বাংলা, হিন্দির পাশাপাশি দক্ষিণী চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতেও বর্তমানে দাপিয়ে কাজ করছেন অভিনেতা যিশু সেনগুপ্ত (Jisshu Sengupta)। তবে ফের দুই সন্তানের বাবা হয়ে সম্প্রতি শিরোনামে তিনি। অবাক হলেন? যদিও তা রিয়েল নয়, রীল লাইফে। অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের ছবি 'বাবা বেবি ও' (Baba Baby O) মুক্তি পাবে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি। 'রম -কম' এই ছবিতে 'মেঘ রোদ্দুর'-র ভূমিকায় অভিনয় করছেন যিশু, যিনি একজন সিঙ্গেল ফাদার এবং সারোগেসির (Surrogacy) মাধ্যমে যমজ ছেলের বাবা হয়েছেন।
দুই সন্তানকে সামলানোর মাঝেই কীভাবে বৃষ্টি অর্থাৎ শোলাঙ্কি রায়ের (Solanki Roy) প্রেমে পড়ে মেঘ, এভাবেই ছবির গল্প এগোয়। অত্যন্ত ব্যস্ততার মধ্যেই আজতক বাংলার সঙ্গে মনখোলা আড্ডা দিলেন পর্দার মেঘ রোদ্দুর ওরফে যিশু।
আজতক বাংলা: কোভিড পরবর্তী সময় বড় পর্দায় প্রথম ছবি মুক্তি। টেনশন হচ্ছে?
যিশু: না, আমার ছবি মুক্তির সময় টেনশন হয় না, বরং শ্যুটিংয়ের সময় হয়। তবে আমি খুব উৎসাহিত যে, অনেক দিনে পরে আমার একটা ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাচ্ছে। সত্যিই আমি খুব খুশি।
আজতক বাংলা: এই ছবির গান 'বাবা হওয়া এত সোজা নয়' শ্রোতারা বেশ পছন্দ করছেন। সত্যি কি বাবা হওয়া এত সোজা নয়?
যিশু: একেবারেই সোজা না। এটা একটা পদ্ধতি। বাবা -মা হওয়াটা কাউকে দেখে শেখা যায় না। একটা নতুন দায়িত্ব আসে, যেটা সহজ নয় তবে খুব মজার। অনেকগুলো আবেগ জড়িয়ে থাকে এর সঙ্গে।
আজতক বাংলা: আপনার দুই সন্তান সারা -জারা, ছবির ট্রেলার, গান দেখে কোনও প্রতিক্রিয়া দিয়েছে?
যিশু: জারা খুবই ছোট। ও উৎসাহিত যে বাবার ছবি আসছে। (হেসে) সারা বলেছে 'বাবা তোমায় দেখতে খুব সুন্দর লাগছে'। ও অনেকটা বোঝে। সব মেয়েরাই বোধ হয় নিজের বাবাকে সবচেয়ে হ্যান্ডসাম মনে করে। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, এটা আমার জীবনেও একটা অন্য জায়গা একেবারে। এই প্রশংসার সঙ্গে অন্য কোনও প্রশংসার তুলনা হয় না।
আজতক বাংলা: বাবার চরিত্রে আপনাকে বারবার দেখা যাচ্ছে। যিশু সেনগুপ্তর কি বয়স হয়ে যাচ্ছে? নাকি অভিনয়ের জন্য নিজেকে এভাবে ভাঙতে ভাল লাগে?
যিশু: বয়স তো আমার হয়েছেই (হেসে)। তবে বাবার চরিত্রে আমি অনেক অভিনয় করেছি। আমি একজন অভিনেতা, চরিত্রটা যদি পছন্দ হয়, তাহলে আমার করতে কোনও অসুবিধা নেই। আমার কাছে এখন যদি একটা ৩২-৩৩ বছর বয়সী চরিত্রও আসে, মনে হয় সেটাও ভাল ভাবে করতে পারব। 'শকুন্তলা দেবী' -তেই তো আমি ৩৫ বছর বয়সী থেকে প্রায় ৬০ বছরের চরিত্রে অভিনয় করেছি।
আজতক বাংলা: ছোট পর্দা, বড় পর্দা, ওটিটি! বিভিন্ন মাধ্যমে তিনটি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন একই সঙ্গে... সামলান কীভাবে?
যিশু: শুধু বাংলায় পরপর ৬ টা ছবি করলে যেরকম হত, এক্ষেত্রেও বিষয়টা প্রায় একই রকম। তবে আমার গোটা টিম ডেট বা অন্যান্য দিকগুলো দেখভাল করে। আমি কনটেন্ট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর, ওরা দেখে আমি কবে, কীভাবে শ্যুটটা করব।
আজতক বাংলা: বিশেষ কোনও দিক মাথায় রেখে চরিত্রগুলো নির্বাচন করছেন?
