ্গে স্নেহপূর্ণ সম্পর্কের রসায়নে চালিত এক কিশোরের অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি ফুটে উঠেছে তুলসীদাস জুনিয়র-এ (Toolsidas Junior)।

তুলসীদাস জুনিয়র (Toolsidas Junior)।তুলসীদাস জুনিয়র (Toolsidas Junior)।
সুদীপ দে
  • কলকাতা,
  • 24 May 2022,
  • अपडेटेड 3:02 PM IST
  • এই ছবিটির চিত্রনাট্য ২৬ বছর আগের কলকাতার একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লেখা হয়েছে।
  • স্নুকার খেলার প্রতি অনুরাগ এবং তার বাবার সঙ্গে স্নেহপূর্ণ সম্পর্কের রসায়নে চালিত এক কিশোরের অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি ফুটে উঠেছে তুলসীদাস জুনিয়র-এ (Toolsidas Junior)।

তার চিত্রনাট্যগুলির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের উৎকর্ষ উপস্থাপনের জন্য পরিচিত, কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রজযোক আশুতোষ গোয়ারিকর, T-Series-এর সঙ্গে যৌথভাবে, ভারতে প্রথমবারের মতো 'স্নুকার' নিয়ে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ একটি স্পোর্টস ড্রামা বড় পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন৷ স্নুকার খেলার প্রতি অনুরাগ এবং তার বাবার সঙ্গে স্নেহপূর্ণ সম্পর্কের রসায়নে চালিত এক কিশোরের অনুপ্রেরণামূলক কাহিনি ফুটে উঠেছে তুলসীদাস জুনিয়রে (Toolsidas Junior)। ছবিটি এখন Netflix-এ সমস্ত দর্শকদের জন্য স্ট্রিমিং হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, তুলসীদাস জুনিয়রে (Toolsidas Junior) প্রয়াত অভিনেতা রাজীব কাপুরের শেষ ছবি। ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বরুণ বুদ্ধদেব। এছাড়াও ছবিতে রয়েছেন সঞ্জয় দত্ত, দীলিপ তাহিল, সারা অর্জুন, বাংলার বরুণ চন্দ, ডাঃ রামাদিত্য রায় (ডন রায়) প্রমুখ বিশিষ্ট অভিনেতারা।

১৯৯৪ সালের কলকাতার পটভূমিতে একটি সত্য ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত, লেখক-পরিচালক মৃদুলের তুলসীদাস জুনিয়র (Toolsidas Junior) একটি পিতা-পুত্রের বন্ধন এবং তাদের যৌথ জীবনের লক্ষ্যগুলির একটি সহজ অথচ ন ছুঁয়ে যাওয়া কাহিনি। ১৩২ মিনিট দীর্ঘ এই ছবির বেশিরভাগ অংশে, এক সাধারণ, মেধাবি কিশোর মিডির তুলসীদাস জুনিয়র হয়ে ওঠার যাত্রাপথ তুলে ধরা হয়েছে। এটি অন্যান্য স্পোর্টস ড্রামার থেকে কিছুটা আলাদা। কারণ, এই ছবিতে এক কিশোরের তার বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে 'স্নুকার' শিখতে আগ্রহী হয়। শুধু তাই নয়, 'স্নুকার' শিখে ‘ক্যালকাটা স্পোর্টস ক্লাব’-এর পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন জিমি ট্যান্ডনকে (দীলিপ তাহিল) হারানোর ‘ধনুক ভাঙা পন’ করে।

আরও পড়ুন

তুলসীদাস (রাজীব কাপুর) একজন খ্যাতিমান স্নুকার খেলোয়াড়, যিনি শুধুমাত্র তাঁর ছেলের (মিডি) জন্য খেলেন, এই গল্পে সেই ছেলেই বাবার ‘ক্যালকাটা স্পোর্টস ক্লাব’-এ স্নুকার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন পূরণে তুলসীদাস জুনিয়র (Toolsidas Junior) হিসাবে অবতীর্ণ হবে।

তবে রাতারাতি মেধাবী কিশোর মিডি স্নুকারে দক্ষ তুলসীদাস জুনিয়র হয়ে ওঠেনি। মিডির তুলসীদাস জুনিয়র হয়ে ওঠা নিয়েই এগিয়েছে চিত্রনাট্য। যেখানে ‘ক্যালকাটা স্পোর্টস ক্লাব’-এ ১৬ বছরের কম বয়সীদের স্নুকার খেলার অনুমতিই দেওয়া হতো না, সেখানে কীকরে ১৩-১৪ বছরের মিডি ক্লাবের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন জিমি ট্যান্ডনকে হারাবে? এ ক্ষেত্রে ক্লাবেরই এক সদস্য প্রথমে মিডির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি হলেন টুটু বসু। বাংলার ক্রীড়া প্রেমী বিশেষত ফুটবল প্রেমীদের কাছে আলাদা করে টুটু বসুর পরিচিতি  দেওয়ার প্রয়োজন নেই। দেশের ঐতিহাসিক ফুটবল ক্লাব মোহনবাগানের অন্যতম কর্তা তিনি। আগেই বলেছি এই ছবিটির চিত্রনাট্য ২৬ বছর আগের কলকাতার একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লেখা হয়েছে। তাই সেই কাহিনির অঙ্গ হিসাবে এখানে রয়েছেন টুটু বসুও, যে চরিত্রটি ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন সম্পর্কে তাঁরই এক ভ্রাতুস্পুত্র কলকাতার বিশেষজ্ঞ (মেডিসিন) চিকিৎসক ডাঃ রামাদিত্য রায় (ডন রায়)।

