গোটা সোমবার জুড়ে শিরোনাম দখল করে ছিলেন উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক। রবিবার আরজি কর-কাণ্ডের আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের নিয়ে করা তাঁর বক্তব্যের পর রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। টলিউডের একাংশ ক্ষোভ উগরে দেন কাঞ্চনের বিরুদ্ধে। তাঁকে বয়কটের হুমকি দেন কাঞ্চনের সহ অভিনেতারাই। কাঞ্চনের সমালোচনা শুরু হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় গর্জে উঠেছিলেন তাঁর স্ত্রী শ্রীময়ীও। তবে সোমবার রাতেই একেবারে ভোল বদলে ফেললেন কাঞ্চন। এক ভিডিও বার্তায় কাঞ্চন বলেন, গতকাল একটি ধর্নামঞ্চে আমি কিছু মন্তব্য করে ফেলি। যা নিয়ে সমালোচনা হয়। আমি আমার বক্তব্যের জন্য দুঃখিত এবং লজ্জিত। আর কাঞ্চনের পাশাপাশি স্ত্রী শ্রীময়ীও তাঁর সুর নরম করে জানিয়ে দেন যে তিনিও কাঞ্চনের মন্তব্যকে মোটেও সমর্থন করেন না।
রবিবার এক ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে কাঞ্চনকে বলতে শোনা গিয়েছে, যাঁরা কর্মবিরতি করছেন বা শাসকদলের বিরুদ্ধে (কথা) বলছেন, তাঁরা সরকারি বেতনটা নিচ্ছেন তো? না কি নিচ্ছেন না? পুজোর বোনাসটা নেবেন তো? আমার প্রশ্ন এগুলো। আর এই মন্তব্যের পরই বিভিন্ন মহলে কাঞ্চনকে নিয়ে সমালোচনা তুঙ্গে ওঠে। উত্তরপাড়ার বিধায়কের বক্তব্যের প্রতিবাদে টলিপাড়ার অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন। আর স্বামীর যখন বিপদ তখন ময়দানে স্ত্রী শ্রীময়ী নামবেন না তা কী করে হয়। সোমবার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে শ্রীময়ী রীতিমতো গর্জে ওঠেন। তবে কিছু ঘণ্টার মধ্যেই শ্রীময়ীর সুরও পাল্টে যায়।
কাঞ্চনের ভিডিও বার্তার পাশাপাশি শ্রীময়ীও সোশ্যাল মিডিয়া পেজে কাঞ্চনকে নিয়ে পোস্ট করেন। তিনি লেখেন যে সকাল থেকেই শ্রীময়ী প্রচুর ফোন পাচ্ছেন কাঞ্চনের করা বক্তব্যকে সমর্থন করি কিনা এই নিয়ে। শ্রীময়ী বলেন, কাঞ্চন ডাক্তারদেরকে নিয়ে যে কথাটা বলেছে যে সরকারি বেতন বা বোনাসের কথা উল্লেখ করে সেটাতে আমি একদমই সহমত পোষণ করছি না, এটা বলা হয়তো ওর ভুল হয়েছে, এটা অন্যায় হয়েছে, তবে একটা কথা বলে রাখা উচিত প্রত্যেকটা মানুষের প্রত্যেকদিন হয়তো মেজাজ ঠিক থাকে না কারণ লাস্ট যেদিন IMU এর বনধ্ ছিল সেদিন কাঞ্চনের এক পরিচিত ভাতৃস্থানীয় বলা যেতে পারে তার মায়ের internal bleeding শুরু হয়েছিল ব্রেন থেকে এবং তাকে ডক্টরের কাছে অ্যাডমিট করার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছে বিভিন্ন হসপিটাল এবং সেখানে তার চিকিৎসা পায়নি সকাল থেকে ইমারজেন্সি বিভাগ বন্ধ ছিল এবং সেখানেও অবরোধ চলছিল। তো সেই ছেলেটি বারবার কাঞ্চনকে ফোন করছিল যে আমার মাকে বাঁচাও কাঞ্চন দা, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সকালের ঘটনা এটা, বিকেলবেলা পাঁচটা নাগাদ তার মা মারা যায়। তখন সে কাঞ্চনকে লেখে থ্যাংক ইউ কাঞ্চনদা আর কোন মেডিকেল সহযোগিতার জন্য তোমাকে বারবার বলবো না আর লাগবেও না, আমার মা-ই চলে গেল যার জন্য এত লড়াই ছিল।
এরপর শ্রীময়ী কাঞ্চনের হয়ে সাফাই দিতে গিয়ে বলেন, কাঞ্চনকে অনেকেই এই কদিনে সকালবেলা ও রাত্রিবেলা তো অনেক রাত পর্যন্ত ফোন করে হসপিটালে অ্যাডমিশনের জন্য বলেছে বিভিন্ন জেলা থেকে, হয়তো পরিস্থিতিটাই এরকম নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারেনি এবং ভুলবশত হিট অফ দ্য মোমেন্ট বলে দিয়েছে। কিন্তু এটা কোন কাউকে ছোট করার জন্য বা কাউকে সাপোর্ট করার জন্য বা যারা প্রতিবাদ করছেন। যারা রাস্তায় নেমেছেন প্রতিবাদের জন্য তাদেরকে ছোট করার জন্য বা তাদেরকে ক্রিটিসাইজ করার জন্য বা কোন অন্যায়কে সাপোর্ট করার জন্য কথাগুলো বলেনি। এবং কোন ডাক্তারকে ছোট বা অপমান করার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলা হয়নি। ডাক্তারদের জুনিয়র বা সিনিয়র discrimination করার জন্য এগুলো বলা হয়নি। কাঞ্চন-পত্নী এও বলেন, আমাদের সাথে অনেক ডাক্তারের খুব সুসম্পর্ক তারাও এই ঘটনার জন্য আমাদেরকে ফোন করেছে, তাদেরও খারাপ লেগেছে, আর এটাই স্বাভাবিক, তারা ভালবাসেন বলে হয়তো ফোন করে খবর নিয়েছেন। এটাই বলব কয়েকদিন যাবত যে ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ব্যক্তিগত কাঞ্চনকে, যা মানসিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে সেটার পরিপ্রেক্ষিতেই হয়তো একটা ভাবনা-চিন্তা থেকে একটা দুঃখ, ক্ষোভ বেরিয়ে গেছে। ওর কথাগুলো ভেবে বলা উচিত ছিল, slip of tongue হয়েছে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী এবং কাঞ্চনের হয়ে আমিও ক্ষমা চাইছি। আবারও বলছি কেউ ভুল বুঝবেন না……।
কাঞ্চন ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন যে তিনি কোনও সাফাই দেওয়ার জন্য এই ভিডিও করেননি। তিনি অন্তর থেকে অনুভব করতে পেরেছেন তাঁর ত্রুটি। এর পরেই তিনি ধৈর্যচ্যুতির সঙ্গত কারণ তুলে ধরেন। যেটা শ্রীময়ীও তাঁর পোস্টে তুলে ধরেছেন। তবে অনেকেই মনে করছেন সোমবার কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার পরই কাঞ্চন তাঁর সুর বদল করতে বাধ্য হন।