'খাকি দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার'-এ আইপিএস অর্জুন মৈত্রের চরিত্রে অভিনয় করে সকলের মন জেতার পর এবার নতুন রূপে সামনে আসতে চলেছেন সুপারস্টার জিৎ। এই প্রথম তাঁকে কোনও বায়োপিকে অভিনয় করতে দেখা যাবে। এবার বিপ্লবী অনন্ত সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করবেন জিৎ। ছবির নাম 'কেউ বলে বিপ্লবী, কেউ বলে ডাকাত'। পরিচালনায় পথিকৃৎ বসু।
১৯৬০-এর দশকের কলকাতার পটভূমিতে তৈরি হবে ছবিটি। সেসময় সমাজের প্রভাবশালীদের লক্ষ্য করে একের পর এক পরিকল্পিত ডাকাতির ঘটনা একদিকে ভয় এবং মুগ্ধতা উভয়কেই জাগিয়ে তোলে। এর পিছনে রয়েছে অনন্ত—একজন বয়স্ক, রহস্যময় ব্যক্তিত্ব যাকে কেউ অপরাধী হিসেবে ভাবেন। আবার কেউ তাঁকে ভাবেন মসিহা। ইন্সপেক্টর দেবী রাই যখন ঘটনার তদন্ত শুরু করেন, সেসময় দু'ভাগে ভাগ হয়ে যায় জনগণ। কেউ বলেন তিনি কি ডাকাত নাকি কোনও বিপ্লবীর পুনর্জন্ম হয়েছে?
এই ছবি অনন্তের অতীতের স্তরগুলিকে তুলে ধরবে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় মাস্টারদা সূর্য সেনের অধীনে একজন নিবেদিতপ্রাণ স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে এবং দুর্নীতি ও লোভের মুখে জাতির আদর্শ ভেঙে পড়তে দেখে একজন মোহভঙ্গ মানুষ হিসেবে। সেই আদর্শের বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে অস্বীকার করে, অনন্ত উগ্র ন্যায়বিচারের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তার যুদ্ধ দক্ষতা এবং কৌশলগত মন ব্যবহার করে একটি নতুন যুদ্ধে লড়াই করে সে। এবার, দরিদ্রদের জন্য। নিজের অতীত- বর্তমানের সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি, অনন্ত মুক্তি, বিদ্রোহ এবং ন্যায়বিচারের নৈতিক মূল্যের গল্পে পরিণত হয়।
ছবির গল্পটি অনন্তের জীবনের ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে উন্মোচন করে। মাস্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশনায় একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর সম্পৃক্ততা প্রকাশ করে। স্বাধীনতার পর, সামাজিক দুর্নীতি এবং সাধারণ মানুষের শোষণের দ্বারা হতাশ হয়ে, তিনি বঞ্চিতদের মধ্যে সম্পদ পুনর্বণ্টন করার জন্য ব্যাঙ্ক ডাকাতি এবং শক্তিশালী ব্যক্তিত্বদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ইন্সপেক্টর দেবী রায়ের নেতৃত্বে পুলিশ যখন তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে, তখন অনন্তের সূক্ষ্ম পরিকল্পনা এবং সামরিক দক্ষতা তাকে এগিয়ে রাখে ও পুলিশের কাজ কঠিন হয়ে পড়ে।
প্রদীপ কুমার নন্দীর প্রযোজনায়, নন্দী মুভিজের ব্যানারে 'কেউ বলে বিপ্লবী, কেউ বলে ডাকাত'। জিৎ বলেন, "আমি উত্তেজিত কারণ আমি আগে কখনও কোনও বায়োপিক করিনি।"
পথিকৃৎ বসু জানান, "দুটি কারণে 'কেউ বলে বিপ্লবী, কেউ বলে ডাকাত' ছবিটি আমি করতে চাই। প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল—একজন ভুলে যাওয়া নায়কের গল্প বলা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা অনেক নাম মনে রাখি, কিন্তু অনেক সাহসী মানুষ রয়ে গিয়েছেন অজানা। অনন্ত সিং এমনই একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী। আজকের দিনে খুব কম মানুষই জানেন তাঁর সাহস, আদর্শ আর আত্মত্যাগের কথা। এই ছবির মাধ্যমে আমি চাই তাঁর গল্প সকলের সামনে তুলে ধরতে—ন্যায়ের জন্য তাঁর লড়াই, একটি উন্নত সমাজের স্বপ্ন, আর কীভাবে বিপ্লবীদের অনেক সময় অপরাধী বলে ভুল বোঝা হয়। অনন্ত সিংয়ের গল্প আজও প্রাসঙ্গিক। আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যেখানে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ভয়াবহ রকমের বড়। কেউ কেউ ভোগ করছে বিপুল সম্পদ, আর কেউ কেউ বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে। অতীতের এই গল্প বলার মাধ্যমে আমরা আজকের সামাজিক সমস্যাগুলোর প্রতিফলন ঘটাতে চাই, এবং দেখাতে চাই কীভাবে বৈষম্য থেকে জন্ম নিতে পারে হতাশা ও বিদ্রোহ।"
পরিচালক আরও বলেন, "দ্বিতীয় কারণটি একান্তই ব্যক্তিগত। আমি বহু বছর ধরে জিৎদার ভক্ত। আমার চলচ্চিত্র জীবনের প্রথম বড় সুযোগ এসেছিল একজন সহকারী পরিচালক হিসেবে, একটি ছবিতে যেখানে জিৎদা মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আজ, নিজের পরিচালিত ছবিতে জিৎদা যখন প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন, তখন মনে হচ্ছে জীবন যেন এক পূর্ণবৃত্ত সম্পন্ন করেছে। অনন্ত সিংয়ের চরিত্রটি গভীর ও দৃঢ়, আর আমি সত্যিই বিশ্বাস করি যে বাংলা সিনেমায় জিৎদাই একমাত্র অভিনেতা যিনি এই চরিত্রটি এতটা শক্তিশালীভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। এই যাত্রা সম্ভব হত না আমার প্রযোজক ও সহ-নির্মাতা, প্রদীপ কুমার নন্দীর সমর্থন ছাড়া। তিনি এই গল্পের গুরুত্ব বুঝেছেন এবং কেন আজ এটি বলা দরকার, তা উপলব্ধি করেছেন। তাঁর আস্থা ও সহায়তা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার দুই লেখক, অরিত্র ও অর্পণের সহায়তায় আমরা এমন একটি ছবি নির্মাণের চেষ্টা করছি, যা শুধু একজন বিস্মৃত বীরকে সম্মান জানায় না, বরং জিৎদার তারকাখ্যাতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁকে তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম শক্তিশালী চরিত্র উপহার দেয়।"