উত্তম কুমারের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের জুটি বাংলা ছবির ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে প্রথমবার একফ্রেমে দেখা যায় তাদেরকে। তারা একসঙ্গে ৩১টি ছবিতে অভিনয় করেন।
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জয়ী প্রথম বাঙালি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবির জন্য এই পুরস্কার পান তিনি।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেবদাস’ অবলম্বনে বলিউডে বেশ কয়েকটি ছবি তৈরি হয়েছে। এতে পাবর্তী বা পারু-র চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনেকে। শেষতম ছবিতে এই চরিত্রে দেখা গিয়েছিল ঐশ্বর্য রাই-কে। তবে হিন্দি ছবিতে প্রথম এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুচিত্রা।
‘দেবদাস’ই ছিল সুচিত্রা সেন অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি। এ ছবিতে পার্বতী-র চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি।
সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে অভিনীত ‘আঁধি’ মুক্তি পাওয়ার পর গুজরাটে ২০ সপ্তাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়েছিল। বিহারের তারকেশ্বরী সিংয়ের জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গল্প তৈরি হলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মতো মেক-আপে সামনে আসেন সুচিত্রা। সিনেমার বেশ কয়েকটি দৃশ্য নিয়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়। তাই রাতারাতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় ছবিটিকে। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ছবিটি গুজরাটে সম্প্রচার করা হয় টেলিভিশনে।
১৯৭৮ সালে স্বেচ্ছায় অন্তরালে যাওয়ার পর মাত্র ২ বার জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল সুচিত্রা সেনকে। ১৯৮০ সালে উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর তিনি জনসমক্ষে আসেন। মহানায়কের মরদেহের পাশে মাঝরাত পর্যন্ত বসে ছিলেন সুচিত্রা। দ্বিতীয়বার জনসমক্ষে আসেন ১৯৮৯ সালে তাঁর আধ্যাত্মিক গুরু ভরত মহারাজের মৃত্যুর পর।
ডেট নিয়ে সমস্যা হওয়ায় সত্যজিৎ রায়ের ‘দেবী চৌধুরানী’ ছবিতে কাজ করতে পারেননি সুচিত্রা সেন। এ কারণে অস্কারজয়ী পরিচালক ছবিটি আর তৈরি করেননি। সত্যজিতের সঙ্গে কাজ না করতে পারার আক্ষেপ চিরকাল ছিল সুচিত্রার।
‘উত্তর ফাল্গুনী’ ছবিতে যৌনকর্মী পান্নাবাই ও তার কন্যা আইনজীবী সুপর্ণার দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেন সুচিত্রা সেন। এই একটি ছবিতেই ডাবল রোলে দেখা গিয়েছে মহানায়িকাকে।
২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন সুচিত্রা। নিয়ম অনুযায়ী দিল্লিতে গিয়ে পুরস্কার নিতে হত তাঁকে শুধুমাত্র জনসমক্ষে আসতে হবে বলে এই বিরল পুরস্কার তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
১৯৫২ সালে নির্মিত সুচিত্রা সেনের প্রথম বাংলা ছবি ‘শেষ কোথায়’ কখনও মুক্তি পায়নি।