টেলিভিশন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার মৃত্যুর পর কেটে গেছে প্রায় নয় মাস। এখনও তিনি বেঁচে আছেন সকলের মনে। লড়াকু মেয়েটার স্মৃতি এখনও তরতাজা। নেটমাধ্যমে এখনও ঘুরে বেড়ায় তাঁর নানা ছবি, ভিডিও। এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে পর্দার জাহ্নবীকে দেওয়া হল মরণোত্তর বিশেষ কৃতী সম্মান। ঐন্দ্রিলার মায়ের হাতে এই সম্মান তুলে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন পুরস্কার পেলেন প্রয়াত অভিনেত্রীর বন্ধু- প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরীও।
২৪ অগাস্ট আয়োজিত হয় এবছরের টেলি আকাদেমি অ্যাওয়ার্ডস। এদিন ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে হাজির ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবছর মোট ৪১ ক্যাটাগরিতে ৪৬ জনকে সম্মান জানানো হয়। নিয়মিত পুরস্কারের পাশাপাশি আজীবন স্বীকৃতি এবং মরণোত্তর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে শিল্পীদের।
গত বছর 'অসাধারণ প্রত্যাবর্তন' পুরস্কার নিতে টেলি আকাদেমি অ্যাওয়ার্ডসের মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। এবছর তিনি রয়েছেন না ফেরার দেশে। লড়াকু অভিনেত্রীকে দেওয়া হল মরণোত্তর কৃতী সম্মান। বরহমপুর থেকে এই সম্মান গ্রহণ করতে হাজির হয়েছিলেন তাঁর মা ও বাবা। মঞ্চে উঠে পুরস্কার নেওয়ার সময়ই কান্নায় ভেঙে পড়েন শিখা শর্মা। এদিন একই মঞ্চে পুরস্কৃত হয়েছেন সব্যসাচীও। এমনকী মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা যায় সব্যসাচীর প্রশংসা। ঐন্দ্রিলার মায়ের সঙ্গেই বসেছিলেন সব্যসাচী। পুরস্কার নিয়ে রাতেই বহরমপুর ফিরে যায় ঐন্দ্রিলার পরিবার।
টেলি আকাদেমিতে সেরা অনুপ্রেরণামূলক চরিত্রের পুরস্কার পান পর্দার রামপ্রসাদ- সব্যসাচী চৌধুরী। এদিন মঞ্চে মমতার মুখে শোনা যায় অন্যান্য মেগার সঙ্গে সব্যসাচীর ধারাবাহিকের নাম। বিশেষভাবে প্রশংসা করে তিনি বলেন, "রামপ্রসাদ সব্যসাচীর তুলনা হয় না...।" এপ্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে সব্যসাচী বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর চরম ব্যস্ততার মধ্যেও যে আমার কাজ দেখেছেন এবং মনে রেখেছেন তা আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি।"
ঐন্দ্রিলার প্রয়াণের পর তাঁকে নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেন না সব্যসাচী চৌধুরী। তবে এদিন তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "২৫ বছর সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ও চলে গেল। এর মধ্যে ও যে কটা কাজ করেছে তাতে ওকে মানুষ মনে রেখেছে। একজন শিল্পী হিসেবে এটা বড় প্রাপ্তি। ওর বাবা মা এসেছিলেন। এটা তাঁদের কাছে একদিকে যেমন কষ্টের মুহূর্ত, তেমন গর্বেরও বটে।"
এক সংবাদমাধ্যমকে ঐন্দ্রিলা শর্মার মা বলেন, "পুরস্কার নিয়ে একটুও ভাল লাগেনি। এটা কি বয়স মরণোত্তর সম্মান পাওয়ার বয়স আমার মেয়েটার? খুব কষ্ট হচ্ছে। এমন সম্মান তো মঞ্চে উঠে ওর ছেলে-মেয়ের নিতে যাওয়ার কথা ওর বয়সকালে। সেখানে আমাদের নিতে হল। এই কষ্টটা যে কী করে কমবে, কিছুতেই বুঝতে পারছি না। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্তরিকতার জবাব নেই।"
প্রসঙ্গত, গত ২০ নভেম্বর দুপুর ১২টা ৫৯ মিনিটে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। আচমকা ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার পর, ১ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অভিনেত্রী। এর আগে দু'বার ক্যান্সারকে হারিয়ে কাজে ফিরেছিলেন ঐন্দ্রিলা। পরিবার -কাছের বন্ধুরা ছাড়াও অভিনেত্রীর সুস্থতা কামনায় করেছিলেন তারকা থেকে শুরু করে নেটিজেনরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। অনুপ্রেরণা হয়ে সকলের মনে রয়ে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা।