উত্তম কুমার পরবর্তী যুগে যখন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নায়কের ব্যাপক খরা চলছে, তখন একা হাতে হাল ধরেছিলেন। জাতীয় প্রেক্ষাপটে টলিউডের অন্যতম মুখ। এহেন প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়কেই কিনা বাংলা বলা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হল! টলিউডের 'বুম্বাদা' সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক ট্রোলিংয়ের মুখে! 'হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন...'
কী করেছেন প্রসেনজিত্? এত বিতর্ক, ট্রোলিং কেন?
সম্প্রতি মুম্বইয়ে ‘মালিক’ ছবির ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। পাশে তখন বাংলার ‘জামাই’ অভিনেতা রাজকুমার রাও, ছবির পরিচালক পুলকিত ও অন্যান্য সিনেমার কুশলীরা। সেখানেই এক বাঙালি সাংবাদিক প্রসেনজিৎ-এর উদ্দেশে দু'টি প্রশ্ন করেন, যা ঝরঝরে বাংলায়। সেই প্রশ্ন না ফুরোতেই প্রসেনজিৎ পাল্টা জানতে চান, 'Why do we need to talk in Bengali?' বাংলায় যার অর্থ, ‘বাংলায় কথা বলার দরকার কী?’ ঠিক এই জায়গা থেকেই বিতর্কের শুরু। বাংলার অভিনেতা কেন বাংলায় কথা বলতে বা শুনতে রাজি হলেন না? বেজায় আঁতে লেগেছে বাঙালির। এত বড় স্পর্ধা প্রসেনজিতের!
বাঙালি রে রে করেছে উঠেছে
সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলা-প্রেমী বাঙালিরা প্রসেনজিত্কে ট্রোলিংয়ে ব্যস্ত। কেউ কেউ আবার মাইকেল মধুসূদন দত্তের আদলে প্রসেনজিতের ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে পোস্ট করছে। মোদ্দা বিষয়, কেন প্রসেনজিত্ ওই বাঙালি সাংবাদিকের বাংলা প্রশ্নে বাংলায় উত্তর দিতে চাইবেন না? রীতিমতো চিঠি লিখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলা পক্ষের সভাপতি গর্গ চট্টোপাধ্যায়।
এখন প্রশ্ন হল, প্রসেনজিত্ কি বিরাট দোষ করেছেন? বাংলা ভাষাকে তিনি অসম্মান করেছেন?
প্রথমেই মনে রাখা দরকার, ওই ইভেন্টটি ছিল এক মাল্টি-লিঙ্গুয়াল প্রেস কনফারেন্স, যেখানে কলকাতার বাইরের সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। মুম্বইয়ে একটি হিন্দি ছবির ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠান। এমন পরিস্থিতিতে কোনও তারকা যদি ইংরেজিকে প্রধান মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন, সেটি যদি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে কি তা বাংলা ভাষাকে অপমান করা হল? বাংলা ছবির কালজয়ী পরিচালকদেরও দেখা গিয়েছে, মুম্বইয়ে বা আন্তর্জাতিক কোনও ইভেন্টে ইংরেজিতেই কথা বলছেন। সত্যজিত্ রায়, মৃণাল সেনকেও দেখা গিয়েছে, উচ্চমানের ইংরেজিতে কথা বলতে। হালফিলে সৃজিত মুখোপাধ্যায়দেরও একইভাবে দেখা যায়।
'আমাদের বাংলায় কথা বলার কেন প্রয়োজন পড়ল?'
আজ যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়কে ট্রোল করছেন, তাঁরা নিজেরাই কি ফোনে বাংলা লিখে মেসেজ পাঠান? নিজেদের ছেলেমেয়েকে বাংলা স্কুলে ভর্তি করেন তো? নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে বাংলা সাবটাইটেল রাখেন? 'প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা!'
যে ব্যক্তি দশকের পর দশক ধরে বাংলা ছবির মুখ হয়ে রইলেন, টলিউডেই থেকে গেলেন, সেই ব্যক্তির একটি ছোট কথাকে ঘিরে এক লহমায় 'বাঙালি বিদ্বেষী' তকমা দেওয়া যায় কি? আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।