এপার ও ওপার দুই বাংলার ছবিতেই নিজের অভিনয় দক্ষতার জন্যে, দর্শকের একেবারে মনের কাছের হয়ে উঠেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান (Jaya Ahsan)। ছবি ও চরিত্র বেছে নেওয়াতেও থাকে নতুনত্ব। বারে বারে ভিন্ন স্বাদ দর্শকদের সামনে পরিবেশন করেছেন নায়িকা।
প্রথমবার ভূত রূপে পর্দায় ধরা দিয়েছেন জয়া। ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেয়েছে সৌকর্য ঘোষাল পরিচালিত ছবি 'ভূতপরী'। অন্যদিকে একই দিনে বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে জয়ার আরও একটি ছবি 'পেয়ারার সুবাস'। ভূতে ভয় পান জয়া? ব্যস্ততা কীভাবে সামলান? bangla.aajtak.in- এর সঙ্গে মনখোলা আড্ডায় জয়া।
প্রশ্ন: এবার বাংলা- ওপার বাংলায় দুই দেশেই ছবি মুক্তি একই দিনে... অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।
জয়া: ঠিকই। একই দিনে দুই দেশে দুটি ছবি মুক্তি পেল। দারুণ অনুভূতি।
প্রশ্ন: আগে কখনও একই দিনে দুই দেশে ছবি মুক্তি পেয়েছে?
জয়া: এর আগে এক- দু'সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু একই দিনে মুক্তি, এরকম আগে কখনও হয়নি। সত্যি এটা সেলিব্রেট করার মতো একটা বিষয়।
প্রশ্ন: তাহলে তো বলতে হয় বড় পরীক্ষা...
জয়া: হ্যাঁ, বড় পরীক্ষা (জোড়ে হেসে)। এখনও ভয় লাগছে।
প্রশ্ন: এতটা ব্যস্ত শিডিউল সামলাচ্ছেন কীভাবে?
জয়া: আমি জানি না। এটা বোধ হয় ছবি ভালোবাসি বলে পেরে যাচ্ছি। না হলে সম্ভব ছিল না। একদিন- একদিন করে থাকছি আসলে এই দেশে।
প্রশ্ন: এত ট্র্যাভেলিংয়ে প্রচুর মানসিক চাপ পড়ে নিশ্চয়?
জয়া: মানসিকভাবে সত্যি চাপ পড়ে। তাই আমি ভাবছিলাম (হেসে) 'ভূতপরী'-র সেই ভূতটা হয়ে গেলে খুব ভাল হত। আমার এই ট্র্যাভেলিংয়ের ঝঞ্ঝাটটা নিতে হত না। ভূত হওয়ার সুবিধা এটাই মনে হয়। এরকম হলে আসলে মন্দ হত না।
প্রশ্ন: এদেশে 'ভূতপরী', বাংলাদেশে 'পেয়ারার সুবাস'- দুটোই আপনার সন্তান বলা যায়। তাও কোনটা বেশি কাছের কাজ?
জয়া: না না দুটো সমান। ওটা প্রায় সাত বছর পর মুক্তি পেয়েছে বহু জটিলতা কাটিয়ে। খুব ভাল কনটেন্ট। আর আমি এখানে ময়মনসিংহের ভাষায় কথা বলেছি, যেটা আমি একদমই জানতাম না। অন্যদিকে 'ভূতপরী'-র মাধ্যমেই প্রথম ভূতের চরিত্রে অভিনয় করলাম। এটাও দুর্দান্ত একটি চরিত্র। এই ছবিটার জন্য আমি নিজে অনেকদিন অপেক্ষা করেছিলাম, যে কবে দেখতে পাবো।
প্রশ্ন:সম্প্রতি বাংলাদেশের বিনোদেন জগতে অত্যন্ত খারাপ একটি খবর পাওয়া যায় । অভিনেতা আহমেদ রুবেলের আকস্মিক প্রয়াণ খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
জয়া: আমার চোখের সামনে, আমাদের প্রিমিয়ারেই ঘটেছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আবার অন্যদিকে, কেউ তো নিজের মৃত্যু সেলিব্রেট করতে পারে না। কিন্তু উনি নিজে সেলিব্রেট করে গেলেন। নিজের ছবির প্রিমিয়ারে, সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে সেদিনই তাঁর চলে যাওয়া...একজন অভিনেতার জন্য আমার মনে হয়, তাঁর সবচেয়ে পছন্দের জায়গা থেকে সে চলে গেলেন। তবে আমি মনে করি এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। যদিও যার মৃত্যু হয়, তাঁর কী অভিজ্ঞতা হয়, সে কী হারায়, আমরা তা জানি না। কিন্তু হারাই আসলে আমরা।
প্রশ্ন: জয়া আহসান কি মৃত্যুকে ভয় পায়?
জয়া: (একটু ভেবে) আমি মৃত্যুকে ভয় পাই অন্য সবার জন্য। আশেপাশে যারা আছে, তাঁদের জন্য। আমি ব্যক্তি- মানুষটা ভয় পাই না। আমার শরীরে আসলে ভীষণ মায়া। ভালোবাসা- প্রেম এগুলোর চেয়ে আমার কাছে মায়াটা বেশি জরুরি। মৃত্যুভয় হয়তো আমার অতটা নেই। কিন্তু কাছের মানুষদের থেকে দূরে যাওয়ার ভয় রয়েছে।
প্রশ্ন: আর ভূতে?
