নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে হুগলি জেলার অন্ধকার জগতের একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিল গ্যাংস্টার হুব্বা শ্যামলের হাতে। তাকে বলা হতো হুগলির ‘দাউদ ইব্রাহিম’। খুন, অপহরণ, মাদক চোরাচালানের ৩০টি মামলা ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গের এই কুখ্যাত গ্যাংস্টার হুব্বা শ্যামলের জীবন অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে ছবি ‘হুব্বা’। ছবিতে হুব্বা শ্যামলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। সদ্য শেষ হয়েছে এই ছবির শুটিং।
ছবিটি নির্মাণ করছেন পশ্চিমবঙ্গের পরিচালক ব্রাত্য বসু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি কিছু ছবি পোস্ট করে এই সংবাদ দেন। তিনি লিখেছেন, ‘নতুন ক্রাইম থ্রিলার গ্যাংস্টার ছবি “হুব্বা”র শেষ পর্বের বর্ণময় এবং চ্যালেঞ্জিং শুটিং শেষ হলো। ছবিতে নাম ভূমিকায় আছেন মোশাররফ করিম। সঙ্গে আছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। তা ছাড়া নতুন একঝাঁক থিয়েটারের ডিসিপ্লিনড সম্ভাবনাময় এবং পোড় খাওয়া উদ্দীপক অভিনেতা অভিনেত্রীরা।’
২০২১ সালে ‘ডিকশনারি’ মুক্তির পর বাংলাদেশের বিখ্যাত অভিনেতা মোশাররফ করিমকে নিয়ে আরও একটি ছবির ঘোষণা করেছিলেন বিখ্যাত নাট্যকার তথা অভিনেতা তথা রাজ্যের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। ‘ডিকশনারি’ যেখানে ছিল বুদ্ধদেব গুহর দুই ছোট গল্প অবলম্বনে তৈরি, সেখানে দ্বিতীয় ছবিটি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা নির্ভর। নির্মাতারা জানিয়েছিলেন, এই ছবি বাংলার একসময়ের কুখ্যাত মাফিয়া হুব্বা (Hubba) শ্যামলকে নিয়ে।
দু’বছর পর রবিবার সকালে প্রকাশ্যে এলো সেই সিনেমার ফার্স্ট লুক। সেখানে দেখা গেল, গলায় গাঁদা ফুলের মালা জড়িয়ে এবং আরও সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ডনরূপী মোশাররফ। ছবির নাম রাখা হয়েছে ‘হুব্বা’। ছবিটি কমেডি ধাঁচের থ্রিলার। যে ধরণের অভিনয়ে মোশারফ করিমকে টেক্কা দেওয়া খুবই শক্ত। ঠিক সেরকমই একটি চরিত্রে দেখা যাবে মোশারফকে।
ছবির গল্প আবর্তিত হয়েছে হুগলির একসময়ের গ্যাংস্টার শ্যামল দাস, ওরফে হুব্বা শ্যামলকে কেন্দ্র করেই। তার উত্থান, তার গুন্ডারাজ এবং সবশেষে তার পতন- সবকিছুই তুলে ধরা হবে এই ছবিতে। এমনটাই জানিয়েছেন পরিচালক ব্রাত্য বসু এবং প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান।
জানা যায়, আটের দশকে অপরাধ জগতে ধীরে ধীরে উত্থান হয়েছিল শ্যামলের। নয়ের দশক থেকে ক্রমশ তার আধিপত্য বাড়তে থাকে কলকাতার কাছে এই জনপদে। হুগলিতে একসময় গঙ্গার ধার বরাবর ও অন্যদিকে এক্সপ্রেসওয়ের দিকে একাধিক কারখানা ছিল। সেই কারখানাগুলির শ্রমিকদের থেকেই হপ্তা তুলে শ্যামলের অপরাধ জগতে হাতেখড়ি। এরপর ধীরে ধীরে এলাকায় তোলাবাজি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানির মতো ঘটনা ঘটতে শুরু করে তার হাত ধরে।
শোনা যায় তৎকালীন শাসকদলের ঘনিষ্ঠও ছিল হুব্বা শ্যামল। দলের হয়ে বহু কাজকর্ম করার সুবাদে একাধিক নেতা-মন্ত্রীদের কাছের লোক হয়ে উঠেছিল সে। তবে ২০০৫ সালে একটি খুনের ঘটনায় তাকে মুখ্যমন্ত্রীর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নির্দেশে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও কয়েকমাসের মধ্যেই সে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। কিন্তু সেই জেলবন্দি থাকা অবস্থাতেই হাতছাড়া হয়ে যায় তার রাজ্যপাট।
এরপর একসময় যারা ছিল তার কাছের লোক, তাদের হাতেই খুন হতে হয় শ্যামলকে। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকার পতনের কিছুদিন পরেই বৈদ্যবাটি খালে হাওড়া-বর্ধমান মেইন শাখার ন’নম্বর রেলগেটের কাছে পাওয়া যায় তার লাশ। গলা থেকে কোমর অবধি কোপানো ছিল দেহ। এবার সেই গল্পই বড়পর্দায় তুলে ধরবেন ব্রাত্য। ফার্স্টলুক রবিবার প্রকাশ্যে এলেও ছবি মুক্তির দিনক্ষণ এখনও জানানো হয়নি।