Advertisement

কিন্তু ‘ক্যালকাটা স্পোর্টস ক্লাব’-এ খেলার অনুমতি মিললেও 'স্নুকার' খেলতেও তো পারতে হবে! মিডিকে খেলা শেখাবে কে? প্রথমটায় অবশ্য টুটু বসুই চেষ্টা করেছিলেন। তবে মাত্র এক বছরের মধ্যে স্নুকার শিখে ‘ক্যালকাটা স্পোর্টস ক্লাব’-এর পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন জিমি ট্যান্ডনকে হারানো চাট্টিখানি কথা! এ তো দিবাস্বপ্ন দেখার সামিল!

কিন্তু অসাধ্য হলেও তা সম্ভব করে দেখাতেই হবে মিডিকে। ওয়াইএমসি ওয়েলিংটন ক্লাবের মহম্মদ সালামের (সঞ্জয় দত্ত) সান্নিধ্য লাভে মিডির এই স্বপ্ন পূরণের পথ মসৃণ হয়ে উঠল। এই মহম্মদ সালাম স্নুকারে প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। 

মহম্মদ সালাম কোচ হিসেবে অভাবনীয় কৌশলে ধীরে ধীরে স্নুকারে দক্ষ করে তুলেছেন মিডিকে। "জন্ডিস কো রজনীকান্ত কা পাঞ্চ, তোত্তা কো মিঠুন কা ডিস্কো, কিং অর কালিয়া কো বচ্চন সাহেব কা পুরা চামাট" এর মতো পাঞ্চলাইন দিয়ে সালাম ভাই অদ্ভুত কায়দায় বলিউডের অ্যাকশনের উদাহরণে স্নুকারের কৌশল শিখিয়েছেন ১৩-১৪ বছরের মিডি।

এই ছবিতে দীর্ঘ ৩০ বছর পর বড়পর্দায় শেষবারের মতো ফেরেন সুপারস্টার রাজ কাপুরের ছেলে অভিনেতা রাজীব কাপুর, যিনি এখানে চ্যাম্পিয়ন না হলেও সে কালের কলকাতার একজন খ্যাতিমান স্নুকার খেলোয়াড়। এটাই রাজীব কাপুরের শেষ ছবি। গোটা কাহিনি জুড়ে তাঁর সরল অথচ দীপ্তিময় উপস্থিতি। ছবিতে বরুণ বুদ্ধদেবের সঙ্গে পিতা-পুত্রের সরল, সুদৃঢ় আন্তরিক বন্ধন খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে।

ছবির ‘খল-নায়ক’ ‘ক্যালকাটাস্পোর্টস ক্লাব’-এর পাঁচবারের স্নুকার চ্যাম্পিয়ন জিমি ট্যান্ডনের ভূমিকায় অনবদ্য দীলিপ তাহিল। এখাধিক বলিউড ছবিতে খল নায়কের চরিত্রে অভিনয় করা দীলিপ জিমি ট্যান্ডনের চরিত্রের দারুন আভিজাত্য মেশা দম্ভ সফল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। গোটা ছবি জুড়েই দালিপ তাহিল অদ্ভুত বিজয়ী অভিব্যক্তি ধরে রেখেছেন।

যদিও মৃদুল এবং আশুতোষ গোয়ারিকরের চিত্রনাট্য বাণিজ্যিক উপাদান-অ্যাকশন দৃশ্য, দুর্দান্ত সংলাপ এবং টানটান উত্তজনায় ভরা স্পোর্টস ড্রামায় ফুটে উঠেছে ২৬ বছর আগের কলকাতার ওলি-গলি, সিনেমা হল ট্রাম, ময়দানের হারিয়ে যাওয়া অথচ খুব পরিচিত চালচিত্র। এই চিত্রনাট্যকে আরও শ্রুতিমধুর করে তুলেছে অরিজিৎ সিং-এর 'উড় চালা বাদল নয়া' গানটি, যেটি ছবিটি শেষ হওয়ার পরেও দর্শকদের মনে দোলা দেয়।

ছবিতে সকলের আন্তরিক, নিখুঁত অভিনয় এবং সহজবোধ্য চিত্রনাট্যের কারণে, তুলসীদাস জুনিয়র (Toolsidas Junior) নিঃসন্দেহে সকলের মন জয় করেছে। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল আগেই, মার্চে। এখন Netflix-এ সমস্ত দর্শকদের এটি বেশ মনে ধরবে বলে আশা করা যায়। আর কলকাতার বাঙালিরাও তাঁদের চেনা শহরের অচেনা কাহিনিকে মন ভরে উপভোগ করতে পারবেন।

Read more!
Advertisement
Advertisement