চলছে উৎসবের মরসুম। বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ দুর্গাপুজোয় গা ভাসিয়েছে আট থেকে আশি। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা, সকলে মেতে উঠেছে উৎসবের আনন্দে। পুজো মানেই খাওয়া- দাওয়া, আড্ডা, ঠাকুর দেখা, গান -বাজনা, প্রচুর সাজগোজ এবং ঢাকের আওয়াজ।
টেলি বা টলিপাড়ার সেলেবরা কীভাবে পুজোর দিনগুলি কাটাচ্ছেন, সেদিকে নজর থাকে সকলের। টলিপাড়ার জনপ্রিয় মুখ সৌমিতৃষা কুণ্ডু। সদ্য শেষ করেছেন তাঁর ডেবিউ ওয়েব সিরিজের শ্যুট। এবারের পুজো কীভাবে কাটাবেন সৌমিতৃষা? খোঁজ নিল বাংলা ডট আজতক ডট ইন।
প্রশ্ন: কেমন আছেন?
সৌমিতৃষা: খুব ভাল আছি।
প্রশ্ন: পুজো এসে গেল। এবছর কলকাতার পরিস্থিতি তো একটু ভিন্ন...
সৌমিতৃষা: সবাই তো ঠাকুর দেখছে, আমি যা দেখলাম। প্রচুর ভিড়। মহালয়ার দিনই শ্রীভূমিতে ভিড় হয়েছে... এমনকী রাস্তাঘাটেও ভিড়। আবার এদিকে মিছিলও চলছে।
প্রশ্ন: পুজোয় কী কী প্ল্যান আছে?
সৌমিতৃষা: সত্যি বলতে আমার পুজোয় আলাদা করে কিছু প্ল্যান থাকে না সেরকম। ওপেনিংয়ে যাবো, এছাড়া বাড়ির লোকজনের সঙ্গেই সাজুগুজু করে ভাল কোথাও খেতে যাবো। আর নয়তো বাড়িতেই থাকব, আমার কোথাও যাওয়ার নেই। বিশেষ কিছু যে প্ল্যান আছে, তা একদমই না।
প্রশ্ন: আপনি তো খাদ্যরসিক। পুজোর সময় স্পেশাল কী খেতে ভাল লাগে?
সৌমিতৃষা: সারাবছরই প্রচুর খাই। আমার জন্য প্রোডাকশনের বাজেট বেড়ে যায় (হেসে)।
প্রশ্ন: তাও স্পেশাল কোনও খাবার আছে, যা না খেলে পুজো মিস?
সৌমিতৃষা: পুজোর খাওয়া বলতে বাড়িতে মা নানা রকম রান্না করে। মাটন কষা, পোলাও, এছাড়া নিরামিষ লুচি, ছোলার ডালও হয়।
প্রশ্ন: আর স্ট্রিট ফুড?
সৌমিতৃষা: স্ট্রিট ফুড এখন বেশি খাওয়া হয় না। তবে ছোটবেলায় স্ট্রিট ফুড খুব ভাল লাগত। রাস্তার ধারের যে রোল, সেটা কোনও বড় দোকানের রোলকেও হার মানাবে। আর ফুচকা আমি মাঝে মধ্যেই অনলাইনে আনিয়েই খাই। তবে রাস্তার ধারের ফুচকার আলাদাই টেস্ট।
প্রশ্ন: কথায় বলে পুজো মানেই প্রেম। সৌমিতৃষাও কী মানে সেটা?
সৌমিতৃষা: ধুর! সারাক্ষণ মা পাশে দাঁড়িয়ে থাকলে আর কী করে প্রেম- ঝারি মারা হবে। আর আমার মা খুব বুঝতে পারে আমি কোনও দিকে তাকালে। টুকটাক ঝারি মেরেছি। তবে শেষমেশ নম্বরটা আর নেওয়া হয়নি।
প্রশ্ন: আক্ষেপটা কি রয়ে গেছে?
সৌমিতৃষা: না না এখন আর আপসোস নেই কোনও। মানুষ চেনার ক্ষমতা আমার এখনই হচ্ছে না, আর তখন তো আরও হতো না। তাই এখন মনে হয় এই গার্ড করাটা জরুরি ছিল।
প্রশ্ন: পুজোর সঙ্গে কোনও নস্ট্যালজিয়া জড়িয়ে রয়েছে?
সৌমিতৃষা: পুজোর নস্ট্যালজিয়া মানেই বাবা- মা কিংবা পরিবারের বাকিদের ঘিরেই রয়েছে। একসঙ্গে সবাই মিলে ঠাকুর দেখতে যাওয়া... যদিও ওত লাইন দিয়ে ঠাকুর দেখা আমার একদমই পছন্দ না। ওই ভিআইপি পাস থাকত, সেভাবে ঢুকতাম। কিন্তু বেশি হাঁটতে আমার কোনও দিনও ভাল লাগত না। আমি খালি কোলে উঠতে চাইতাম। (হেসে) খালি কোলে ওঠার বায়না করতাম। সবচেয়ে ভাল লাগত খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারটা।
প্রশ্ন: ছোটবেলার পুজোটা মিস করেন?