জয়া: না না ভূতে ভয় পেলে হবে না। (হেসে মজা করে) ছবিটা মুক্তি পাওয়ার পরে যদি কোনও ভূত বা এনার্জি সিটে বসে ছবিটা দেখে, তারা যদি দেখেন আমি চরিত্রটা ঠিক করে করতে পারিনি, তখন তারা খুব বিরক্ত হবেন এবং আমায় ভয় দেখাতে পারেন। কিন্তু তার আগে এখনও ভয় দেখায়নি আমায়।
প্রশ্ন: হরর ছবি দেখেন?
জয়া: হ্যাঁ সব ধরণের ছবি দেখি।
প্রশ্ন:'ভূতপরী'- ভূতের গল্প। কিন্তু কিছুটা মজা, কিছুটা ইমোশনও রয়েছে...
জয়া: ভয়ও আছে! শুধু মজার ভাবলে ভুল হবে। এখানে ভয়, মজা, ইমোশন, হিউমার সবটা রয়েছে। আমার মনে হয় দর্শক ভাল একটা প্যাকেজ পাবেন।
প্রশ্ন: বনলতা কী শেখাল জয়া আহসানকে?
জয়া: বনলতা আমায় অনেক কিছুই শিখিয়েছে। বনলতার জন্য মায়াও হবে ভীষণ। আবার ও প্রতিশোধ নিতে চায়। বনলতা হয়ে মানুষের আসল চরিত্রটা দেখতে পেয়েছি যে, আসলে আমরা জীবদ্দশায় মানুষকে যেমন দেখি, আসলে মানুষ সেরকম নয়। মানুষ কতটা খাঁটি- ভেজাল, এই সবটা বনলতা দেখে মৃত্যুর পরে। আমিও সেই অপেক্ষায় আছি। ভূত হয়ে মানুষের মস্তিষ্কের ভিতর ঢুকতে চাই এবং মানুষের আসল চেহারাটা দেখতে চাই।
প্রশ্ন: ছবিতে খুদে শিল্পী বিশান্তক আপনার সহ- অভিনেতা। ওকে গাইড করেছেন?
জয়া: আমি ওকে কী গাইড করব? ও আমায় গাইড করেছে। এখন ও অনেকটা বড় হয়ে গেছে। ও খুবই বুদ্ধিমান ছেলে। একদম বড়দের মতোই অভিনয় করেছে। সেভাবে বলতে গেলে ও ছবির হিরো, আমি হিরোইন। সেক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে কমবয়সী হিরো ও।
প্রশ্ন: দুই দেশেই এত কাজ করছেন এতগুলো বছর হল... কিছু তফাৎ বুঝতে পারেন?
জয়া: কোনও তফাৎ নেই। সব এক। ভাষা এক, সংস্কৃতি এক। কথা বলার ধরণ ছাড়া আর কিছু আলাদা নেই।
প্রশ্ন: বলিউডে পা রেখেছেন সদ্য। 'কড়ক সিং' দারুণ প্রশংসিত। আর কোনও কাজ আসছে?
জয়া: এখনই নতুন কিছু ফাইনাল হয়নি।
প্রশ্ন: এত দিক সামলানো কম ঝক্কি নয়। আপনার সাপোর্ট সিস্টেম কে?
জয়া: অবশ্যই মা। এছাড়া এনার্জিটা পাই পরিবার থেকে। সেই সঙ্গে আমার যে চারপেয় বাচ্চাগুলো আছে, ওদের দেখেও সমস্ত স্ট্রেস চলে যায়।
প্রশ্ন: বেশি ট্র্যাভেল করলে খাওয়াদাওয়া- স্কিনকেয়ার রুটিনও তো কিছু ঘেঁটে যায়...
জয়া: ডে-কেয়ার, নাইট-কেয়ার যেটুকু করার করি। এছাড়া আমি খাবার খাওয়ায় বিশ্বাসী। আমার মনে হয়, আমি যা খাবো সেটাই আমার মুখে দেখা যাবে। আমার যা জীবনযাপন, সেটাই আমার চেহারায় ছাপ পড়বে। আমি যদি রাতভর পার্টি করি, না ঘুমিয়ে আড্ডা দিই, তাহলে তো মুখ দেখে বোঝাই যাবে। সেটুকু মেনটেইন করতে হয়। এছাড়া আমি একটু শৃঙ্খলার ভিতর থাকি।
প্রশ্ন: সেই জন্যই কি টলিউডের পার্টিতে জয়া আহসানকে বেশি দেখা যায় না?
জয়া: না না সেটা নয়। আসলে টলিউডের পার্টিতে আমায় কেউ আমন্ত্রণই জানায় না।
প্রশ্ন: এজন্যে কিছুটা অভিমান আছে?
জয়া: (হেসে) না না সেরকম কিছু না। আমি মজা করেই বলছি। আসলে আমার যে কাজের ধরণ, যেহেতু দু'দেশেই কাজ করতে হয় সেজন্যেই। এছাড়া কাজের বাইরে আমার নিজের সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে এবং খুব কাছের বন্ধু- বান্ধবের সঙ্গে সময় কাটাতেই ভাল লাগে। সারাক্ষণ তো ক্যামেরার সামনে মেকআপ করেই সেজে থাকি। শ্যুটিংয়ের পরে আবারও যদি সেটা করতে হয়, সেটা আমার জন্য খুবই দুঃখজনক।
প্রশ্ন: ভারতের কোন কোন কাজ রয়েছে পাইপলাইনে?
জয়া: তিন- চারটে ছবি রয়েছে। 'পুতুলনাচের ইতিকথা', 'ওসিডি', 'কালান্তর' আসছে।