
SSKM হাসপাতালে নাবালিকার যৌন হেনস্থার ঘটনায় আলিপুর আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ইতিমধ্যেই নির্যাতিতা নাবালিকা ও তাঁর মা গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। নাবালিকার মেডিকো লিগ্যাল পরীক্ষাও করিয়েছে পুলিশ। এবার সেই ঘটনায় নাবালিকার নমুনা সংগ্রহ করল ফরেন্সিক দল। পুরুষ শৌচাগারে যেখানে অপরাধ ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠছে সেই জায়গা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার এসএসকেএম হাসপাতালের ভিতরে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। শৌচাগারের ভিতর নাবালিকার রোগীকে যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে। জানা যায়, হাসপাতালেরই এক কর্মীর হাতে হেনস্থার শিকার হয় ওই নাবালিকা। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত অমিত মল্লিককে। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি নাবালিকাকে নিয়ে যায় পুরুষ শৌচাগারে। সেখানেই শ্লীলতাহানি করে। ঘটনায় অভিযোগ জানাতেই তাঁকে ধাপা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তদন্তে যা জানা যাচ্ছে-
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত অমিত মল্লিক এনআরএসের চুক্তিভিত্তিক কর্মী হলেও এসএসকেএম হাসপাতালে অবাধ যাতায়াত ছিল। নিজেকে রোগী এবং তাঁদের পরিবারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কখনও সাদা পোশাকে, কখনও আবার হাসপাতাল কর্মীদের পোশাক পরে ঘোরাফেরা করত অমিত। গত বুধবার লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল বছর পনেরোর নাবালিকা। তখন নিজেকে এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক বলে পরিচয় দিয়েছিল অভিযুক্ত। সে কারণে বিএনএস–এর ৩১৯ (২) ধারা অর্থাৎ ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা ছাড়াও, পকসো অ্যাক্টেও (৪ নম্বর ধারা) মামলা রুজু করেছে পুলিশ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নির্যাতিতার মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছে। ওই পরীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। পাশাপাশি, নির্যাতিতার অডিয়ো এবং ভিডিয়ো বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে।
সন্দেহজনক গতিবিধি
এসএসকেএমের মতো সরকারি হাসপাতালে রোগীর যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় বৃহস্পতিবার ধাপা এলাকা থেকে অমিত মল্লিককে গ্রেফতার করে ভবানীপুর থানার পুলিশ। জানা গিয়েছে, এনআরএস হাসপাতালের আগে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালেরও অস্থায়ী কর্মী ছিল অমিত। সে কারণে এসএসকেএম হাসপাতালেও সকলের সঙ্গে তার যোগাযোগ ভালো। ফলে কেউ তাঁকে আটকাতও না। লালবাজারের একটি সূত্রের দাবি, ঘটনার পরে কয়েক জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল অমিত। প্রয়োজনে তাঁদের ডেকে কথা বলতে পারে পুলিশ। ধৃতের মোবাইল থেকে কয়েকটি ভিডিয়ো উদ্ধার হয়েছে। ইতিমধ্যেই তার কল ডিটেলস ও ডেটা রেকর্ড খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। ডাক্তারের পোশাক সে কোথায় পেল তাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। জানা যাচ্ছে ঘটনার আগে ১৭ অক্টোবর শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল এবং এসএসকেএম হাসাপাতেল তাকে দেখা গিয়েছিল। আগে SSKM হাসপাতালেই গ্রুপ ডি স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে কাজ করত সে। কিন্তু তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কার প্রশ্রয়ে সে এসএসকেএম হাসপাতালে এসেছিল? তাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
এই ঘটনার পরই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। শনিবার বৈঠক ডাকে স্বাস্থ্য ভবন। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিষয়টি নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। পাশাপাশি এ ঘটনায় এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের থেকে রিপোর্টও তলব করেছে স্বাস্থ্য ভবন। কোথাও কোনও গাফিলতি রয়েছে কিনাও তাও বিশদে জানতে চাওয়া হয়েছে।