বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ফেলুদা নিয়ে বহু এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে, কিন্তু দর্শকের চোখে এখনও ফেলুদা বলতে মনে পরে যায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কেই। সত্যজিৎ রায়ের বইয়ে পাওয়া ফেলুদা চরিত্রের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের হুবহু মিল দর্শকদের মনে আজও অমলিন। এরপর একাধিক ফেলুদা এসেছে, কিন্তু জায়গা নিতে পারেননি সত্যজিৎ-এর সৃষ্টি করা ফেলুদা চরিত্রে। গোয়েন্দা চরিত্র তো বহু রয়েছে কিন্তু আট থেকে আশি সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন ফেলুদা, তোপসে ও জটায়ু। বাচ্চা থেকে বুড়ো ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’এর প্রতিটি অভিযানের সঙ্গী হতে পেরেছেন সকলেই।
ফেলুদার প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল বইয়ের পাতায়। এরপর সেখান থেকে সত্যজিৎ রায় তাঁকে পর্দায় নিয়ে আসেন। তাঁর হাত ধরেই ১৯৭৪ সালে ‘সোনার কেল্লা’তে প্রথম দেখা মেলে প্রদোষ মিত্তির অ্যান্ড কোং এর। ফেলুদার চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তোপসের ভূমিকায় সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় আর জটায়ু ওরফে লালমোহন গাঙ্গুলী সন্তোষ দত্ত। এর ঠিক পাঁচ বছর পর মুক্তি পায় জয় বাবা ফেলুনাথ। সেখানেও দেখা মিলেছিল সেই থ্রি মাস্কেটিয়ার্সের। না, এরপর আর ফেলুদাকে পর্দায় নিয়ে আসেননি সত্যজিৎ রায়।
আরও পড়ুন: Satyajit Roy: ঘি মাখা মুড়ি-বিউলির ডাল, আরও কী খেতে ভালোবাসতেন সত্যজিৎ রায় ?
যদিও ফেলুদার একাধিক গল্প ছিল লেখক-পরিচালকের ঝুলিতে। যা নিয়ে পরবর্তী কালে তাঁর ছেলে সন্দীপ রায় সহ বেশ কিছু পরিচালক সিনেমা করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন। এই দুটি ছবিই বাংলা চলচ্চিত্র জগতে আইকনিক হয়ে রয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই দুটি ছবির পর ফেলুদাকে আর পর্দায় ফেরালেন না কেন সত্যজিৎ? কী রহস্য রয়েছে এর পিছনে।
আরও পড়ুন: Rekha Chatterjee Passed Away: তোপসের মা রেখা চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত, সত্যজিৎ রায়ের পরিবারে শোকের ছায়া
এর পিছনে থাকা কারণ হল কিংবদন্তী অভিনেতা সন্তোষ দত্ত। যাঁকে জটায়ুর ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল সত্যজিৎ-এর ফেলুদাতে। জটায়ুর চরিত্রটি তাঁর কথা ভেবেই এঁকেছিলেন মনে হয় সত্যজিৎ। আর বলা বাহুল্য লালমোহনবাবু হিসাবে এখনো সন্তোষ দত্তকেই চেনেন অধিকাংশ সিনেপ্রেমীরা। অনেকেই হয়ত জানেন না যে অভিনয়ের পাশাপাশি সন্তোষ দত্তের পেশা ছিল ওকালতি। জানা যায়, সোনার কেল্লায় অভিনয়ের প্রস্তাব যখন আসে তাঁর কাছে তখন তিনি একটি হত্যাকাণ্ডের মামলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন আইনজীবী সন্তোষ দত্ত। কিন্তু সত্যজিৎ যখন ফোন করে সন্তোষ দত্তকে জটায়ুর চরিত্রের জন্য প্রস্তাব দেন, তখন তা না করেনই বা কী করে অভিনেতা। শেষে খুনের মামলার শুনানি ছেড়ে সোনার কেল্লা সিনেমার শ্যুটিং শুরু করেন।
আরও পড়ুন: Aparajito Trailer: সত্যজিৎ নস্ট্যালজিয়া! 'পথের পাঁচালী'-র স্মৃতি উস্কে প্রকাশ্যে 'অপরাজিত'-র ট্রেলার
বাকিটা ইতিহাস। কিন্তু ১৯৭৯ সালে জয় বাবা ফেলুনাথ মুক্তির পর ১৯৮৮ সালে প্রয়াত হন সন্তোষ দত্ত। এখানেই ছেদ পড়ে সত্যজিৎ-এর ভাবনায়। তিনি এখনকার পরিচালকদের মতো অন্য অভিনেতাদের মধ্যে তাঁর সৃষ্ট জটায়ুকে আর দেখতে পারেননি। আর কাউকে জটায়ু বলে ভাবতে পারেননি সত্যজিৎ রায়। আর তাই সন্তোষ দত্তের মৃত্যুর পরে ফেলুদা নিয়ে কোনও সিনেমা তৈরি করেননি অস্কারজয়ী পরিচালক সত্যজিৎ রায়। এরপরে আবার সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায় পর্দায় ফেরান ফেলুদাকে। তবে ফেলুদা, তোপসে, জটায়ু সকলের চরিত্রেই আসেন নতুন অভিনেতা।