টলি থেকে টেলি পাড়ার অত্যন্ত পরিচিত মুখ রণজয় বিষ্ণু (Ranojoy Bishnu)। দীর্ঘ ৯ বছর পর, তিনি ফের ছোট পর্দায় ফিরেছেন 'গুড্ডি' (Guddi) ধারাবাহিকে আইপিএস অফিসার অনুজের চরিত্রে। ছোট থেকে বড় পর্দা, এমনকি ওটিটি-তেও সমান তালে কাজ করছেন অভিনেতা। হাতে রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি প্রোজেক্ট। কেরিয়ার থেকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে, আজতক বাংলার সঙ্গে আড্ডা দিলেন রণজয়।
আজতক বাংলা: ছোট পর্দা- বড় পর্দা, সব মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করা চাপ?
রণজয়: সেটা ঠিকই, খুব চাপ।
প্রশ্ন: দুটো মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করছেন। ডেট কীভাবে সামলাচ্ছেন?
রণজয়: সিনেমা এই মুহূর্তে আমি করছি না। শ্যুটিং হয়ে গেছে প্রায় ৪-৫ টা ছবির। সেপ্টেম্বরের পর থেকে আশা করি আবার বড় পর্দায় কাজ করতে পারব। সেরকম ভাবেই কথা বলা আছে। যদিও আমার কোনও চুক্তি নেই চ্যানেলের সঙ্গে। তা সত্ত্বেও, কোনও ধারাবাহিক শুরু হলে, মুখ্য চরিত্রের উপর অনেকটা চাপ থাকে।
প্রশ্ন: 'জালবন্দী'-তে কিছুটা ধূসর চরিত্রে অভিনয় করেছেন... বেশিরভাগ ইতিবাচক চরিত্রে কাজ করে, এরকম চরিত্রের জন্য আলাদা মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন?
রণজয়: সত্যি কথা বলতে আমরা যে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি, সেখানে অর্থনীতি এবং সময় দুটোই কম। যে বাজেটে বলিউডে একটা গান তৈরি হয়, সেই বাজেটে এখানে একটা সিনেমা তৈরি হয়ে যায়। তাই প্রস্তুতির সুযোগও কম থাকে। 'জালবন্দী'-তে আমার চরিত্রটার অনেকগুলো শেডস রয়েছে। এই কাজটা করে আমি দারুণ মজা পেয়েছি। তবে আরেকটু বেশি সময় পেলে, হয়তো আরও চরিত্রটা নিয়ে বেশি করে ভাবনা চিন্তা করে কাজ করা সম্ভব হত। এমনকি 'গুড্ডী'-র শ্যুটিংয়ের ফাঁকেই আমায় 'জালবন্দী'-র ডাবিং করতে হয়, তখন বুঝতে পারি এটা কতটা কঠিন।
প্রশ্ন: একটা কাজের রেশ তো থেকেই যায় বেশ কিছুদিন...
রণজয়: অবশ্যই। আমার মনে হয় এরকম কোনও কাজের ক্ষেত্রে অনন্ত ৭ দিন বিরতির খুব প্রয়োজন। কারণ আমি যে অভিনয়ে বিশ্বাস করি, সেটা খুবই মনস্তাত্ত্বিকভাবে চালিত। কিন্তু এখন আমাদের এভাবেই কাজ করতে হয়, কিছু করার নেই।
প্রশ্ন: আপনি বলিউডেও ডেবিউ করছেন... কবে মুক্তি পাবে ছবিটা?
রণজয়: এই ছবিটার শ্যুটিং হয়েছিল ২০১৯ সালে। এখনও বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে ঘুরছে। আমি এখনই বলতে পারব না, ঠিক কবে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে। তবে শুনেছি বিদেশের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইতিমধ্যে রিলিজ করেছে। এদেশে এখনও আসেনি।
প্রশ্ন: আপনার চরিত্রটা কেমন সেই ছবিতে?
রণজয়: এই চরিত্রটার জন্য আমায় খুব পরিশ্রম করতে হয়েছে। ছবিটার নাম 'বিধান'। যেটি সমকামীদের নিয়ে। সমকামী না হয়ে, এরকম একজনের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য আমায় বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এছাড়া আমার বিভিন্ন বয়স দেখানো হয়েছে। একটা বয়স ৪৫ এবং একটা ৫৫। সমকামীদের মধ্যেও নারীসুলভ ভাব যাদের থাকে, সেরকম একটা চরিত্রে অভিনয় করেছি, সেটা আরও কঠিন ছিল।
প্রশ্ন: এই ছবিতে কাজ করার পর রণজয়ের কতটা পরিবর্তন হল?
