নতুন বছরের শুরুতেই ট্যুইট করে দারুণ একটি খবর দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পুণের সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড এবং হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনকে করোনার কার্যকরী টিকা হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া। আর দেশের প্রথম করোনা টিকা কোভ্যাক্সিনের প্রধান রূপকার হলেন ডঃ কৃষ্ণা এল্লা। যিনি হায়দরাবাদ শহরের ব্যস্ততা থেকে থেকে দূরে জিনোম ভ্যালিতে নিজের ল্যাবে অসাধ্য সাধন করেছেন। গর্বে উজ্জ্বল করে তুলেছেন প্রতিটি ভারতীয়র মুখ।
করোনার ভ্যাকসিন কোভ্যাক্সিনকে ভারত সরকার অনুমোদন দিতেই বিশ্ব জুড়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এই ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম। কোভ্যাক্সিন তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক। আর সংস্থার চেয়ারম্যান আর এমনডি হিসাবে এখন চর্চায় রয়েছেন ডঃ কৃষ্ণা এল্লা।
অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর সীমান্তবর্তী তিরুথানির মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেথিলেন ডঃ কৃষ্ণা এল্লা। প্রথমে পারিবারিক কৃষিকাজকেই তাঁর পেশা হিসাবে গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন কৃষ্ণা। তবে তাঁর বাবা চেয়েছিলেন ছেলে অন্য পেশা বেছে নিক। তাই বাবার ইচ্ছে অনুসারেই কৃষ্ণা এল্লা পড়াশোনার পরে একটি জার্মান রাসায়নিক এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার সাথে কাজ শুরু করেছিলেন।
ওই সংস্থাটিতে কাজ করার সময় ডঃ এলা আমেরিকাতে পড়াশুনার জন্য ফেলোশিপ অর্জন করেন। এর আগে ডাঃ কৃষ্ণা এল্লা ব্যাঙ্গালোরের কৃষি বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিকেলে স্নাতক হন। এরপরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস করতে যান। পরে দক্ষিণ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপ গ্রহণের আগে চার্লসটের উইসকনসিন-মেডিসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন ।
তারপরে ফিরেল এলেন নিজের দেশে
বিদেশে কাজ করার সময় তিনি কখনও নিজের কাজ উপভোগ করেননি। তাই ডঃ এলা ১৯৯৬ সালে স্ত্রী সুচিত্রার সঙ্গে ভারতে ফিরে আসেন এবং ১২.৫ কোটি টাকা ব্যয় করে ভারতে বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রতিষ্ঠা করেন।
বর্তমানে এই সংস্থাটির সম্পদ ৫০০ কোটি টাকারও বেশি এবং ইউনিসেফ, জিএভিআই এবং অন্যান্য বিতরণ চ্যানেলের মাধ্যমে দেড় শতাধিক উন্নয়নশীল দেশের দরিদ্রতম এমানুষকে ৪ বিলিয়নেরও বেশি ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহ করেছে।
ভারত বায়োটেক ইন্ডিয়া একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেখানে ১৪০ টিরও বেশি পেটেন্ট রয়েছে, ১৬ টিরও বেশি ভ্যাকসিন রয়েছে, ৪ টি বায়োমেডিকাল রয়েছে, ১১৬ টি দেশে রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু- ভারত বায়োটেকের টিকাকে অনুমোদন দিয়েছে আগে। রোটা ভাইরাসের বিরুদ্ধে বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা টিকা ভারত বায়োটেক বানিয়েছে। যা ডাইরিয়া সংক্রমণ ও মৃত্যুর আশঙ্কা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে।
ভারত বায়োটেক বিশ্বের প্রথম ক্লিনিক্যালি সফল এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত প্রি-কোয়ালিফাইড টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি)এনেছে, যা একটি ৬ মাসের বাচ্চাকেও দেওয়া যেতে পারে। জানা গিয়েছে কোভিড ছাড়াও ম্যালেরিয়া, জাপানিস এনসেফালাইটিস, রোটাভাইরাস ডাইরিয়া, ব়্যাবিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা সহ একাধিক রোগের ভ্যাকসিন তারা তৈরি করেছেন। এই ভ্যাকসিন নির্মাণের জন্য ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
ভারত বায়োটেক ২০১৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হিউম্যান চ্যালেঞ্জ স্টাডিতে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রমাণ করার ক্ষেত্রে প্রথম সংস্থার শিরোপা অর্জন করে।