মাথায় লম্বা উশকো খুশকো চুল, মুখ ভর্তি লম্বা দাড়ি, হাতে ধারালো অস্ত্র, অন্যদিকে করছেন ঘোর সওয়ারি। চোখে- মুখে প্রতিশোধের আগুন। এভাবেই নয়া লুকে বৃহস্পতিবার সামনে এসেছিলেন দেব। এবার রঘু ডাকাত রূপে সামনে আসছেন অভিনেতা- প্রযোজক তথা সাংসদ। একথা এখন সকলেরই জানা। ২০২৫-র দুর্গা পুজোয় আসছে বহু প্রতীক্ষিত ছবি 'রঘু ডাকাত'। স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ্যে এল ছবির রক্ত গরম করা টিজার।
'লোকে নাকি বলে, রঘু মা কালীর ব্যাটা....'। টিজারের শুরুতেই শোনা যায় এই সংলাপ। এদিকে দেবী কালীর উপাসনা করছে রঘু। কোনও রকম অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে নারাজ সে। বিদ্রোহ তার শিরায়, প্রতিশোধ তার রক্তে। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে কীভাবে গর্জে উঠে, গরিব মানুষদের রক্ষা করতে, সে হাতে তুলে নেয় হাতিয়ার।
সিঁদুর মাখা কপাল, কখনও চাদরে ঢাকা মুখ, রক্তমাখা খড়্গ হাতে রঘু- দেবের হুঙ্কার, 'গরীবের রক্ত মাখা বন্ধ কর। আজকে শুধু চাবুক পড়েছে। এরপর রঘুর থাবা পড়বে'। মারকাটারি অ্যাকশন, টানটান উত্তেজনায় ভরা টিজার নিঃসন্দেহে দর্শকদের প্রত্যাশা অনেকাংশে বাড়াল 'রঘু ডাকাত'। টিজার থেকেই আন্দাজ পাওয়া যায়, এছবিতেও থাকছে 'খাদান'-র 'রাজার রাজা' কিংবা 'হায়রে বিয়া করলি কেনে' ধরণের গান। যা, হতেই পারে দেব- ভক্তদের পুজোর বড় প্রাপ্তি।
টিজারেই ছবির বাকি চরিত্রদের সঙ্গে পরিচয় করালেন পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্লভ রায়ের চরিত্রে থাকছেন ওম সাহানি, ডাকাত মা রূপে নজর কাড়বেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, এদিকে ডাকাত দলের নেত্রী গুঞ্জার ভূমিকায় রয়েছেন সোহিনী সরকার, রঘূর নায়িকা সৌদামিনীর চরিত্রে রয়েছেন ইধিকা পাল। খলচরিত্রে অহিন্দ্র বর্মনের ভূমিকায় চমক দিচ্ছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। বলাই বাহুল্য এরকম লুক কিংবা চরিত্রে এর আগে কখনও দেখা যায়নি অনির্বাণকে।
বছর চারেক আগে প্রথম শোনা যায়, রঘু ডাকাত রূপে সামনে আসবেন দেব। বারবার বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে গিয়েছিল ছবির শ্যুটিং। এরপর নানা জট কেটে, শুরু হয় ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ছবির শ্যুট। এসভিএফ ও দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্সের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি হচ্ছে ছবিটি।
অষ্টাদশ শতাব্দীর সময়কালে বাংলার সাধারণ মানুষের নিপীড়ন ও অবিচারের বিরুদ্ধে 'মসিহা' হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রঘু ডাকাত। 'লার্জার দ্যান লাইফ' এই কাল্পনিক গল্পের নায়ক রঘু আজও বাঙালিদের মনে বেঁচে আছেন। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র, তাই সেরা অভিনয় দক্ষতাটুকু দিয়েই নিজেকে উজার করে দেবেন দেব। এমনটাই আশা পর্দার নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী- দেবের। 'গোলন্দাজ' -এর চূড়ান্ত বক্স অফিস সাফল্যের ফর ফের জুটিতে কাজ করবেন ধ্রুব -দেব। বলাই বাহুল্য দর্শকদের প্রত্যাশাও থাকবে তুঙ্গে।
মা কালীর সঙ্গে রঘু ডাকাতের নাম বার বার উঠে আসে। কারণ তিনি ছিলেন কালীর একনিষ্ঠ উপাসক। এমনকী ডাকাতি করতে বেড়ানোর আগেও কালিকার পুজোই করতেন তিনি। এই রঘু ডাকাতকে ঘিরে রয়েছে নানা জল্পনা, গল্পকথা। বলা ভাল তাঁকে নিয়ে বাঙালিদের কৌতূহলের শেষ নেই। এখন যেন তিনি 'রহস্য' হয়েই রয়েছেন বাঙালি মননে। শোনা যায়, হুগলি জেলার মগরায় বাসুদেবপুর গ্রামে এক সময় প্রতিষ্ঠিত ছিল এক ডাকাত কালী মন্দির। যা মূলত রঘু ডকাতের মন্দির নামেই পরিচিত।
প্রচলিত কথা অনুযায়ী, ইংরেজরাও ভয় পেতেন এই রঘুকে। অত্যাচারী জমিদারদের থেকে লুথ করে আনা ধন -সম্পদ তিনি মিলিয়ে দিতেন গরীবদের মধ্যে। তবে শুধু হুগলী না, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ সহ আরও একাধিক জায়গায় রঘু ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরের কথা শোনা যায়। হাতেনাতে প্রমাণ না মিললেও, অনন্ত লোক মুখে শুনে যুগ যুগ ধরে এটাই বিশ্বাস করা হয় যে বাস্তবে তিনি ছিলেন।