রণজয়: ছবিটার জন্য জিমে না গিয়ে ভুড়ি বাড়াতে হয়েছিল আমায়। প্রচুর ওজন বাড়িয়েছিলাম। তবে এর থেকেও বড় কথা হল, আমার দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বদলে গেছে। সমকামীদের প্রতিদিন কতটা সামাজিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, সেটা তারাই শুধু অনুভব করেন বোধ হয়। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার বহু বন্ধু-বান্ধব আছেন যারা সমকামী। ছবিটা করার সময় আমি তাঁদের যোগাযোগ করে জিজ্ঞেস করতাম, তারা কী দেখে- ভাবে প্রথমবার কোনও ছেলের সঙ্গে দেখা হলে।
প্রশ্ন: সমকামী চরিত্রে বহু অভিনেতাই অভিনয় করেছেন এর আগে। কারও থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন?
রণজয়: যে সমকামী ছবিগুলি আমি দেখেছি, তার অধিকাংশই খুব খারাপ। তার মধ্যে আমার এখন অবধি সেরা লেগেছে 'আলিগড়'। এই ছবিতে মনোজ বাজপেয়ী এত ভাল ও সূক্ষ্ম ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিটা অনুভূতি, সেরকম খুব কম ভারতীয় ছবিতে হয়েছে। যদিও এটা খুবই দুঃখজনক। তবে আমি বিদেশী কিছু ছবি দেখেছি। তার মধ্যে মনোজ বাজপেয়ী আমার কাছে অনুপ্রেরণা। যদিও দুটো চরিত্রের কোনও মিল নেই।
প্রশ্ন: আপনি তো দক্ষিণী ছবিতেও কাজ করছেন...
রণজয়: হ্যাঁ দক্ষিণ ভারতের একটা ছবিতে আমি কাজ করেছি। এটা একটা ভূতের ছবি। কন্নড়, তামিল ভাষায় ছবিটা তৈরি হচ্ছে, নাম '১২বি'। শুনছি বাংলায় ডাবিং করেও মুক্তি পাবে, যেহেতু আমি আছি। আশা করি এবছরই মুক্তি পাবে।
প্রশ্ন: তার মানে কন্নড়, তামিল ভাষা শিখতে হয়েছে কিছুটা?
রণজয়: কিছুটা না অনেকটাই (হেসে)। আমার চরিত্রটা এখানে একজন চিত্রগ্রাহকের যে, মুম্বই থেকে আসে। তাই আমার ৬০ শতাংশ সংলাপ কন্নড়, তামিলে এবং বাকি ৪০ শতাংশ হিন্দিতে ছিল। কিন্তু ভাষাগুলি শিখতে- বুঝতে বেশ সময় লেগেছে।
প্রশ্ন: এরপর দক্ষিণী ছবিতে আরও কাজ করার ইচ্ছে আছে?
রণজয়: অবশ্যই ইচ্ছে আছে। আমি তামিল আরও ভাল করে শিখতে চাই। এমনকি কথাও হচ্ছে শিখব বলে। অন্যান্য ভাষার তাও মিল থাকে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের ভাষার প্রতিটা শব্দও যেন আলাদা। তাই ভাল করে শিখতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি এবার প্রযোজকের জুতোয় পা গলাবেন বলে শোনা যাচ্ছে। সত্যি?
রণজয়: ইচ্ছে আছে। কিন্তু সেটা নিয়ে আমি এখনই কিছু বলব না। দেখা যাক কী হয়...
প্রশ্ন: আর কী কী কাজ আছে পাইপলাইনে?
রণজয়: সামনেই মুক্তি পাবে 'সীমান্ত'। এছাড়া 'বনবিবি', 'ছাদ'-ও এবছরই মুক্তি পাবে মনে হয়। যার মধ্যে 'ছাদ' নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। কারণ এই ছবিটা ইতিমধ্যে বেশ প্রশংসা পেয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।
প্রশ্ন: এতগুলি মাধ্যম ও ভাষায় কাজ করছেন, রণজয় সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন কোনটায়?
রণজয়: আলাদা আলাদা মাধ্যমে কাজ করার আলাদা আনন্দ বা অনুভূতি রয়েছে এবং একেক রকম অভিজ্ঞতা। ছোট পর্দায় কাজ করলে অনেক বেশি মানুষের কাছে সহজে পৌঁছানো যায়, এটা আমি বুঝে গেছি। আর বড় পর্দা বা ওয়েব সিরিজের জন্য অন্য একটা প্রেম আছে। তবে আমি অভিনেতা। আমায় যে মাঠে গিয়ে ঘাস খেতে বলা হবে, সেখানেই আমি ঘাস খাবো (জোড়ে হেসে)।
প্রশ্ন: সম্প্রতি সোহিনীর সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে শিরোনামে এসেছেন বহুবার...
রণজয়: এই প্রসঙ্গে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।