পশ্চিম মেদিনীপুরে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে রীতিমতো বিপদে পড়লেন অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু। স্থানীয় জনতার রোষের মুখে পড়েন অভিনেতা। সেখান থেকে কোনওমতে প্রাণ বাঁচিয়ে ফেরেন। এক ক্লাবের অনুষ্ঠানে গিয়ে জুতো পরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তিতে মালা দেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় অভিনেতাকে নিয়ে বিতর্ক। ২১ বছরের কেরিয়ারে মেদিনীপুরে একাধিক অনুষ্ঠান করেছেন বিশ্বনাথ, কিন্তু এই প্রথম ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হলেন। ২৫ জানুয়ারি রাতে ঠিক কী ঘটেছিল? bangla.aajtak.in-কে জানালেন বিশ্বনাথ।
নেতাজি তরুণ সঙ্ঘ ক্লাবের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শনিবার বিশ্বনাথ বসুর অনুষ্ঠান ছিল। সেদিনের রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বিশ্বনাথ বলেন, '২৫ জানুয়ারি রাতে পটাশপুরের পাহাড়িচকে রাত ১১টা নাগাদ আমার ঢোকার কথা ছিল। সেখানে সুন্দর অনুষ্ঠান চলছিল। গাড়ি থেকে নামতেই আমার বাউন্সররা বলেন যে আয়োজকরা বলছেন নেতাজির গলায় মালা দেওয়ার জন্য।' অভিনেতার কথায়, স্টেজের পাশেই ছিল নেতাজির মূর্তি, অভিনেতা ভেবেছিলেন তিনি জুতোটা খুলেই মালা দেবেন, কিন্তু স্টেজে উঠতে হবে আবার ঠান্ডাও ছিল এইসব ভেবে জুতো পরেই বিশ্বনাথ নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করেন। সেই সময় কোনও গণ্ডগোল হয় না, সবাই ফুল ছোঁড়ে। এরপর অভিনেতা বুঝতে পারেন যে যিনি তাঁকে নিয়ে এসেছেন সেই মলয় রায় মদ্যপ অবস্থায় রয়েছে। সে ক্লাবের কেউ নয়, আয়োজক।
বিশ্বনাথের কথায়, অসম্ভব ভাল ক্লাব, দর্শক ভাল। পুরো অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর তিনি গাড়িতে উঠতেই অশান্তি শুরু হয়। হঠাৎ মলয় রায় এসে তাঁকে জানান যে ক্লাবের সেক্রেটারি অভিনেতার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চান। অভিনেতার কথায়, সেক্রেটারিও মদ্য়প অবস্থায় ছিল। তিনি এসে বিশ্বনাথকে বলেন তিনি কেন জুতো পরে নেতাজিকে মালা দিয়েছেন। বিশ্বনাথ এর জন্য সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চান। এর সঙ্গে এও জানান পলাশী থেকে সোজা অনুষ্ঠানের জায়গায় আসায় তিনি ক্লান্তও। কিন্তু এরপরই পরিস্থিতি অন্য মোড় নেয়। হঠাৎ করে অভিনেতার ওপর চড়াও হয় সবাই এবং তিনি কেন এই কাজ করেছেন তা জানতে চাওয়া হয়। বিশ্বনাথকে তুই তোকারি করেও সম্বোধন করা হয়। বিশ্বনাথ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য বারংবার ক্ষমা চাইতে শুরু করেন এবং অভিনেতা জানান যে তিনি নেতাজিকে খুবই শ্রদ্ধা করেন ভুলবশত এটা হয়েছে। অভিনেতা জানান যে আয়োজকদের মধ্যে একজন এও বলে যে টাকা দিয়ে নিয়ে এসেছেন তাঁকে। যারা ঝামেলা করছিল তাদের মধ্যে একজন বিশ্বনাথকে খালি পায়ে নেতাজিকে মালা দিয়ে স্টেজে উঠে ক্ষমা চাওয়ার কথাও জানান। এককথায় চরম হেনস্থা হতে হয় অভিনেতাকে
বিশ্বনাথের কথায়, '২১ বছর ধরে শো করছি, মেদিনীপুরের জন্য আজকে আমি এই জায়গায়, এখানে হাজারটা শো করেছি, প্রথমবার এই ধরনের ঘটনা ঘটল।' বিশ্বনাথের অভিযোগ, মারমুখী হয়ে ওঠে তারা। মৃত্যু দর্শন করেন তিনি। তবে অবস্থা বেগতিক দেখে বিশ্বনাথ রাস্তার মাঝখানে বসে পড়েন এবং বলেন, 'মেরে ফেলুন আমাকে। যা করার করে নিন। এরপরই একজন পুলিশ এসে আমাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে যায়।' তখনই অভিনেতার গাড়ি ধাওয়া করে জনতা। গোটা ঘটনায় আতঙ্কিত অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু। অভিনেতা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের দ্বারস্থ হন। সেখানকার এসপি ধৃতিমান সরকারের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে অভিনেতার। তিনি আস্বস্ত করেছেন এই ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিনেতা জানিয়েছেন, ক্লাবের তরফ থেকে থানায় এসে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া হয়েছে।