শিরোনামে থাকেন নুসরত জাহান। ব্যক্তিগত জীবন থেকে রাজনীতি, বিগত কয়েক বছরে বারবারই চর্চায় এসেছেন তিনি। নেটাগরিক থেকে সাধারণ মানুষ, অনেকের কটাক্ষের শিকার হয়েছেন বহুবার। দুর্নীতিতেও নাম জড়ায় তাঁর। এরপর ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে সরে আসেন বসিরহাটের প্রাক্তন সাংসদ। ২০২৬-এ এরাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই, পালে লেগেছে নির্বাচনী হাওয়া। রাজনৈতিক দলগুলি বিভিন্ন কর্মসূচী শুরু করে দিয়েছে। রাজনীতির ময়দানে কি ফিরবেন নুসরত? এবার খুললেন নায়িকা।
ভোটে লড়ার ইচ্ছে প্রকাশ
২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল- কংগ্রেসের হয়ে টিকিট পাননি নুসরত। তবে সুযোগ পেলে ফের ভোটে লড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন তিনি। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে তিনি এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, "তৃণমূল ডাকবে, না বিজেপি ডাকবে আমি জানি না। ডাক এলে কী করব সেটাও জানি না। আমার রাজনীতিতে আসার মূল কারণ ছিল দিদি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত ভাবে খুবই শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি। উনি আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সবাইকে স্নেহ করেন। আমাদের আগলে রাখেন। দিদিকে কখনও 'না' বলতে পারব না। শেষ নির্বাচনের আগেও কথা হয়েছে দিদির সঙ্গে। ওঁর অজান্তে কিছু করিনি। সেটা আমায় সকলের সামনে বলতে হবে তার কোনও বাধ্যবাধকতাও নেই। কোনও সাক্ষাৎকারেও বলিনি।"
আগের নির্বাচনের টিকিট না পেয়ে এবং রাজনীতি থেকে সরে আসার চুপ ছিলেন নুসরত। বিশেষ কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁর কথায়, "কী করব? যে কথাই বলি, তার ব্যাখ্যা হয় অন্য ভাবে। মানুষ অন্যের সমস্যা দেখলে মজা পায়। এখন আমি অনেক বদলে গিয়েছি। নুসরত মানেই বিতর্ক- এ ভাবে দেখা হত আমায়। আমি তার চেয়ে একটু বেশি। যাঁরা বিতর্ক বা সমালোচনা করছেন, তাঁরা আমার সমস্যার কথা জানেন না। আর যা বলা হয় তার বেশির ভাগই অর্ধসত্য"
রাজনীতি থেকে কি নিজেই সরে এসেছিলেন নুসরত জাহান? নাকি বাধ্য হয়ে ছাড়তে হয়েছিল? অভিনেত্রীর উত্তর, "নিজের একশো ভাগ দিয়েছিলাম। সেই সময়, নির্বাচনের ঠিক ছ'মাস আগে অনেক বড় কাণ্ড হল। অনেক অভিযোগ করা হল। বলা হল, আমি মানুষকে ঠকিয়েছি! মানুষকে ঠকাতে যাব কেন? আশ্চর্য! পরিণত নুসরত জানে, সে দিন কেন ওই কথা বলা হয়েছিল। দেখুন, আমি এই রেষারেষির মধ্যে আর পড়তে চাইনি। গোটা পরিস্থিতি একা সামলেছি। যশ তখন মুম্বইয়ে। ঈশান ছোট। ঈশানকে দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আর নয়। কিছু দিন পরে ছেলে তো বড় স্কুলে যাবে। ওর নিজের জগৎ তৈরি হবে। চাই না,আমার জন্য ওর উপর কোনও প্রভাব পড়ুক।"
তিনি করেন, "২০১৭ সালে টাকা ফেরত দেওয়ার পর ২০২৩ সালে হঠাৎ আমার দিকে আঙুল তোলা হল কেন? সেন্ট্রাল এজেন্সির দফতরে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গিয়েছিলাম। আমার কাগজপত্র সব ঠিক ছিল। সকলের আমায় নিয়ে কেন এত উত্তেজনা বুঝতে পারি না। যাঁরা সরাসরি যুক্ত তাঁদের কোনও দিন ডাক আসে না। তবে এটা ঠিক এই পরিস্থিতি আমায় অনেক কিছু শিখিয়েছে।"
ট্রোলিংয়ের শিকার হন
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হন নায়িকা। সেই সময়ে ওয়েস্টার্ন পোষাক পরে পার্লামেন্টের সামনে ছবি তোলায় ট্রোলিংয়ের শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে ও মিমি চক্রবর্তীকে। ২০২৪ সালে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে ১৪৪ ধারাকে '১৭৪ ধারা' বলে ট্রোলড হয়েছিলেন অভিনেত্রী।
দুর্নীতিতে নাম জড়ায়
এছাড়াও মেসার্স সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে ওঠে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ। সেই সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন বলে মেনে নিয়েছেন নুসরত জাহান। তিনি দাবি করেন, ওই সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে সুদ সমেত ফেরত দিয়েছিলেন। নুসরতের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের হয় আদালতে। বেশ কয়েক জন প্রবীণ নাগরিক অভিযোগ করেন, যে সংস্থায় ডিরেক্টর ছিলেন তৃণমূল সাংসদ, তারা প্রায় ২৪ কোটি টাকার প্রতারণা করেছে। নুসরতের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, দুর্নীতির টাকাতেই পাম অ্যাভিনিউয়ের কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। এই তদন্তে সম্পূর্ণ সহায়তা করবেন বলে সেসময় জানিয়েছিলেন নুসরত।
নুসরতের 'আইটেম সং'
প্রসঙ্গত, এবার ফের 'আইটেম সং'-র সঙ্গে নাচতে দেখা গেল নুসরত জাহানকে। সদ্য প্রকাশ্যে এসেছে 'রক্তবীজ ২'-র গান 'অর্ডার ছাড়া বর্ডার ক্রস'। এর আগে 'যোদ্ধা' ছবিতে প্রথম 'আইটেম সং'-এ পা মিলিয়েছিলেন তিনি। দর্শক পছন্দ করেছিল সেই গান। এখন দেখার নতুন এই গানের মাধ্যমে দর্শক মনে কতটা জায়গা করে নিতে পারেন অভিনেত্রী।