যিশু: না। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে ছবিটার গল্প এবং চরিত্রের উপর। আমার শুধু একটা দৃশ্যে অভিনয় করতেও আপত্তি নেই। কিন্তু ছবিতে সেই চরিত্রটা গুরুত্বপূর্ণ হতে হবে। চরিত্রটা বাদ দিয়ে দিলে যেন মনে হয়, ছবিটা কোথাও অসম্পূর্ণ থেকে গেল, এরকমই চরিত্র বেছে নিচ্ছি। সম্প্রতি 'শ্যাম সিংহ রায়' নামে যে তেলেগু ছবিটা করলাম, সেটায় আমি ৩-৪ টে দৃশ্যটে আছি। কিন্তু চরিত্রটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এমনকী বাংলাতেও 'রাজকাহিনী', 'জুলফিকর'- এ অনেক ছোট ছোট চরিত্রে কাজ করেছি। ছবির মূল হিরো বা ভিলেন না হলেও, যেন গুরুত্বপূর্ণ হয় চরিত্রটা, সেটাই শুধু মাথায় রাখি।
আজতক বাংলা: টলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাতারা অনেকে অভিযোগ করছেন যিশু সেনগুপ্তের ডেট পাওয়া যাচ্ছে না!
যিশু: যে পরিচালকরা আমায় নিতে চান না, তাঁরা এ সব বলছেন! এই তো আমি 'বাবা বেবি ও' করলাম। আরও দুটো বাংলা ছবি করার কথা চলছে। আমার ডেট আছে। আমার যদি চরিত্র আর গল্প ভাল লাগে, আমি নিশ্চই সে কাজটা করব।
আজতক বাংলা: এত ব্যস্ততার মধ্যে নিজের পরিবার -সন্তানদের সময় কীভাবে দেন?
যিশু: প্রতি মাসে অনন্ত ৭-১০ দিন আমি কলকাতায় থাকার চেষ্টা করি। আবার এক -দেড় মাস বাড়ি যেতে পারিনি এমনও হয়েছে। ছোটটা এখনও ছোট। ও মাঝে মাঝে আবদার করে 'তুমি কবে ফিরবে' এ সব বলে। কিন্তু বড়টা বোঝে, জানে যে, বাবা কী কাজ করে। ওকে খুব একটা বোঝাতে হয় না।
আজতক বাংলা: মেঘ- বৃষ্টির অনস্ক্রিন রসায়ন দারুণ। শোলাঙ্কির সঙ্গে আপনার বন্ডিং কেমন? আপনি নাকি দারুণ মজা করেছেন সেটে?
যিশু: আমি সব ছবিতেই খুব মজা করে কাজ করতে ভালোবাসি। খুব সিরিয়াস ছবি হলেও অ্যাকশন -কাটের সময় চরিত্রের জন্য যেটুকু দরকার হয়, সেটা ছাড়া সব সময় মজা করি। 'বাবা বেবি ও' ছবির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আর উইন্ডোজের সঙ্গে কাজ করার একটা সুবিধা হল, সবাই একেবারে পরিবারের মতো।
আজতক বাংলা: কোভিড গাইডলাইন কিছুটা শিথিল হলেও, পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক হয়নি। দর্শকদের কিছু বলবেন?
যিশু: আমরা ছবি বানাই সিনেমা হলে মুক্তির জন্য। সকলের কাছে আমার অনুরোধ, কোভিডবিধি মেনেই সিনেমা হলে এসে বাংলা ছবি দেখুন। এই সমর্থনটা ইন্ডাস্ট্রির এখন প্রয়োজন। এমনিতেই টলিউড ইন্ডাস্ট্রি ছোট হয়ে এসেছে অনেকটা। দর্শকেরা সমর্থন না করলে, আরও ছোট হয়ে যাবে।
আজতক বাংলা: ৪ ফেব্রুয়ারি 'বাবা বেবি ও'-এর সঙ্গে আরও একটি বড় বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে। দর্শক ভাগ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে?
যিশু: না, দুটো সম্পূর্ণ আলাদা ছবি। আমি যেটুকু জেনেছি, ওই ছবিটি মূলত বাচ্চাদের। আমাদের ছবিটা কিন্তু পারিবারিক। 'বাবা বেবি ও' -তে সারোগেসির মতো একটা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। অনেকে নামটা জানলেও, এখনও ভুল ধারণা আছে সারোগেসি নিয়ে। এছাড়া যেমন রোম্যান্স আছে, সেরকম পিতৃত্ব, বন্ধুত্বর মতো বিষয়গুলিও আছে ছবিতে।
আজতক বাংলা: সারোগেসি নিয়ে দর্শকদের কতটা ভুল ভাঙবে ছবিটা দেখে?
যিশু: আমার মনে হয় ছবির চিত্রনাট্য যেভাবে লেখা হয়েছে, সেটাটে খুব পরিষ্কার এবং প্র্যাকটিক্যাল ভাবে বিষয়টা বোঝানো আছে যে, সারোগেসি বিষয়টা আসলে কী। তবে এটা শুধুমাত্র শিক্ষামূলক না, খুব মজাদার একটা ছবি। প্রচুর আবেগ রয়েছে, রোম্যান্স রয়েছে। সব মিলিয়ে বলতে পারি একটা 'ফুল অন এন্টারটেইনমেন্ট ফ্যামিলি ফিল্ম'।