বুধবার গোটা দেশে মুক্তি পেল শাহরুখ খান-দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত 'পাঠান'। এটা শুধুমাত্র কোনও সাধারণ বলিউড সিনেমা নয়, বরং এই সিনেমার মাধ্যমে চারবছর পর বড়পর্দায় কামব্যাক করতে চলেছেন শাহরুখ খান। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ভক্তদের কাছে এটা ভালো খবর ও উচ্ছাসিত হওযার দিন। তবে এই 'পাঠান' মুক্তি নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট বাংলার পরিচালকরা। তার কারণ এই সিনেমার ডিস্ট্রিবিউটার ও প্রযোজক সংস্থার ব্যবসায়িক নীতি অনুসারে, এ রাজ্যের সিঙ্গল স্ক্রিনে যদি পাঠান চালাতে হয় তবে গোটা দিনভর এই সিনেমাকেই শো দিতে হবে। অন্য কোনও বাংলা সিনেমা সেখানে চলবে না অথবা একটা শো তারা পেতে পারে। সিনেমার এই অনৈতিক সিদ্ধান্তে আগেই সরব হয়েছিলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গেপাধ্যায়। এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় সোচ্চার হলেন অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্য।
'পাঠান' সিনেমার রণনীতি নিয়ে সরব সাহেব ভট্টাচার্য
মঙ্গলবার রাতে অভিনেতা তাঁর ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করেন। যেখানে তিনি বলিউডের এই দাদাগিরির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সাহেব তাঁর ফেসবুক পোস্টের ভিডিওতে জানান যে মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবে তাঁর একটি ছবি 'আরও এক পৃথিবী'র প্রেস কনফারেন্স ছিল যেখানে এই সিনেমা নিয়ে কথা বলার সময় পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্য়ায় ঝড় তোলেন। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্য়ায়ের ছবি 'কাবেরী অন্তর্ধান' মুক্তি পেয়েছে এবং তা ভালো ব্যবসা করছে। গতকাল লেক মলে দুটি শো হাউজফুলও গিয়েছে বলে জানান অভিনেতা। এরপর সাহেব বলেন,'সমস্যাটা এখানে নয়, সমস্যাটা হল মুক্তি পেতে চলেছে একটা বড় বাণিজ্যিক ছবি, শাহরুখ খানের ছবি পাঠান। পাঠান মুক্তি পাচ্ছে তাতেও আমার কোনও সমস্যা নেই, এতবছর পর শাহরুখ খানের একটা বড় ছবি আসছে, সেটা নিয়ে আশা রয়েছে ভক্তদের, আপনারা দেখবেন আমিও দেখব। সেটা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এই সিনেমার প্রযোজক-ডিস্ট্রিবিউটাররা জানিয়েছেন যে তারা সেই সিনেমা হলেই পাঠান চালাবো যেখানে শুধুমাত্র পাঠান চলবে। অর্থাৎ গতকাল কৌশিকদার দুখানা শো হাউজফুল যাওয়া সত্ত্বেও কৌশিক দাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বুধবার তাঁর সিনেমার শুধু একটাই শো থাকবে তাও দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে এবং একশোটার কম সিট রয়েছে সেই সিনেমা হলে। কেন? তাদের যুক্তি অনুসারে যে সিনেমা হলে পাঠান চলবে সেখানে অন্য কোনও হিন্দি বা বাংলা সিনেমা চলবে না। এটা আমার কাছে একটা বীভৎস তীব্র প্রতিবাদের জায়গা তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন: Pathaan Release: শাহরুখের 'পাঠান'মুক্তি পাচ্ছে একদিন পরই, কিন্তু কেন খুশি নন কলকাতার পরিচালকরা