সৌমিতৃষা: না। আমি বর্তমানে বেঁচে থাকায় বিশ্বাসী। আগে বাবা- মা উপহার দিত। এই যে বড় হয়েছি, এখন ওঁরা কিছু দিলে, আমিও কিছু দিতে পারি এটাও তো ভাল লাগা।
প্রশ্ন: এবার স্পেশাল শপিং করলেন?
সৌমিতৃষা: আমি আজকাল এত শপিং করে ফেলছি যে, আমার বাড়ির লোক বলছে একটা আলাদা আলমারি কিনে দেবে। বাবা- মা বা বাড়ির অন্যান্যরা যা উপহার দেয় সেটা তো আছেই পুজোর জন্য। তবে এখন আর শুধু পুজোর জন্যে কেনা হয় না। আসলে সারা বছর কিনছি কিছু না কিছু। কোথায় নতুন কী এল, আমি দেখতেই থাকি। পছন্দ হলেই কিনে ফেলি।
প্রশ্ন: দুর্গাপুজো মানে তিনটি শব্দে সৌমিতৃষার কাছে কী?
সৌমিতৃষা: পজিটিভিটি, খাওয়াদাওয়া আর নানা অবসাদের মাঝে খুশির আমেজ পাওয়া।
প্রশ্ন: এবার একটু আপনার সিরিজের কথায় আসি... প্রথম সিরিজের শ্যুট করে কেমন লাগল?
সৌমিতৃষা: প্রতিটা কাজের শেষে যেমন মন খারাপ হয়, এটাতেও হল। একটু তো খারাপ লাগেই। এত ভাল একটা টিম, খুব হৈ হৈ করে আমরা কাজটা করেছি। আর আমি তো যে কোনও সেটেই কমেডি করতে থাকি। আর সবাই আমায় প্রচুর ভালোবাসা দিয়েছে। একেবারে যেন তুলোর মতো করে রেখেছিল আমায়। আমি যেহেতু খেতে ভালোবাসি, ফুডি, যা বলেছি সেটাই এনে দিয়েছে। কেউ কদবেল মাখা কিনে দিয়েছে, তো কেউ আইসক্রিম বা কুলের আচার। আমার সঙ্গে সবাই এমন ব্যবহার করেছে, আমি যেন বাড়ির বাচ্চা।
প্রশ্ন: কোথায়- কোথায় শ্যুটিং করলেন?
সৌমিতৃষা: উত্তর কলকাতা, বারুইপুর, চুঁচুড়া, আবার দেশপ্রিয় পার্কের দিকেও শ্যুটিং হয়েছে। অনেকগুলো লোকেশন ছিল আমাদের।
প্রশ্ন: 'কালরাত্রি'-র গল্প তো রহস্যেমোড়া। সৌমিতৃষার পছন্দের জঁনর কোনটা?
সৌমিতৃষা: থ্রিলার। আসলে থ্রিলার গল্পে কাজ করলে সুবিধা হয় যে, অভিনয় দক্ষতা দেখানোর অনেক জায়গা থাকে। এক্সপ্রেসনের অনেক কাজ করা যায়। নানা ভাবে নিজেকে তুলে ধরা যায়। এই ধরণের কাজ করলে, সব সময় ভাবনার মধ্যে থাকতে হয় যে কখন কোনটা করব। আর প্রথম ওয়েব সিরিজেই এত ভাল একটা গল্প পাওয়া বড় প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: এই সিরিজে কনে রূপে আপনার লুক বেশ চর্চায়। অনেক অনুরাগী জানতে চায়, বাস্তবে এভাবে কবে দেখা যাবে?
সৌমিতৃষা: আমি তাদের জিজ্ঞেস করতে চাই, ২২ বছর বয়সে কি কেউ বিয়ে করে এখন? এই বয়সে তারাও কি বিয়ে করবে? (হেসে) আমার বর্নভিটা খাওয়ার বয়স এখন।
প্রশ্ন: আপনার সোশ্যাল পোস্ট দেখে অনেকেই মনে করেন আপনি প্রেম করেন কিংবা মনের মানুষ আছে...
সৌমিতৃষা: আমি অনেক সময় প্রেগন্যান্সি সম্পর্কিত পোস্ট শেয়ার করি। তার মানে কি আমি প্রেগন্যান্ট? (হেসে) আমি তো ব্রেকআপের পোস্টও করি আবার সিঙ্গেল থাকারও। আবার নারীবাদী হওয়ার পোস্টও করি...।
প্রশ্ন: ওটিটি-তে ডেবিউ হয়ে গেল। এবার কী ওয়েব সিরিজে অনেক বেশি দেখা যাবে?
সৌমিতৃষা: আসলে অভিনেতাদের খিদে থাকে ভাল গল্পর। তাই ভাল গল্প পেলে, নিশ্চয় আবারও কাজ করব, আরও দশবার কাজ করব এই মাধ্যমে। এই সিরিজের দ্বিতীয় সিজন আসবে। এটুকু বলতে পারি, একটা সিজন দেখার পরে দর্শকরা অপেক্ষায় থাকবে পরেরটা কবে আসবে সেটার।