
বাঙালিদের উৎসব-পার্বন শেষ হতে না হতেই অবাঙালিদের ছটপুজো শুরু হয়ে গেল। বিশেষ করে বিহারি সম্প্রদায় এই ছটপুজো ভীষণ নিষ্ঠা সহকারে ও ভক্তিভরে করে থাকেন। তবে টলিপাড়ার এক নায়িকা রয়েছেন যিনি বিয়ের পর থেকে এই ছটপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত থাকতে ভীষণ ভালোবাসেন। তিনি ছোটপর্দার অত্যন্ত চেনা মুখ, কাজ করেছেন সিনেমা ও ওয়েব সিরিজেও। সেই মিষ্টি নায়িকা মিমি দত্ত bangla.aajtak.in-কে শোনালেন তাঁর ছটপুজোর অভিজ্ঞতা এবং কীভাবে তিনি যুক্ত হয়ে পড়লেন এই রীতিটার সঙ্গে।
গত বছর মিমির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট দেখে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। নাক থেকে সিঁথি পর্যন্ত টানা মেটে রঙা সিঁদুর, অবাঙালি কায়দায় শাড়ি পরে গঙ্গার ঘাটে ছটপুজোতে সামিল হয়েছেন তিনি। এই বছরও কি ছটপুজো করবেন? মিমি বলেন, 'ছটপুজো আমি পালন করি না, শুধু যোগ দিই। ছটপুজো আমার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা করেন। আমার জা এবং শাশুড়ি করেন। এই বছর ওমের (ওম সাহানি) দাদু ও ঠাকুমা দুজনেই একসঙ্গে মারা গিয়েছেন তাই অশৌচ চলছে। কিন্তু অশৌচ হলেও আর উপবাসটা শ্বশুরবাড়ির লোকেরা করবেন। আর পুজোটা শ্বশুরবাড়ির অন্য আত্মীয়রা করবেন, অশৌচের সময় যা যা নিয়ম পালন করতে হয় সেগুলো।' মিমি এও জানান, 'আমি ছটপুজোতে যোগ দিই, মানে আমি ঘাটে যাই, আগের দিন শ্বশুরবাড়ি চলে যাই, ঠেকুয়া বানানোর কাজে থাকি। তবে উপোস ও গঙ্গায় নেমে যে পুজোটা করা হয়, ওটা আমি করিনা। আর ছটপুজো করতে হলে এর যা যা রীতি-রেওয়াজ করতে হয় অর্থাৎ আমাকে দশদিন ধরে নিয়মটা পালন করতে হত, কিন্তু সেটা তো এখনও পর্যন্ত কোনও বছরই করে উঠতে পারিনি। কালীপুজোর পরের দিন থেকে যেটা শুরু হয়। তাতে ওমের বা তাঁর বাড়ির লোকজনের কোনও অসুবিধা নেই। ছটপুজো থেকে ঠেকুয়া বিতরণ করা পর্যন্ত পুরো কাণ্ড কারখানায় আমি থাকি।'
ঠেকুয়া তৈরি করেন মিমি? মিমি বলেন, 'ছোট থেকে বড় সকলেই এই ঠেকুয়া বানানোর কাজে হাত লাগায়। নিজের হাতে ঠেকুয়া বানানো বলতে শাশুড়ি মা ডো-টা মেখে দেন আমি চেপে চেপে ঠেকুয়া বানিয়ে ভাজা, ওটা আমি করি। তবে এখন ডো-টাও মাখতে পারব। অনেক কিলোর ডো হয় তো। প্রচুর ঠেকুয়া বানানো হয় রাত জেগে, আমি দেখি সবটা। আবার শাশুড়ি মাকে যখন এখানে নিয়ে আসি তখন ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু-বান্ধবদেরও ঠেকুয়ার দাবি থাকে আমার কাছে। এমনও হয়েছে যাঁরা সারাবছর যোগাযোগ করেন না, তাঁরাও ছটপুজোর দুদিন আগে আমার মেসেজ ফোন করে ঠেকুয়ার কথা মনে করায়। যে কোনও প্রকারে আমার থেকে ঠেকুয়া তাঁরা নিয়ে যায়। আমি তো সবাইকে বলি যে আমার শাশুড়ির হাতের ঠেকুয়া সবচেয়ে ভাল। এর থেকে ভাল ঠেকুয়া আমি আর খাইনি। শুধুমাত্র মানুষকে দেওয়ার জন্য আমার শাশুড়ি মা ভালোবেসে ঠেকুয়া তৈরি করেন। আর এগুলো তো কুকিজের মতো রেখে খাওয়া যায়। আমরা তো অনেক দিন পর্যন্ত এই ঠেকুয়া খাই।'