বাংলার মাটিতে বাংলা সিনেমাকে আটকানো হচ্ছে
এরপর অভিনেতা আরও জানিয়েছেন যে তাঁর 'পাঠান' সিনেমা নিয়ে কোনও আপত্তি নেই তবে ডিস্ট্রিবিউটার-প্রযোজক যারা বান্দ্রার অফিসে বসে এটা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন যে বাংলার মাটিতে নাকি বাংলা সিনেমা চলবে না। দেশের অন্য কোনও রাজ্যে এটা করতে পারবেন কিনা প্রশ্ন করেছেন অভিনেতা। তিনি জানিয়েছেন, তামিলনাড়ু, কেরল, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাবে এ ধরনের দাদাগিরি তারা করতে পারবেন না। একমাত্র এটা বাংলাতেই করা সম্ভব কারণ বাঙালিরা স্বভাবগতভাবে নম্র, ভদ্র জাতি। তবে অভিনেতা এও জানিয়েছেন যে এই দাদাগিরিটা বাংলার মাটিতে চলতে পারে না। অভিনেতা আরও জানান যে 'প্রজাপতি' সিনেমাও চলছে আর সেটাও ভালো ব্যবসা করছে। দর্শকরা নিজেরাই অভিযোগ করেন যে ভালো বাংলা ছবি হচ্ছে না। আর সেটা যখন হয়েছে তাদেরকে আটকে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা করবে কি করে। সাহেব ভট্টাচার্য জানান যে পাঠান সাত হাজার হলে মুক্তি পেয়েছে আর বাংলা সিনেমা ৩০ টা হলে। সেখান থেকে ২৫টা হলে পাঠান চালালে পাঁচটা হল যদি বাংলা সিনেমাকে দেয় তবে প্রযোজকরা কীভাবে ব্যবসা করবে বাংলা ছবির।
দায়ী প্রশাসন
সাহেব এও জানিয়েছেন যে প্রযোজকরা ঝুঁকি নিয়ে সিনেমা বানান তাঁরা যদি এই সিনেমাগুলি থেকে টাকা আনতে না পারে তবে পরের ছবি বানানোর জন্য টাকা কোথা থেকে নিয়ে আসবেন। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে কি ফিরে আসবে তাঁরা? অভিনেতা এর জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছে। তিনি জানিয়েছেন এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক ব্যর্থতা। অভিনেতা বলেন, 'আসলে আমরা এতবেশী লেট ব্যাক হয়ে গিয়েছি, এত বেশি রিল্যাক্স হয়ে গিয়েছি, যে আমরা সবকিছুই মেনে নিতে শিখেছি। আজ বম্বে থেকে একজন কলকাতায় এসে দাদাগিরি করে বলে গেল কোন্ননগরে কোন বাংলা ছবি চলবে কোনটা চলবে না হিন্দি ছবি চলবে সেটাও মেনে নিচ্ছি। আবার পলিটিক্যাল অত্যাচার তাও মেনে নিচ্ছি, টাকা চুরি তাও মেনে নিচ্ছি, চাকরী চুরি তাও মেনে নিচ্ছি, ধর্মের নামে লড়াই তাও মেনে নিচ্ছি, সব মেনে নিচ্ছি আমরা।' অভিনেতা এরপর এও অভিযোগ করেন যে প্রাইম টাইমে কোনও শো দেওয়া হয়নি বাংলা সিনেমাকে। সাহেব ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে তাঁর পাঠান বা শাহরুখকে নিয়ে কোনও আপত্তি নেই কিন্তু যেভাবে বাংলা সিনেমাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিনেতা তার বিরুদ্ধে।
'পাঠান' সিনেমা মুক্তি
প্রসঙ্গত, চার বছর পর এই 'পাঠান' সিনেমার মাধ্যমে বড়পর্দায় ফিরলেন শাহরুখ খান। স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে থাকবে এসআরকে ফ্যানদের। বুধবার গোটা দেশে মুক্তি পেয়েছে এই সিনেমা। এর সঙ্গেই কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও করা হচ্ছে তাই পুলিশ-প্রশাসন প্রস্তুত হয়ে রয়েছেন।