অঙ্ক মিলিয়ে ফেলতে পারলে কেল্লাফতে! তবে সেটার জন্যে অনেককে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। ছোটবেলা থেকেই অঙ্ক নিয়ে ভীতি থাকে অনেকের মনে। জীবনের অঙ্ক মেলানোটা আরও কঠিন। এবার এটাই নিজের পরবর্তী ছবির বিষয় হিসাবে বেছে নিলেন সৌরভ পালোধী (Saurav Palodhi)। বাস্তব ও স্বপ্নপূরণের এই ছবির নাম 'অঙ্ক কি কঠিন' (Anko Ki Kothin)। ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে পার্নো মিত্র (Parno Mittrah), ঊষসী চক্রবর্তী (Ushasie Chakraborty), শঙ্কর দেবনাথের (Shankar Debnath) মতো অভিনেতাদের। এছাড়াও মুখ্য চরিত্রে থাকবে তিন ক্ষুদে শিল্পী। যাদের কাস্টিং এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
২০১৬ সালে শেষ ছবি পরিচালনা করেছিলেন সৌরভ। 'কলকাতায় কলম্বাস' (Kolkatay Columbus) মুক্তির পর মাঝে কেটে গেছে ৭ বছর। মাঝে 'চলচ্চিত্র সার্কাস', 'বিবাহ ডায়েরিজ'-র মতো ছবির চিত্রনাট্যও লিখেছেন। এই মুহূর্তে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে আরও একগুচ্ছ চিত্রনাট্য, ভাল প্রযোজক পেলেই যেগুলি নিয়ে কাজ এগোবেন। থিয়েটারের কাজ নিয়ে খুবই ব্যস্ত থাকেন তিনি। এছাড়াও গত বছর তাঁর পরিচালিত 'খোলাম কুচি ওয়েব সিরিজটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। অনুগামীরা অনেকেই অপেক্ষায় ছিলেন ফের কবে ছবি পরিচালনা করবেন তিনি। যারা অপেক্ষায় ছিলেন, তাদের জন্য এবার সুখবর।
কেমন হবে ছবির গল্প? আজতক বাংলাকে সৌরভ পালোধি জানান, "স্কুলের খাতার অঙ্ক থেকে জীবনের অঙ্ক সবটাই সমাধান করার একটা বিষয় থাকে। কিছুটা পিছিয়ে পড়া এলাকার গল্প। রাজারহাট চত্বরে যে বড় বড় অট্টালিকা, তার থেকে দশ মিনিট হাঁটা পথে এরকম অবৈতনিক বিদ্যালয়, যেখানে জল পৌঁছায় না, সেরকম একটা অঞ্চলের গল্প। যারা উঁচু উঁচু বিল্ডিং দেখতে পায়, কিন্তু ছুঁতে পারে না। ছোটবেলা থেকেই আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে, অঙ্ক বিষয়টা খুব কঠিন, ভয়ের, পারা যাবে না। আবার এই অঙ্কই একটু চেষ্টা করলে সবচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া যায়।"
পরিচালক আরও বলেন, "গল্পের এই তিন বাচ্চা যারা অবৈতনিক বিদ্যালয়ে পড়ে, কোভিড সময়কালের পর সেই বন্ধ হওয়া স্কুল আর খোলেনি। একটি ছেলে মনে করতো সে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, মেয়েটি মনে করত সে নার্স হবে এবং আরেকটি ছেলের স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। এগুলির পিছনেও কিছু পারিপার্শ্বিক কারণ রয়েছে। তাদের স্কুল বন্ধ হয়ে গেলেও, নিজেদের স্বপ্নগুলি জিইয়ে রাখার জন্য তারা একটা হাসাপাতাল করবে বলে ঠিক করে। একটি আন্ডার কন্সট্রাকশন বিল্ডিংয়ের মধ্যে নানা কুড়িয়ে পাওয়া- জোগাড় করা জিনিস দিয়ে সত্যিকারের চিকিৎসা হওয়ার ব্যবস্থা করতে শুরু করে তারা। এই স্বপ্নটা শেষমেশ তারা ছুঁতে পারে কিনা, সেটা একটা জার্নি। এররকম পারিপার্শ্বিক আরও কয়েকটা গল্প মিলিয়ে 'অঙ্ক কি কঠিন' তৈরি হবে।"
সৌরভ পালোধির এই গল্পে শাহরুখ- কাজলও আছে। তবে পর্দার থেকে বাস্তবের শাহরুখ- কাজলের জীবন কতটা আলাদা, তা ফুটে উঠবে ছবির গল্পে। তিন বাচ্চার স্বপ্নপূরণে তারাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সৌরভ বললেন, "এটা একেবারে সোজাসাপ্টা একটা ছবি। বলা যায় স্বপ্নপূরণের গল্প। অর্থনৈতিক চাপে থাকলে যে, সত্যিই সব স্বপ্নপূরণ হয় না, কিন্তু কিছুটা এগানো যায়। ইচ্ছেটা যাতে মরে না যায়, একদম স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার একটা গল্প।"
'অঙ্ক কি কঠিন' এই শব্দবন্ধ শুনলেই মনে পড়ে 'চন্দ্রবিন্দু' বাংলা ব্যান্ডের জনপ্রিয় গানের কথা। সৌরভ কেন বেছে নিলেন এই নাম? এই প্রশ্ন শুনে হেসে পরিচালকের উত্তর, "আমারও মনে পড়েনি যে তা নয়। 'অঙ্ক কি কঠিন' শুনলে ওই গানটাই প্রথম মাথায় আসে। গানটা শুনেছি বলেই হয়তো ওটা মাথায় গেঁথে রয়েছে। যেমন 'বারান্দায়' শব্দটা শুনলেই এখন মনে হয় 'বারান্দায় রোদ্দুর', আবার 'শুধু তুমি এলে না' এটা শুনলেই ক্যাকটাসের গানটায় ফেরত চলে যাই আমরা। অবশ্যই চন্দবিন্দুর গানটা ব্যক্তিগতভাবে আমার মাথায় স্ট্রাইক করেছে। কিন্তু গানটার সঙ্গে ছবিটার কোনও সম্পর্ক নেই।"
প্রসঙ্গত, এই ছবির প্রযোজনা করবেন রানা সরকার। ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন সৌমিত দেব ও সৌরভ পালোধী। সঙ্গীত পরিচালনা করবেন দেবদীপ মুখোপাধ্যায়। ঊষসী চক্রবর্তীকে এই ছবিতে একেবারে ভিন্ন ভাবে দেখা যাবে। সব ঠিক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকে কলকাতায় শুরু হবে ছবির শ্যুটিং। ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাস নাগাদ মুক্তি পাবে 'অঙ্ক কি কঠিন'।