বাঙালি মেয়ে মিমি, বিয়ে হয়েছে অবাঙালি পরিবারে, তাই ছটপুজো একেবারেই নতুন ছিল তাঁর কাছে বিয়ের পর। অভিনেত্রী বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই এই ছটপুজোর সঙ্গে আমি পরিচিত নই, কারণ আমার পরিবার বাঙালি। তবে ওমের সঙ্গে বিয়ের পর একটা নতুন জিনিস জানতে বেশ ভালই লেগেছে আমার। জানতে জানতে জেনেছি এই পুজোটাকে। বাঙালিদের পুজো-পার্বন সম্পর্কে যেমন আমি জানি তেমনি ওমের পরিবারেও এমন অনেক পুজো আছে, যে সেলিব্রেট করা হয়। এখন তো পুরোই মিশে গেছি এই সংস্কৃতির সঙ্গে, বেশ ভাল লাগে। প্রথম প্রথম ওম গঙ্গায় নিয়ে যেতে চাইত না, আসলে অত ভিড় হয়তো, গঙ্গার ঘাটে সারারাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ওম ভাবত আমার কষ্ট হবে। তারপর আমি নিজে থেকেই বলি যে আমি যাব। এখন তো আমার বাবাও যায়। এ বছর তো দাদা-বৌদি, আমার অনেক বন্ধুরাও যাবে। সবাই যেতে খুবই পছন্দ করে। মিমি বলেন, ওম অবাঙালি হলেও ওঁর পুরোটাই বাঙালি। ওমের ছোটবেলার তিন বন্ধু বাঙালি, বাঙালি পাড়াতে বড় হয়েছে আর ওম বিয়েও করেছে বাঙালি মেয়েকে। তাই ওম নিজেই বাঙালি হয়ে গেছে। আর আমি একটু একটু যেন বিহারি বউ হয়ে যাচ্ছি। আমি গত বছর ধরে এই মেটে সিঁদুরটা ছটপুজোর দিন পরি। আগে কোনওদিন পরা হয়নি। নাক থেকে টানা সিঁথি পর্যন্ত পরি মেটে সিঁদুর। এই বছরও পরব। আমার খুব ভাল লাগে। আমার ভিন্ন সংস্কৃতির সমস্ত কিছুই ভাল লাগে।'
তবে মিমি জানিয়েছেন যে দৈনন্দিন জীবনে তিনি লাল সিঁদুরই পরেন। একমাত্র কোনও উৎসব ও ছটপুজোর সময় এই মেটে রঙের সিঁদুর পরেন তিনি। এমনকী নায়িকার শাশুড়ি লাল সিঁদুর ও শাঁখা-পলাও পরেন। একমাত্র ছটপুজোর দিনই উনি মেটে রঙা সিঁদুর পরেন। বরং ওমের পরিবারে শাঁখা-পলা পরার রেওয়াজ নেই। আর মিমি ছটপুজোর দিন হাত ভর্তি করে মাটির চুড়ি পরেন, যেটা প্রতি বছর শাশুড়ি মা তাঁকে দেয় আর সঙ্গে নতুন বস্ত্র তো থাকবেই।
এখন তো অনেক তারকারাই অবিবাহিত হয়েও শাঁখা-পলা, সিঁদুর পরছেন? মিমির কথায়, 'বিবাহিত ও অবিবাহিত অভিনেত্রীরা অনেকই হয়ত সিঁদুর পরে শ্যুটিং করেন এবং শ্যুটিংয়ের পর সেটা অনেক সময়ই না তুলে চলে আসেন। সিঁদুরটা রয়ে যায়, মোছা হয় না। কারণ মুছতে হলে শ্যাম্পু করতে হবে। সেটা হতে পারে কারণ। তখন তাঁকে দেখে আমরা এটা চিন্তা করি না হয়তো তিনি শ্যুটিং থেকেও আসতে পারেন। সেই কারণে অনেক সময় মনে হয় যে অবিবাহিতরা কেন সিঁদুর পরে আছেন। আর শাঁখা-পলা এখন অনেকেই পরছেন, শাঁখা পরার অন্য কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ থাকতে পারে, অনেকেই স্টাইলিংয়ের জন্য পরছেন। সেটা ভালই লাগে। আমার কথা হচ্ছে সাজগোছটা যদি তাঁকে আনন্দ দেয়, তাহলে সে করুক, লোকের সমস্যা কোথায়। আমি এটা নিয়ে কী ব। আজকে ধর আমি কোনও শাড়ি পরলাম তার সঙ্গে শাঁখা-সিঁদুর ম্যাচ হলে আমি তবেই পরি নয়তো পরি না। শাঁখা-পলা ও সিঁদুর বিবাহিত বা অবিবাহিতরা পরা না পরা থেকেও বড় কথা হল নিজেকে সেটা মানাচ্ছে কিনা আর সে পরতে সেটা ভালোবাসছে কিনা। এটা নিয়ে এত বিচারসভা বসানোর দরকার কি। জীবন একটাই, যে যেভাবে বাঁচতে ভালোবাসছে, তাঁকে সেভাবে বাঁচতে দেওয়া হোক। কারোর ক্ষতি না করে কেউ যদি ভাল থাকে থাকুক না।'