Chopra West Bengal Incident: ভিড়ের মাঝে যুগলকে লাঠির গোছা দিয়ে বেধড়ক মারধর। রবিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিও দেখে শিউরে উঠেছিলেন অনেকে। ঘটনার পর স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করে অভিযুক্ত তাজিমুল হক ওরফে 'জেসিবি'কে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিরোধীদের দাবি, এই জেসিবি চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমানের ঘনিষ্ঠ। যদিও তা অস্বীকার করেছেন হামিদুল। এই ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'দেখুন মহিলাটা তো কমপ্লেন করেনি। আপনারা বেশি বেশি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বাড়াচ্ছেন। মহিলাটা স্বামী ছাড়া অসামাজিক কাজ করছিল। অসামাজিক কাজে গ্রাম্য সালিশি বৈঠক বসেছিল। গ্রাম্য বৈঠকে যা হয় আমাদের অনুপাতে একটা বিচার-আচার করা হয়েছিল। তাতে কিছুটা ভুল হয়েছে। আমরাও অস্বীকার করছি না, ভুল হয়েছে কিছুটা, গ্রামবাসী মিলে করেছে। ওটা নিয়ে আমরা দেখছি, কী হয়। মেয়েটা তো কোনও কমপ্লেন করতে যায়নি। মেয়েটার স্বামী কোনওরকম কমপ্লেন করতে যায়নি, কোনও জবরদস্তি কিছু হয়নি। সমাজকে খারাপ করছিল, তাই গ্রাম সালিশি বসিয়ে করেছে। এটা যেটা করেছে, এটা একটু বেশি করে দিয়েছে। এটা নিয়ে আমরাও খুব দুঃখিত এটা নিয়ে। আমরাও যাতে আগামিদিনে এমন না হয়, তার চেষ্টা করব।'
তৃণমূল বিধায়কের এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। অভিযুক্ত জেসিবি-র কার্যকলাপকে ছোট করে দেখিয়ে উল্টে নির্যাতিতদেরই সমালোচনা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন বিরোধীরা।
চোপড়ার ঘটনা নিয়ে বিধায়ক হামিদুল রহমান আরও বলেন, 'এটা তো অন্যায় আমরা সবাই বলছি। আর অন্যায় তো মেয়েটাও করেছে। নিজের স্বামী, নিজের ছেলেমেয়ে বাদ দিয়ে ও দুশ্চরিত্রবান হয়েছে। এখন তো আমাদের মুসলিম রাষ্ট্রের একটা সামাজিক আচার-বিচার হয়ে থাকে। কিন্তু বিচারটা যেভাবে হওয়ার কথা ছিল, তা না হয়ে সেটা বেশি বেশি হয়ে গিয়েছে। এটা নিয়ে আমরাও ওখানকার গ্রামবাসীকে বকাবকি করছি। আইনি যা ব্যবস্থা হয়, সেটা করবে।'
এদিকে সোমবার চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমান বলেন, 'যা হয়েছে তা একদমই ঠিক হয়নি। আমি মেনে নিচ্ছি। ওই জায়গায় জাতপাত সংক্রান্ত সমস্যা হলে সালিশি সভা হয়। একে আমি বা আমার দল একদমই সমর্থন করি না। আমার নামে অপপ্রচার হচ্ছে যে, আমি নাকি বলেছি, 'মুসলিম রাষ্ট্রে এই ধরনের ঘটনা ঘটে'। আমি 'মুসলিম রাষ্ট্র' কথাটা মুখেই আনিনি। বিরোধীরা আমার নামে অপপ্রচার করছে। আমার মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে।'
সোমবার চোপড়ার ঘটনার নিন্দা করে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন 'এটা হওয়া উচিত হয়নি।' হামিদুলের এই মন্তব্যের বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, 'হামিদুল কী বলেছেন, তাই নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না। তবে এটা হওয়াটা উচিত হয়নি।'
উল্লেখ্য, চোপড়ার ঘটনায় প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা জানতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন গভর্নর সিভি আনন্দ বোস।
সোমবার এই ঘটনার নিন্দা করে এক্স হ্যান্ডেলে জেপি নাড্ডা লেখেন, 'পশ্চিমবঙ্গ থেকে একটি ভয়ঙ্কর ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। টিএমসি ক্যাডার এবং বিধায়করা এই ঘটনাকে সঠিক বলার চেষ্টা করছেন। সন্দেশখালি, উত্তর দিনাজপুর বা অন্য যে কোনও জায়গাই হোক, দিদির পশ্চিমবঙ্গ মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়।'
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, 'অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। সামাজিক ব্যাধি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। পুলিশকে ধন্যবাদ যে, ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছে। যে ছেলেটি হিরো সাজতে গিয়েছিল, তারও একই রকম শাস্তি হওয়া উচিত।'
ইসলামপুর জেলা পুলিশ সুপার জবি টমাস জানিয়েছেন, সোমবার অভিযুক্ত জেসিবি-কে ইসলামপুরের অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা আদালতে তোলা হবে। মহিলাকে মারধরের ঘটনায় পুলিশ যে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে, সেই সমস্ত ধারাই দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।